গণমাধ্যম

স্যালুট

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাংবাদিক নেতা আলতাফ মাহমুদের চিকিৎসা চলছে ধারকর্জে। গত ছয়দিনে বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধপত্র কেনার পেছনে পানির মতো টাকা খরচ হচ্ছে। মুখ ফুটে কাউকে কিছু না জানালেও চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে আলতাফ মাহমুদের পরিবারের সদস্যদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় এ প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে আলতাফ মাহমুদকে লক্ষ্য করে তার স্ত্রী তাহমিনা মাহমুদ বলেন, প্রতিদিনই চিকিৎসার পেছনে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে, তোমার ব্যাংকে কি পরিমাণ টাকা আছে তা জানতে পারি? এ প্রশ্নের জবাবে আলতাফ মাহমুদ জানান, বর্তমানে ব্যাংকে মাত্র ১০ হাজার টাকা রয়েছে।আলতাফ মাহমুদ। সাংবাদিক নেতা হিসেবে ব্যক্তি সুখ্যাতির জুড়ি নেই। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) পাঁচ পাচঁবারের নির্বাচিত সভাপতি। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব ও সর্বশেষ বিপুল ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন। তিন দশকের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে জড়িত থাকার পাশাপাশি সাংবাদিকদের সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। নবীন-প্রবীণ, শত্রু-মিত্র, নির্বিশেষে সকলে তাকে ভালবাসেন।সাংবাদিক নেতা হিসেবে সফল হলেও মিতভাষী ও নিলোর্ভ এ  সাংবাদিক তিনদশকেও আর্থিক দৈন্যতাকে জয় করতে পারেননি। সাধারণ মানুষের ধারণা ও দেশের প্রচলিত ধারা অনুসারে যিনি বা যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তারা দ্রুত গাড়ি, বাড়ি ও ব্যাংক ব্যালেন্সের মালিক বনে যান। কিন্ত ব্যতিক্রম সাংবাদিক নেতা আলতাফ মাহমুদ। এখনও ঢাকা শহরে তার নিজের বাড়ি নেই, নেই গাড়ি। ব্যাংক ব্যালেন্সও প্রায় শূন্যের কোটায়। ১৮ বছর আগে রাজউকের উত্তরা প্রকল্পে সাংবাদিক কোটায় তিন কাঠার একটি প্লট পেয়েছিলেন। অর্থাভাবে আজও সে জমিতে বাউন্ডারি দিতে পারেন নি। দুপুর ১২টা। বিএসএমএমইউ’র কেবিন ব্লকের তৃতীয় তলার ৩১১ নম্বর কেবিনে সটান হয়ে শুয়ে আছেন আলতাফ মাহমুদ। শয্যাপাশে স্ত্রী তাহমিনা মাহমুদ ও শ্যালক মাসুদ রেজা। কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতেই স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে ক্ষীণ কণ্ঠে জানালেন, ভালো আছি, আমার অনেক সাংবাদিক ভাই আমার চাইতেও খারাপ অবস্থায় আছেন। তাহমিনা মাহমুদ এ সময় বলেন, আসলে সে ভালো নেই। সোমবার সারারাত ঘুমাতে পারেনি। বার বার ডেকে তাকে ধরে বিছানায় বসাতে বলেছে। উনাকে ধরে বার বার বসানো কী আমার পক্ষে সম্ভব। আলতাফ মাহমুদ এ সময় জানালেন, সাংবাদিকসহ অন্যান্যরা তাকে অনেক ভালোবাসেন। একাধিক মন্ত্রী, প্রবীণ সাংবাদিক নেতারা তাকে দেখতে এসেছেন। সকলের দোয়ায় ইনশাল্লাহ সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করলেন তিনি। শ্যালক মাসুদ রেজা জানান, প্রতিদিনই বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। দুলাভাই বড় সাংবাদিক নেতা হলেও তেমন টাকা পয়সা নেই। হার্টে তিনটি স্ট্যান্ট বসানো রয়েছে। গত মাসে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ৫১ হাজার টাকা বিল দিয়েছেন। ডায়াবেটিসও তার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। অর্থকষ্টে ভুগলেও সৎ ও নির্ভীক এই সাংবাদিক দুই মেয়ে আইরিন মাহমুদ ও আফরিন মাহমুদ ও ছেলে হাসিব মাহমুদ তপুকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন। বড় মেয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, ছোট মেয়ে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে বিবিএর ছাত্রী। ছেলে বাবার মতো সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় কর্মরত। তাহমিনা মাহমুদ জানালেন, আলতাফ মাহমুদ কখনও টাকার পেছনে দৌঁড়াননি। সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিবেদিতপ্রাণ তিনি। এ কথায় হেসে আলতাফ মাহমুদ বলেন, টাকা পয়সা তো আর কবরে সঙ্গে যাবে না। সাংবাদিকরা যে তাকে ভালোবাসেন সেটাই বড় পাওয়া। চলে আশার সময় আলতাফ মাহমুদ এ প্রতিবেদককে বললেন, তিনি আবার সুস্থ হয়ে সাংবাদিকদের মাঝে ফিরতে চান।এমইউ/এসএইচএস/এএইচ/আরআইপি

Advertisement