দোষে-গুণে মানুষ। মানুষ মাত্রই ভুল করে। কিন্তু যেসব দোষ রাতের অন্ধকারে বা গোপনে হয়ে থাকে তা অন্য কারো কাছে নিজ থেকে প্রকাশ করা ঠিক নয়। যেসব দোষ প্রকাশ হয় না; মহান আল্লাহ তা নিজ গুণে ক্ষমা করে দেন। হাদিসের একাধিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত। নিজ দোষ গোপন রাখার ফজিলত ও উপকারিতা সম্পর্কে কী এসেছে হাদিসে?
Advertisement
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আমার সব উম্মাতকে মাফ করা হবে, তবে প্রকাশকারী ছাড়া। আর নিশ্চয়ই এটা বড়ই অন্যায় যে, কোনো লোক রাতের বেলা অপরাধ করলো যা আল্লাহ গোপন রাখলেন। কিন্তু সে সকাল হলে বলে বেড়াতে লাগলো, হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটালো যে, আল্লাহ তার কর্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার উপর আল্লাহর দেয়া আবরণ খুলে ফেললো।’ (বুখারি, মুসলিম)
এ হাদিস থেকে বুঝা গেলো, মহান আল্লাহ বান্দার কোনো দোষ নিজ থেকে প্রকাশ করেন না। বরং তিনি বান্দার গোপন দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখেন। এ কারণেই নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের সবাইকে ক্ষমা করা হবে; তারা ছাড়া, যারা নিজ নিজ দোষ প্রকাশ করে দেয়।’
নিজ দোষ গোপন রাখার ফজিলত ও উপকারিতা
Advertisement
২. হজরত সাফওয়ান ইবনে মুহরিজ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলো, আপনি ‘নাজওয়া’র (কেয়ামতের দিন আল্লাহ ও তাঁর মুমিন বান্দার মধ্যে গোপন আলোচনা) ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কী বলতে শুনেছেন?
তিনি (ইবনে ওমর) বললেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের এক ব্যক্তি তার প্রভুর এত কাছাকাছি হবে যে, তিনি তার উপর তাঁর নিজস্ব আবরণ টেনে দিয়ে দুইবার জিজ্ঞাসা করবেন- ’তুমি এই এই কাজ করেছিলে?’
সে (মুমিন ব্যক্তি) বলবে- ’হ্যাঁ’।
আবার তিনি জিজ্ঞাসা করবেন- ‘তুমি এই এই কাজ করেছিলে?’
Advertisement
সে বলবে- ‘হ্যাঁ’। এভাবে তিনি (আল্লাহ) তার (বান্দার) স্বীকারোক্তি গ্রহণ করবেন।
এরপর বলবেন, ‘আমি দুনিয়াতে তোমার এ(দোষ)গুলো লুকিয়ে রেখেছিলাম। আজ আমি তোমার এসব গুনাহ ক্ষমা করে দিলাম।’ (বুখারি)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নিজেদের জীবনে ঘটে যাওয়া যেসব দোষ অন্য কারো মাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার সুযোগ নেই; তা নিজ থেকে প্রকাশ না করা। মহান আল্লাহ পরকালে বান্দাকে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ সব দোষ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে স্বীকারোক্তি নেবে। এরপর ক্ষমা করে দেবেন। তাই নিজের দোষ নিজ থেকে প্রকাশ না করাই উত্তম।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিজের গোপন দোষগুলো প্রকাশ না করে গোপন রাখার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত ও নাজাত দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম