বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়েছে অনেক আগেই। রাজধানীবাসী তাদের কর্মক্ষেত্র থেকে আপন নিড়ে ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু বাড়ি ফেরেনি আন্দোলনরত নার্সরা। দাবি আদায়ে রাতেও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাত এবং রাস্তার কিছু অংশে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করছে তারা। রাতের অন্ধকারে হালকা নিয়ন বাতির পাশাপাশি যানবাহনের হেড লাইটের আলোয় হাজারো নার্সদের শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠছে প্রেসক্লাব। সবাই বলে উঠছে `আমাদের দাবি, আমাদের দাবি, মানতে হবে, মানতে হবে`।মঙ্গলবার সকাল থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা বেকার নার্সেস এসোসিয়েশনের ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা। আপনারা এখানে কতক্ষণ অবস্থান করবেন জাগো নিউজের প্রেসক্লাব প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রিনা আক্তার বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।এতেও কাজ না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া একাধিক নার্স বলেন, নার্স নিয়োগের পূর্বের নিয়ম বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং ব্যাচ, মেধা, ও জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগের দাবিতে দীর্ঘদিন কর্মসূচি পালন করে আসছি। কিন্তু গত ৮ ডিসেম্বর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে নার্সিং পেশার সার্বিক অগ্রগতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) কর্তৃক পরীক্ষার মাধ্যেমে ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে নার্স নিয়োগের ১ম স্তরের বিজ্ঞপ্তি জারির সিদ্ধান্ত হয়। নার্সরা বলেন, ওই সিদ্ধান্ত বাতিল করে পূর্বের নিয়ম বহালের আদেশ চেয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আলটিমেটাম দিলেও তা অবজ্ঞা করা হয়। এতে আমরা সবাই হতাশ এবং ক্ষুব্ধ। নার্সরা জানান, ইতিপূর্বেও দুইধাপে, মেধা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হলে নিয়োগ বাণিজ্য ঠেকানো যাবেনা উল্লেখ করে তারা জানান, এতে বেকার নার্সদের অনেকেরই ভবিষ্যৎ অন্ধকারে এবং অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে।জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয়া নার্সরা বলেন, দেশে নার্স সংকট চরমে। যা জনগণের গুণগত স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করছে।একমাত্র সুস্থ জাতিই পারে জাতীয় প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে।আর এ জন্য দরকার পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত নার্স। এক উদাহরণটেনে তারা বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সার্ভে করলে দেখা যাবে, প্রতিটি ওয়ার্ডের প্রায় একশ রোগীর জন্য ৩ শিফটে মাত্র ১০/ ১২ নার্স কর্মরত।কিন্তু আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী নার্স-রোগীর আনুপাতিক হার হওয়া উচিত ১:৪ (সাধারণ রোগীর ক্ষেত্র), ১:১ (জটিল রোগীর ক্ষেত্রে)। অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রিনা আক্তার, মহাসচিব ফারুক হোসাইনসহ বাংলাদেশ ডিপ্লোমা বেকার নার্সেস এসোসিয়েশনের অন্যান্য সদস্যরা।এএস/এএইচ/আরআইপি
Advertisement