বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের প্রথম স্পোর্টস-ফিল্ম নির্মাতাখ্যাত খিজির হায়াত খান ও তার ভাই রেফায়েত হায়াত খান এবং গাড়ির ড্রাইভার হিমাদ্রি চক্রবর্তীকে বেধড়ক পিটুনির তিন দিন পরেও মামলা নেয়নি পুলিশ। উল্টো হামলাকারীদের সঙ্গে আপোষ করার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রোববার (১৭ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার দিকে তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বারিধারা এলাকার নিউ ডিওএইচের কথিত ঠিকাদার এম এস আলম, তার ছেলে সফিকুল আলম মিঠুন এবং তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী মিশুর নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে খিজির হায়াতকে।খবর পেয়ে পুলিশ আহতদের প্রথমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। পরে হাসপাতালে এম এস আলমের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা হামলার পাঁয়তারা করলে নিরাপত্তার কারণে আহতদের ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দু’দিন চিকিৎসা শেষে ডাক্তাররা বাসায় ফেরার অনুমতি দিলেও খিজির হায়াত খানকে এক মাস পূর্ণ বিশ্রাম এবং মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত বাঁ হাত দিয়ে তিন মাস কোনো কাজ না করার নির্দেশ দিয়েছেন।জানা গেছে, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানকে নিয়ে ‘অস্তিত্বে আমার দেশ’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন পরিচালক খিজির হায়াত খান। এটি ছিলো তার প্রথম চলচ্চিত্র। এরপর খেলা নিয়ে তৈরি করেন ‘জাগো’।তারপর দীর্ঘ চার বছর বিরতি কাটিয়ে আবার শুরু করেন তার তৃতীয় চলচ্চিত্র ‘প্রতিরুদ্ধ’। এতে তুলে ধরা হয়েছে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত মেধাবীদের হারিয়ে যাওয়ার গল্প।হামলার কয়েক দিন পেড়িয়ে গেলেও পুলিশ মামলা নিচ্ছে না। তারা আহতদেরকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে উল্টো হামলাকারীদের সঙ্গে আপোষ করার জন্য চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।এ বিষয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান জানান, মামলা না নেয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। দু’পক্ষই থানায় এসেছিলেন। নিজেদের মধ্যে কথা বলে পরে মামলা করবেন বলে জানান তারা।চলচ্চিত্র নির্মাতা খিজির খান বলেন, রোববার রাতে অফিসে সিনেমার কাজ করছিলাম। এসময় চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে নিচে এসে দেখি একজন বয়স্ক মাতাল আমার ড্রাইভারকে গলায় পিস্তল দেখিয়ে গালিগালাজ করছে এবং গুলি করে মেরে ফেলতে চাইছে।পরে নিজের পরিচয় দিয়ে মাতাল এম এস আলমকে জিজ্ঞাস করি যে, হিমাদ্রি চক্রবর্তী তার গাড়িচালক। সে কোনো অন্যায় করে থাকলে আমি তার বিচার করবো। তখন হিমাদ্রি তাকে জানান যে, সে গাড়ি বের করার সময় অফিসে নিচে ভাড়ায় পার্কিং করে রাখা জাতীয় সংসদের সদস্যদের স্টিকারযুক্ত দু’টি গাড়ির মধ্যে একটিতে হালকা দাগ লেগেছে।এই কথা শুনে যখন খিজির হায়াত এম এস আলমকে শান্ত হতে বলেন সে প্রচণ্ড রেগে উঠে আমার বুকে লাথি মারে। এক পর্যায়ে প্রাণ ভয়ে আমি হিমাদ্রিকে নিয়ে আমার অফিসে ভিতর চলে যাই।এরপর বাসার ফেরার উদ্দেশ্যে নিচে নামলে দেখতে পাই মাতাল এম এস আলমের সঙ্গে তার ছেলে আরিফুল ইসলাম মিঠুন ও স্থানীয় সন্ত্রাসী মিশুর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী আগ্নেয়াস্ত্র ও হকিস্টিক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অফিস থেকে নামামাত্র তারা আবার আমাদের উপর হামলা করে। গুরুতর আহতাবস্থায় আমাদের পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যায়।হামলার শিকার গাড়ির চালক হিমাদ্রি জানান, হামলার সময় আমাকে মালাউনের বাচ্চা মালাউন বলে গালিগালাজ করেছে এবং বলেছে এই ঘটনার কথা কারো কাছে ফাঁস করলে গুলি করে মেরে লাশ ভারতে প্যাকেট করে পাঠিয়ে দিবো।স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এম এস আলম ঠিকাদারি ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণ চোরাচালানে অর্থ বিনিয়োগ করে। এর পাশাপাশি তার ছেলে মিঠুন স্থানীয় সন্ত্রাসী মিশুর সঙ্গে হাত মিলিয়ে চোরাই গাড়ি আমদানি করে জাতীয় সংসদ সদস্যদের স্টিকার জাল করে গাড়ি বিক্রি করে। তার ছেলের সঙ্গে সব সময় অস্ত্রসহ পাঁচ/ছয়জন বডিগার্ড থাকে।এ বিষয়ে কথা বলতে এম এস আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘সংবাদ লিখে আমার কিছুই করতে পারবেন না। তাই কথা বলেও লাভ নেই।” এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) মারুফ হাসান সরদার বলেন, আমি বিষয়টি অবগত নই। জেনে জানাতে পারবো।জেইউ/বিএ
Advertisement