সাইফুর রহমান তুহিন
Advertisement
ভারতে দর্শনীয় স্থানের অভাব নেই। সেখানকার বিভিন্ন প্রদেশ, বিপুল জনসংখ্যা, জলবায়ু, জাতিগোষ্ঠী, ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য সবাইকে মুগ্ধ করে। এ কারণেই প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা ভিড় করেন ভারতে।
আগ্রার তাজমহল, কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, গোয়া, সিকিম, দার্জিলিং, কেরালা, কর্ণাটক প্রভৃতি স্থান বিশ্বব্যাপী পরিচিত। ভারতের বৈচিত্র্যময় ৬টি রাজ্যের এমন কিছু স্থানের খোঁজ জানানো হলো যেগুলো বাংলাদেশ থেকে তেমন দূরের গন্তব্য নয়। এসব জায়গায় আপনি ভ্রমণ করতে পারবেন ভারতের মূল ভূ-খণ্ডের চেয়ে তুলনামূলক কম খরচে।
কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্ক, আসাম
Advertisement
ভারতের আসাম প্রদেশের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারতের বিভিন্ন স্থানের মধ্যে কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্কে লোকজনের ভিড় কম হয়।
এই পার্কেই আছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি এক শিংওয়ালা গন্ডার। এর পাশাপাশি সেখানে আরও আছে হাতি, বাঘ, কালো চিতাবাঘ ও হাজারো প্রজাতির পাখি।
তাওয়াং, অরুণাচল প্রদেশ
অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং এলাকার সৌন্দর্য রীতিমতো চোখ ধাঁধাঁনো। সেই তুলনায় সেখানকার পর্যটকের উপস্থিতি এখনো ব্যাপক নয়। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে এই প্রদেশে প্রবেশের ব্যাপারে বিধি-নিষেধ।
Advertisement
সেখানে পৌঁছাতে পর্যটকদের একটি বিশেষ ‘ইনার লাইন পারমিট’ নিতে হয়। সবকিছুর পর স্থানটিতে পৌঁছেই আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন। সেখানকার অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনার সব ক্লান্তি মুছে দেবে।
চেরাপুঞ্জি ও মাওসিনরাম, মেঘালয়
পর্যটন নগরী ও মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং থেকে প্রায় ৫৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চেরাপুঞ্জি ও মাওসীনরাম বিশ্বের সবচেয়ে আর্দ্র স্থান হিসেবে পরিচিত। রেকর্ডপত্র ঘাটলে জানতে পারবেন, এই দুটি স্থানে প্রতিবছর ৪৫০ ইঞ্চিরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়। চেরাপুঞ্জি ও মাওসীনরামের অসাধারণ সব প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনার চোখে মুগ্ধতার পরশ বুলিয়ে দেবে। জায়গা দুটির পাহাড়গুলোতে আছে বেশ কয়েকটি ট্রেকিং রুট।
মাজুলি, আসাম
মাজুলি হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র নদীর একটি দৃষ্টিনন্দন দ্বীপ। যেখান থেকে ফেরি বোটে চড়ে আসামের যোরহাট নগরীতে যাওয়া যায়। বিপুল পরিমাণ পলিমাটি সরে যাওয়ার কারণে চমৎকার এ দ্বীপটি ক্রমেই ছোট হয়ে যাচ্ছে।
মাজুলি ভ্রমণ করতে হলে আপনাকে হয় একটি মটর বোট রিজার্ভ করতে হবে নতুবা স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে ফেরিতে চড়তে হবে। এই স্থানেও বেশি পর্যটক দেখা যায় না। তাই নিরিবিলি সময় কাটাতে চাইলে যেতে পারেন মাজুলি ভ্রমণে।
শিলং, মেঘালয়
উত্তর-পূর্ব ভারতের এক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি শিলং নগরীও পর্যটকদের কাছে বিশেষভাবে পরিচিত। প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড নামেও পরিচিত এই নগরী। ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্যগুলোর একটি হলো শিলং।
শিলং থেকে একটি কার রিজার্ভ করে কিংবা পাবলিক বাসে করে যেতে পারেন আসামের প্রধান শহর গুয়াহাটিতে। আঁকাবাাঁকা ও সর্পিল রাস্তা আর নজরকাড়া প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনাকে উপহার দেবে এক চমৎকার স্মৃতি।
কোহিমা, নাগাল্যান্ড
আয়েশি ভঙ্গিতে জীবনযাপন ও প্রশান্তিদায়ক অনুভূতির সেরা রূপ দেখতে যেতে পারেন কোহিমায়। সৌন্দর্যের জন্য সুপরিচিত কোহিমা শহর। সেখানকার পাহাড়ি এলাকা সবাইকে মুগ্ধ করে।
কোহিমা হলো বিরল প্রজাতির কিছু পাখির আবাসস্থল। দৃষ্টিনন্দন কিছু লেক ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের সমাধিস্থলের পাশাপাশি আরও কিছু দর্শনীয় স্থান আছে কোহিমায়।
আগরতলা, ত্রিপুরা
ছোট একটি শহরে বসবাসের আনন্দ কেমন তা জানতে হলে আপনাকে ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় যেতে হবে। শহরটি বিভিন্ন প্রাসাদ, মন্দির ও সেগুলোর সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত।
এছাড়া হাতে তৈরি বস্ত্রশিল্প ও বাঁশের তৈরি হস্তশিল্পের জন্যও বিখ্যাত আগরতলা। সেখানকার বাহারি সব স্থানীয় খাবারও বিখ্যাত।
মনিপুর
মনিপুরের আদুরে নাম হলো ‘সুইজারল্যান্ড অব ইন্ডিয়া’। রাজ্যটির অবস্থান উত্তর-পূর্ব ভারতের একেবারে উত্তর-পূর্ব কোণায়।
বন্যপ্রাণি, চিত্তাকর্ষক প্রাকৃতিক দৃশ্য, ভাসমান সব দ্বীপরাজি, স্থানীয় বাসিন্দাদের উষ্ণ আতিথেয়তা সবকিছুই আপনার মনে প্রথম দেখাতে ভালোলাগার অনুভূতি এনে দেবে।
উত্তরে নাগাল্যান্ড, পশ্চিমে আসাম, দক্ষিণে মিজোরাম ও পূর্বে মিয়ানমার দ্বারা বেষ্টিত মনিপুর।
লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও ভ্রমণ লেখক।
জেএমএস/এএসএম