জাতীয়

আদালতের নির্দেশ অমান্য করে মোহাম্মদপুরে কলোনি উচ্ছেদ

গতবছর উচ্ছেদ শুরুর পরিকল্পনা করেছিল সরকার। কিন্তু মামলা হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। সোমবার শুনানিতে হাইকোর্ট ‘কেন উচ্ছেদ করা হচ্ছে’ মর্মে জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সরকার পক্ষ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কোর্টে দাখিল করতে পারেনি। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) শুনানির তারিখ নির্ধারণ করে এসব ভবন ভাঙার বিষয়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।তবুও ভাঙা হচ্ছে মোহাম্মদপুর নিউ কলোনি ভবন। স্টে অর্ডার অমান্য করে ভবনই শুধু ভাঙা পড়েনি, আদালত অবমাননাও হয়েছে। ঘরের ভেতর বাসিন্দারা থাকতেই ভেঙে ফেলা হচ্ছে ভবন। বাধা দিতে গেলেই হাত তোলা হচ্ছে গায়ে। বছরের পর বছর যারা ছিলেন, মুহূর্তে তারা হয়ে গেলেন অবাঞ্ছিত। মঙ্গলবার দিনভর উচ্ছেদ অভিযান চলে কলোনিতে।কলোনির বাসিন্দাদের অভিযোগ, আদালতের স্টে অর্ডারের বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে এ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মাসুদ বারীর ছত্রচ্ছায়ায়।বাসিন্দারা জানান, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা ভেঙে অন্য কোথাও একটা ব্যবস্থা করবে। কিন্তু অনেক দামের ওই নতুন ফ্ল্যাটে ওঠার সামর্থ্য নেই কারো।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ৩০ বছর ভাড়া দিয়ে এলে নিউ কলোনির এই ফ্ল্যাটগুলো বাসিন্দাদের নামে দিয়ে দেয়া হবে। বাসিন্দারা ভাড়াও পরিশোধ করে আসছিলেন। কিন্তু হঠাৎ এখানে সরকারি সুউচ্চ ভবন ও নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা হয়।৭টি ভবনে দীর্ঘদিন ধরে মোট ১১৪টি পরিবার বসবাস করে আসছিল। এদের সবাই মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও চিকিৎসক পরিবারের। নিউ কলোনির বাসিন্দারা জানান, সর্বোচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার পরও শুধু ক্ষমতার জোরে এমন অমানবিক কাজ করেছেন স্থানীয় এমপি ও কমিশনার।মঙ্গলবার বিকেলে নিউ কলোনি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভবনগুলো থেকে বিভিন্ন মালামাল স্থানান্তর করে রাখা হচ্ছে পাশের মাঠে। চোখের পানি নিয়ে ভ্যান ও ট্রাকে মালামাল তুলে নিচ্ছেন কেউ কেউ।মোশাররফ হোসেন নামে একজন বসিন্দা জানান, আমরা কোথায় যাবো! আদালতের নির্দেশনায় আশ্বস্ত হয়েছিলাম। কিন্তু এভাবেই যে বের করে দেয়া হবে ভাবিনি। অথচ আমরাই এখানে বসবাস করে আসছি যুগের পর যুগ। কমমূল্যে বাসা পাওয়ার অধিকার আমরাই রাখি। কিন্তু এখন আমাদের বঞ্চিত করে ফ্ল্যাট দেয়া হচ্ছে পলিটিক্যাল ও মাস্তানদের।’এক নারী জোরে ক্রোন্দন করতে করতে বলেন, ‘এই শীতে বৃদ্ধ বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথায় উঠবো? আমাদের একটু সময় দিলো না ওরা। ঘরের ভেতর থেকে কোনো জিনিস নামানো হয়নি। নারীদের গায়ে হাতও তোলা হয়েছে। থানায় গিয়েছিলাম। কেস নিলো না থানা।”খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৮ লাখ করে টাকা দিয়ে নিউ কলোনির ফ্ল্যাট কিনেছিলেন ওই বাসিন্দারা। কিন্তু ঠায় পুলিশ নিরূপায় দাঁড়িয়ে থাকলেও সবই হয়েছে স্থানীয় এমপি নানকের লোকবল দ্বারা।শিরিন নামে এক নারী জানান, ‘সরকারি কাজে হস্তক্ষেপের অজুহাতে রাতেই কলোনির ১০-১২ জন পুরুষকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে পুলিশ।কলোনির বাসিন্দা জারিয়াদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ বারী, বদি, সোহাগ, আকবর, উজ্জল, জামাল এদের চক্রান্তের শিকার তারা। সংঘবদ্ধ গ্রুপ হয়ে ডেভেলপারকে জায়গাটা দিয়ে ওরা ব্যবসা করছে। এমপি নানক প্রথমে সমর্থন করলেও পরে তিনিও হতাশ করেন বলেও দাবি তাদের।এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৩২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুদ বারীর বক্তব্য, “বাসিন্দারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এখানে বহুতল ভবন করতে চায় সরকার। আর সে কারণেই তো পুরাতন ভবন ভাঙতে হচ্ছে। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে তো আমি আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে সহযোগিতা করতেই পারি।”জেইউ/বিএ

Advertisement