ক্যাম্পাস

অসময়ের `ঘুম বৃষ্টি`

ঘড়িতে এলার্ম দেয়া আছে সকাল সাড়ে ৮টায়। ঠিক সময়ে এলার্ম বেজে উঠলো। সেটা বন্ধ করে আবার নতুন একটা সময় সেট করলাম। এটা এখন প্রতিদিনের অভ্যাস। তাই ঘুমানোর আগে সময়টা সেভাবেই সেট করি। আস্তে আস্তে ঘড়ির কাঁটাটা আবার পরে দেয়া সময়টার কাছে এসে ঠেকলো। এবার উঠতেই হবে। খুব কষ্ট করেই বিছানা ছাড়লাম। কোনো মতো হালকা পানির স্পর্শে ফ্রেশ হয়ে ছুটলাম প্রতিদিনের রুটিনে। বাইরে দেখে ঠিক বোঝার উপায় নেই এখন শীত না বর্ষাকাল। কিছুক্ষণ আগেই বৃষ্টি হয়েছে। পিঠে ঝোলানো ব্যাগ নিয়ে চলছি মাঝরাস্তায়, আবার নামলো ঝুম বৃষ্টি। নেই কোনো ছাতা। অল্প সময়ের আর কোনো চিন্তা মাথাই আসলো না। শুরু ভোঁদৌড়। দৌঁড়ানোর সময় অঞ্জন দত্তের সেই গানটিই বারবার মনে পড়ছিল-‘একদিনে বৃষ্টিতে বিকেলেথাকবেনা সাথে কোনো ছাতাশুধু দেখা হয়ে যাবে মাঝরাস্তায়ভিজে যাবে চটি জামা মাথাথাকবে না রাস্তায় গাড়ি ঘোড়া দোকান পাট সব বন্ধশুধু তোমার আমার হৃদয়েভিজে মাটির সোদা গন্ধ।’গ্রাম-বাংলায় একটা প্রবাদের প্রচলন আছে, ‘মাঘ মাসে বাঘ কাঁন্দে’। কিন্তু সেই বাঘের কান্না তো নিতান্তই শীতে। এ কেমন শীত। অসময়ের বৃষ্টিতে প্রায় থমথমে জনজীবন। যেই কাজের জন্য আসা সেটা একবারের বিফলে গেল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের কোন দোকানই এখনো খুলেনি। বৃষ্টি আবার থেমেছে। ইচ্ছা করলো ক্যাম্পাসে একটু হাঁটি। একেবারেই অন্যরকম ক্যাম্পাস। ক্যম্পাসের যে টুকিটাকি চত্বরে দিনের প্রায় সব সময় বসার জায়গা পেতে হিমশিম খেতে হয় সেখানে মানুষের দেখা মেলায় দায়।নিশ্চল বসে অবসর সময় কাটাচ্ছেন দোকান মালিকসহ শ্রমিকরা। কথা হয় সেখানে একজন দোকান মালিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে মাঘ মাসের এই বৃষ্টিতে আমাদের ব্যবসায় বেশ লোকসান হচ্ছে। এই শীতে কে বের হবে বলেন? সবাই লেপের নিচে ঘুমায়। আমাদের পেটের দায়, তাই বের হয়েছি।’গতকাল মঙ্গলবার থেকেই আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তন। শীতের ঘন কুয়াশার বদলে পড়ছে বৃষ্টি।  এদিকে সকাল ৬টা থেকেই পুরো ক্যাম্পাস জুড়েই বিদ্যুত নেই। এতে ভোগান্তি আরও শতগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাবির অর্থনীতি বিভাগের মো. ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘বৃষ্টি কারণে সকাল থেকেই বেশ ভোগান্তি পোহাচ্ছি। কিন্তু তারপর আমি এই আবহাওয়াকে বেশ উপভোগই করছি।হলগুলোর অধিকাংশ কক্ষে খেয়াল করে দেখা গেছে দুপুর ১২টা পার হলেও এখনো অনেকের শুভ সকালটুকুও হয়নি। ঘুমকেই বেছে নিয়েছেন আরামপ্রিয় শিক্ষার্থীরা। তবে অনেকে অবশ্য এর কারণও বললেন। রোকন ও নুর নামের দুই জন শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষার্থীদের এই আলসেমির অন্যতম কারণ হলো আমাদের কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। শিক্ষক ফেডারেশন তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করলেও আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তা এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি।’রাশেদ রিন্টু/এসএস/এমএস

Advertisement