আজ ১২ মে, আন্তর্জাতিক নার্স বা ধাত্রী দিবস। আধুনিক নার্সিং পরিষেবার জনক ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল ১৮২০ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন। তাকে সম্মান জানানোর জন্য ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব নার্সেস (আইসিএন) ১৯৬৫ সাল থেকে দিনটি পালন করে আসছে।
Advertisement
নার্স শুধু একটি পেশা নয়, সেবা। তারা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে নার্সের গুরুত্ব অপরিসীম। নার্সিং পেশার ভবিষ্যৎ, কেন তরুণরা নার্সিং পেশায় ধাবিত হচ্ছেন, পেশা হিসেবে নার্সিং কেমন—এসব জানতে কয়েকজন নার্সিং পড়ুয়ার সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। বিস্তারিত জানাচ্ছেন ফিচার লেখক সাজেদুর আবেদীন শান্ত—
রংপুর নার্সিং কলেজের ডিপ্লোমা ইন নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি শিক্ষার্থী নিশিতা নিতু বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই চিন্তা করতাম, কীভাবে মানুষের সেবায় নিজেকে নিযুক্ত করতে পারবো। এ চিন্তা-ভাবনা থেকেই নার্সিংয়ে আসা। যাতে দুস্থ, অসহায় মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকতে পারি। আমার মতে নার্সিং একটি মহৎ পেশা। সরকার এ পেশাকে দ্বিতীয় শ্রেণির পেশা হিসেবে ঘোষণা করেছে। আমরাই পারি নিজেদের সেবা ও সহানুভূতি দিয়ে অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে। আমাদের মতো মিডওয়াইফদের যথাযথ সেবায় কমেছে মাতৃমৃত্যুর হার। প্রতিটি মাকে আমরা সঠিক জন্মদানে সাহায্য করতে পারছি। তাদের সুরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে অসংখ্য মিডওয়াইফ।’
তিনি বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়েও পৌঁছে গেছে হাজার হাজার নার্স, মিডওয়াইফ। তারা কাজ করে যাচ্ছেন। আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে, নিজ হাতে সেবা দিয়ে মুখে সুস্থতার হাসি ফোটানোর মধ্যে যে প্রাপ্তি, তা অন্য কোনো পেশায় আছে বলে মনে হয় না। নার্সরা একেকজন যোদ্ধা। অন্যের জীবন বাঁচাতে যুদ্ধ করে যান প্রতিটি মুহূর্ত। পরিশেষে বলবো, নির্দ্বিধায় নার্সিং একটি মহান পেশা এবং যুগ যুগ এভাবেই এ পেশার সম্মান অক্ষুণ্ন থাকবে।’
Advertisement
বরিশাল নার্সিং কলেজের ডিপ্লোমা ইন মিডওইফারির ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা ইসলাম বলেন, ‘নার্সিং একটি সেবামূলক পেশা। নার্সরা দিন-রাত রোগীর সেবার কাজে নিয়োজিত থাকেন। সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। নার্সরা নিজেদের কথা না ভেবে দিন-রাত এক করে কাজ করেন। বর্তমানে নার্সিং পেশা অনেকটা এগিয়ে গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নার্সিং পেশাকে দশম গ্রেডের করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘নার্সিং পেশায় আছে নানা রকমের সুযোগ-সুবিধা। আছে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ। দেশের বাইরে চাকরির সুবিধাও আছে। এ ছাড়া পড়া শেষ করেই সরকারি-বেসরকারি চাকরির সুবিধা তো আছেই। এটি আমার খুব পছন্দের পেশা। আমি গর্বিত, আমি একজন নার্স। বিশ্ব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নার্সিং খাতে বিনিয়োগ বাড়ান, আন্তর্জাতিক নার্স দিবসে নার্সদের আধিকার সংরক্ষণ করুন।’
নার্সিং দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আকতার বর্ষা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। মানুষের সেবা করার। তাই হাজারো পেশার মাঝে এ পেশাকেই বেছে নেওয়ার ইচ্ছা ছিল। আমার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। এ পেশার মাধ্যমে সারাক্ষণ রোগীর সাথে থেকে সেবা করার সুযোগ পাওয়া যায়।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বমন্দার কারণে অন্যান্য জব মার্কেট সংকুচিত হলেও নার্সিং পেশায় কোনো প্রভাব পরেনি। বরং গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। বাংলাদেশে প্রচুর নার্স নিয়োগ দেওয়া হয় সরকারি-বেসরকারি খাতে। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেসরকারি হাসপাতাল। তাই নার্সের সংখ্যা ও পেশার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে।’
Advertisement
বগুড়া নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কলেজের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মুনিরা খাতুন বলেন, ‘নার্সদের কঠোর পরিশ্রম ও সেবা ছাড়া তাদের সুস্থ হয়ে ওঠা কঠিন। আজ সেই মানুষদের শ্রদ্ধা জানানোর দিন। ছোটবেলায় ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জীবনী পড়ে ইচ্ছা হতো মানুষের সেবা করার। তাই এ পেশায় আছি। অসুস্থ মানুষদের খুব কাছ থেকে সেবা করাই নার্সদের কাজ। তারা অসুস্থ মানুষের সেবার ব্রত নিয়ে এ পেশায় আসেন। নার্সিং পেশার ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল। এ দিবসে আমাদের একটাই চাওয়া, যেন যথাযথ সম্মান নিয়ে মানুষের সেবা করতে পারি। সরকার যেন নার্সিং খাতে বিনিয়োগ বাড়ায়।’
এসইউ/জিকেএস