মতামত

দ্বিতীয়বার রক্ত পরীক্ষার পর...

বিষয়টা অভিনব; তবে অযৌক্তিক নয়। কিন্তু যতই যুক্তি থাকুক, কোহিনূরের প্রস্তাব কিছুতেই বরদাশত করতে পারছে না আলীনূর। আড়াই বছর প্রেমের পর কোহিনূর ও আলীনূর বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এ বিবাহে উভয়পক্ষের অভিভাবকদের সম্মতি আছে।

Advertisement

হঠাৎ কোহিনূরের অদ্ভুত প্রস্তাব আলীনূরের বিশ্বাসের ঘরে আগুন দিয়েছে, যা তাকে পলে পলে দগ্ধ করছে। আগুনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তিলাভের জন্য ফ্রিজের বরফশীতল জল পান করছিল আলীনূর। এ সময় কোহিনূরের ফোন পেলো সে।

: হ্যালো আলী, কেমন আছ?: ভালো আছি, খুব ভালো, ভীষণ ভালো।: তুমি কি আমার ওপর রাগ করেছ? দেখ আলী, তুমি তো শাহীন আপাকে ভালো করেই চেনো, তিনি যখন বলেছেন, এটা করতেই হবে। অবশ্য এর একটা ভালো দিকও রয়েছে।

: ভালো কিছু আছে কি না জানি না; তবে এটুকু বুঝতে পারছি, এর মধ্য দিয়ে আমাকে ইনসাল্ট করা হচ্ছে। তোমাকে বলছি কোহি; তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে আমি একটা কঠিন ডিসিশন নিতাম।: উফ্ আলী, প্লিজ! তুমি কি আমাকে ভালোবাস না?: বাসি।: তাহলে? ভালোবাসার জন্য মানুষ কতো কী করে; আর তুমি সামান্য কয়েকটা ডায়াগনস্টিক টেস্ট করাতে এমন ভয় পাচ্ছ কেন? : ভয় না, এটা মর্যাদার প্রশ্ন। তোমরা কেউ আমাকে বিশ্বাস করছ না।: বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্ন যখন তুললে, তখন তোমাকে বলি আলী, এই জগতে আমার চেয়ে বেশি কে আর তোমাকে বিশ্বাস করে? এটা জাস্ট একটা ফর্মালিটি অথবা বলতে পারো শাহীন আপার পাগলামি। তুমি রাজি হয়ে যাও। প্লিজ...

Advertisement

: ঠিক আছে।: এই তো লক্ষ্মী ছেলের মতো কথা। থ্যাঙ্ক ইউ।ডায়াগনস্টিক টেস্ট সম্পন্ন হলো। কোহিনূরের কানাডা প্রবাসী বড় বোন শাহীনূর, যিনি সম্প্রতি কানাডা থেকে বাংলাদেশে এসেছেন, শর্ত অনুযায়ী ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে টেস্টের রিপোর্টগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে গেলেন। বিশাল একটা হৃদয় উৎসর্গ করা সত্ত্বেও কোহিনূরকে পাওয়ার জন্য ফের রক্ত উৎসর্গ করার মতো আচানক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে আলীনূর খুবই মর্মাহত। তবে শান্ত্বনার প্রধান দুটি কারণ ছিল এই প্রথমত, টেস্টের যাবতীয় ব্যয়ভার শাহীনূর বহন করেছেন; দ্বিতীয়ত, টেস্টের ফলাফল যে তার বিরুদ্ধে যাবে না, এ ব্যাপারে আলীনূর শতভাগ নিশ্চিত ছিল।

কিন্তু নিশ্চিত-অনিশ্চিতের দ্বন্দ্ব সতত ক্রিয়াশীল যে গ্রহে, সেখানকার বাসিন্দা মানুষ নামের প্রাণীদের সব ধারণা সব সময় সত্য হয় না। আলীনূরেরও হলো না। এর প্রমাণ পাওয়া গেলো শাহীনূরের কথায়। শাহীনূর ফোন করে আলীনূরকে বললেন,: তোমার জন্য একটা দুঃসংবাদ আছে।: কী রকম?: তুমি কি ডিটেলস শুনতে চাও?: অসুবিধা কী! : শুন, ছোটবেলা থেকেই আমি সোজা কথার মানুষ; তাই সবকিছু সোজাসুজি বলতেই পছন্দ করি। তোমার আর কোহিনূরের বিয়েটা হওয়া সম্ভব নয়।: কেন সম্ভব নয়?: তোমার ডায়াগনস্টিক টেস্টের রিপোর্ট মারাত্মক কিছু ডিজিস সম্পর্কে আমাদের অবহিত করেছে। এর মধ্যে আমি শুধু দুটোর নাম বলছি। একটি ডায়াবেটিস, অন্যটি টিবি।: অসম্ভব। আমাদের বংশে কারও ডায়াবেটিস হওয়ার ইতিহাস নেই। আর টিবি হলে অনেক আগেই আমি তা টের পেতাম।: তর্ক করে লাভ নেই। যদি তুমি চাও তাহলে জাজ করাতে পারো। জাজ করা মানে পুনরায় রক্ত পরীক্ষা করা। আলীনূর তাই করল। দ্বিতীয়বার আগের জায়গায় না গিয়ে অন্য এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলো এবং দ্বিতীয় দফায় রক্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রথমবারের ফলাফলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল।

টেস্টের ফলাফল হাতে নিয়ে বাসায় এসে আলীনূর দেখল, একটি ইংরেজি দৈনিকে শাহীনূর ও এক যুবকের যুগল ছবিসহ একটি বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে। বিজ্ঞাপনের ভাষাটা বাংলায় তরজমা করলে এরকম দাঁড়ায়- আদরের ছোট বোন কোহিনূর খান মজলিশ দস্তগীর ও কানাডা প্রবাসী প্রকৌশলী ইমদাদ আরেফীন দস্তগীরের নতুন জীবন সুখের হোক। শুভ কামনায়- বড় বোন শাহীনূর খান মজলিশ একরামুদ্দিন।

লেখক: সাংবাদিক, রম্যলেখক। basantabilas2021@gmail.com

Advertisement

এইচআর/ফারুক/জিকেএস