কৃষি ও প্রকৃতি

প্রকৃতির কানে দুলছে সোনালু ফুল

সবুজ পাতা ছাপিয়ে সোনালি রঙের ফুলে সেজেছে সোনালু গাছ। এটিকে বানরলাঠি বা বাঁদরলাঠি গাছও বলা হয়। সোনালি রঙের ফুল হওয়ার কারণেই মূলত এ গাছটির নামকরণ হয়েছে ‘সোনালু’। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর নাম দিয়েছিলেন অমলতাস। হিন্দিতেও গাছটিকে অমলতাস বলা হয়। ইংরেজিতে সোনালু গাছকে বলা হয় গোল্ডেন শোয়ার। তবে বাংলাদেশে অঞ্চল ভেদে এর নামের ভিন্নতা রয়েছে।

Advertisement

সোনালু গাছের পাতা ও বাকল ভেষজগুণ সমৃদ্ধ। যা ডায়রিয়া ও বহুমূত্র রোগে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ায় এ গাছ বেশি জন্মে। গাছটি সাধারণত ১৫ থেকে ২০ মিটার উঁচু হয়। উঁচু থেকে মাঝারি উঁচু ভূমিতে সোনালু গাছের জন্য আদর্শ স্থান। জানা গেছে, গাছটির আদি নিবাস হিমালয় অঞ্চল হলেও বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এবং মায়ানমার জুড়ে রয়েছে এর বিস্তৃতি।

বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে কিংবা বন-জঙ্গলে সোনালু গাছ দেখা যায়। এ গাছের শাখা-প্রশাখা কম, কাণ্ড সোজাভাবে উপরের দিকে বাড়তে থাকে। ফুল থেকে গাছে ফল হয়। ফলের আকার দেখতে সজিনা সবজির আকৃতির। ফল লম্বায় প্রায় এক ফুট হয়। এর রং প্রথমে সবুজ ও ফল পরিপক্ব হলে কালচে খয়েরি রং ধারণ করে। কোনো কোনো অঞ্চলে সোনালু ফলকে বানরলাঠি বলা হয়।

বাংলাদেশের সিংহভাগ সোনালু গাছ প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। প্রকৃতির শোভাবর্ধনকারী ও ভেষজ গুণসম্পন্ন গাছটি বেশিরভাগই বেড়ে উঠছে অযত্ন-অবহেলায়। শুটিং স্পট আর রিসোর্ট খ্যাত জেলা গাজীপুরজুড়ে রয়েছে অসংখ্য সোনালু গাছ। গ্রীষ্মের রুক্ষ প্রকৃতিতে প্রাণের সজীবতা নিয়ে অলংকারের ন্যায় শোভা বৃদ্ধি করছে সোনালু ফুল। গাজীপুরের কালীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে গ্রীষ্মের দক্ষিণা হাওয়ায় সোনা ঝরা সোনালু ফুল যেন প্রকৃতির কানে দুলের মতো দুলছে।

Advertisement

প্রকৃতিকে নয়নাভিরাম রূপে সাজিয়ে তুলতে সোনালু ফুলের জুড়ি নেই। পরিবেশ ও প্রকৃতির শোভা বৃদ্ধিতে সোনালু দারুণ এক মায়া এনে দিয়েছে। গ্রামের শিশু-কিশোরীরা এখনো ওই ফুলকে কানের দুল হিসেবে লাগিয়ে খেলায় মেতে ওঠে। সোনালু ফুলে শোভিত জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লা।

উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের চুয়ারিয়াখোলা ও বোয়ালী গ্রামে এলে দেখা মেলে দুটি সোনালু গাছের। আর সেখানে অটোরিকশা থামিয়ে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা নুরুল ইসলাম ও সাইফুর রহমান নামের দুই যুবকের সঙ্গে কথা হয়।

সাইফুর রহমান বলেন, ‘কোনো একদিন চলন্ত রাস্তায় দূর থেকে গাছটি দেখলেও কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়নি। পরে কাজ শেষ করে বন্ধু নুরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে সোনালু গাছটির কাছে গিয়ে এর রূপ সৌন্দর্য উপভোগ করেছি। এ যেন প্রকৃতির অপার কারুকাজ।’

নুরুল ইসলাম বলেন, ‘একসময় সোনালু গাছ প্রকৃতিতে অনেক বেশি থাকলেও ধীরে ধীরে তা কমে আসছে। সোনালু গাছের কাঠ তেমন গুরুত্ব বহন না করায় এবং গাছটি খুব ধীরগতিতে বেড়ে ওঠায় এ গাছ রোপণে আগ্রহ নেই কারো।’

Advertisement

সোনালু গাছ নিয়ে কথা হয় কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ভাদার্ত্তী গ্রামের বাসিন্দা প্রকৃতিপ্রেমী সুমন সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা শৈশবে সোনালু বা বানরলাঠি বা বাঁদরলাঠি গাছ বাড়ির আশপাশেই দেখেছি। তবে এখন আর দেখা যায় না। মাঝেমধ্যে সোনালু গাছের দেখা মেলে। গ্রীষ্মকালে জারুল, কৃষ্ণচূড়ার মতো সোনালু ফুল আমাদের জন্য উপহার।’

আব্দুর রহমান আরমান/এমএমএফ/এসইউ/এমএস