ঠাকুরগাঁওজুড়ে দফায় দফায় শিলাবৃষ্টি, ঝড়োবৃষ্টি ও কালবৈশাখী হানা দিয়েছে। ফলে ভুট্টার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হেক্টরকে হেক্টর ভুট্টার মাঠ। উৎপাদন ব্যাহত হলেও বাজারে দাম ভালো থাকায় ভুট্টা ঘরে তুলতে দেখা গেছে কৃষকের ব্যস্ততা।
Advertisement
সোমবার (৯ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে ঝড়ে নুইয়ে পড়া ডাটা থেকে ভুট্টার মোচা ভাঙছেন কৃষক ও শ্রমিকরা।
সদর উপজেলার চিলারংয়ের সাইফুল ইসলাম বলেন, এবার গ্রামে গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ জমিতে ভুট্টার চাষ করা হয়েছিল। যেসব কৃষক ভুট্টার চাষ করেছেন তাদের মাঝে আমিও একজন চাষি। প্রতিবছর এখানে বাম্পার ফলন হয়।
চলতি বছরেও দ্বিগুণ ফলন হত। কিন্তু ঝড়ের কারণে ভুট্টার উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। তাই খুব দুশ্চিন্তা করছিলাম। তবে বাজারে ভুট্টার দাম ভালো যাচ্ছে তাই লোকসান কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারব বলে প্রত্যাশা করছি। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভুট্টা বিক্রি করতে চাই।
Advertisement
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কৃষক রমিজ উদ্দীন বলেন, আমার আবাদের অর্ধেক ভুট্টা ক্ষেত ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে দাম থাকায় খরচ উঠে আসবে আশা করছি। প্রতি বছর ৭ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করি। প্রতি বিঘাতে পেতাম ৭০ থেকে ৮০ মণ ভুট্টা। কিন্তু এবারে ৪০ মণের বেশি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
বেগুনবাড়ি এলাকার কৃষক মিঠু রহমান বলেন, গত বছর লাভবান হয়ে এবার ৪ বিঘা থেকে ৮ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। বার বার ঝড়ের কবলে না পড়লে এবার ভুট্টা চাষিরা অনেক বেশি লাভবান হতাম। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বাজারের দামে ক্ষতি কিছু কমিয়ে আনলেও লাভবান হতে পারব না।
এবার মাঠেই কাঁচা ভুট্টা বিক্রি করছি ৮২ কেজির বস্তা ১৮০০ থেকে ১৯০০ টাকা। গতবছর বিক্রি করেছিলাম সর্বোচ্চ ১২০০ টাকা। দামে আমি বেশ খুশি। তবে আগাম ভুট্টা ছাড়াও যারা একটু দেরিতে ভুট্টার চাষ করেছেন তারা একটু বেশি হতাশাগ্রস্ত।
এ বিষয়ে আকচা মুন্সিপাড়া গ্রামের কৃষক হাসেম আলী বলেন, কিছুদিন আগে দফায় দফায় শিলাবৃষ্টির কারণে মচা হওয়ার আগেই ভুট্টার চারা ডাটা ভেঙে গেছে। অনেকের ভুট্টা গাছ আবার নুইয়ে পড়েছে। ফলন ভালো হয়নি। সেক্ষেত্রে আমার মতো চাষিরা লোকসানে পড়বেন। উৎপাদন খরচ উঠানোও কষ্টসাধ্য হবে।
Advertisement
জেলার ভুট্টা ব্যবসায়ী আখতার হোসেন বলেন, এবারে ভুট্টার উৎপাদন ভালো হয়নি। অনেক টাকা বিনিয়োগ করে ভুট্টা কিনতে হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে ভুট্টা কিনতে গেলে দেখা যাচ্ছে ভালোমানের দানাদার ভুট্টা মিলছে না। ঝড়ের কারণে যেসব ভুট্টা গাছ হেলে পড়েছে সেসব গাছের ভুট্টার দানা খুব একটা ভালো নয়। তবে দাম ভালো পাওয়ায় ওভাবেই ভুট্টা দ্রুত সংগ্রহ করছেন কৃষক।
ঠাকুরগাঁও থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ ট্রাক ভুট্টা জেলার বাইরে বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে বলে জানান ভুট্টা ব্যবসায়ী আখতার হোসেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যসূত্রে এবারে জেলাজুড়ে রবি ভুট্টার চাষ হয়েছে ৩৩ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে এবং গ্রীষ্মকালীন ভুট্টা ১৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার ৮৮৭ টন ভুট্টা।
এখন পর্যন্ত রবি ভুট্টা সংগ্রহ করা হয়েছে ৭ হাজার ৬৪৮ হেক্টর জমির। যা থেকে উৎপাদন এসেছে ৮১ হাজার ৮৩৪ মেট্রিক টন। গ্রীষ্মকালীন ভুট্টার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ২৩৯ টন। তবে ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রীষ্মকালীন ভুট্টা।
কৃষি বিভাগ থেকে জানা গেছে, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমি। যার মধ্যে চূড়ান্ত ক্ষতির হিসাব দেখানো হয়েছে ৬৪২ হেক্টর জমির।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এবারে কয়েক দফায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। যার কারণে উৎপাদন কিছুটা ব্যাবহত হতে পারে। তবে এখনো যে পরিমাণ ফসল মাঠে আছে তা থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য হতে পারে।
তানভীর হাসান তানু/এমএমএফ/জিকেএস