জাগো জবস

প্রথম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে প্রথম হওয়ার গল্প

৪০তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন কাজী ফাইজুল করীম। তিনি ২০১৪ সালে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ভর্তি হন। ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং ২০১৩-২০১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। প্রথম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পুলিশ ক্যাডারে প্রথম হওয়ার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোছা. জেলি খাতুন—

Advertisement

জাগো নিউজ: প্রথমেই আপনার বেড়ে ওঠার গল্প শুনতে চাই—কাজী ফাইজুল করীম: আমার বেড়ে ওঠা কুমিল্লাতেই। একান্নবর্তী পরিবারে বেড়ে ওঠার সুবাদে ছোটবেলা থেকেই সবার আদর-স্নেহ পেয়েছি। কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে ২০১১ সালে বোর্ড স্কলারশিপসহ এসএসসি ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে ২০১৩ সালে বোর্ড স্কলারশিপসহ এইচএসসি পাস করি।

জাগো নিউজ: আপনার পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?কাজী ফাইজুল করীম: আমি ও আমার বড় ভাইয়ের বয়সের পার্থক্য ১৮ মাস। তাই আম্মু দুই ভাইকে একসঙ্গে পড়ানোর জন্য আমাকে চতুর্থ শ্রণিতে না পড়িয়ে তৃতীয় শ্রেণি থেকে সরাসরি পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন। এই অ্যাডভান্স কারিকুলাম মানিয়ে নিতে আমার সময় লেগেছিল। এ ছাড়া পড়াশোনায় তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না।

জাগো নিউজ: বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন কবে থেকে?কাজী ফাইজুল করীম: প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার চাপে আসলে বিসিএস কেন্দ্রিক পড়াশোনার বেশি সুযোগ নেই। ৪ বছরের ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স সম্পন্ন করেই আমি বিসিএসসহ অন্যান্য সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি।

Advertisement

জাগো নিউজ: বিসিএসের জন্য পড়াশোনার রুটিন কী ধরনের ছিল?কাজী ফাইজুল করীম: আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাস্ট সেমিস্টারে; তখনই মনোস্থির করে ফেলেছিলাম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করবো। তাই শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পর একদিনের জন্যও ক্যাম্পাসে বসে থাকিনি। পরদিনই কুমিল্লায় চলে আসি এবং বিসিএসের সিলেবাস ধরে পড়াশোনা শুরু করি। যে কারণে ডিপার্টমেন্ট বা হলের বিদায়ী অনুষ্ঠান, ব্যাচের র্যাগ ডে উপভোগ করার সুযোগ পাইনি।

প্রিলির জন্য সিলেবাস ধরে ধরে প্রতিটি টপিকের উপর বিস্তারিত পড়াশোনা করেছি। শুধু বাজারের প্রচলিত বইয়ের উপর নির্ভর করে প্রস্তুতি নেইনি। টপিক রিলেটেড যতটুকু তথ্য ইন্টারনেট, পত্রিকায় পেয়েছি; সংগ্রহ করেছি। এভাবে বিস্তারিত ও নোট করে পড়াশোনা করার ফলে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিতে অনেক সুবিধা পেয়েছি। এভাবে প্রস্তুতি নিতে অনেক ধৈর্য ও সময়ের প্রয়োজন হলেও বিসিএসের প্রস্তুতিকালীন লাইফস্টাইল এমনভাবে পরিবর্তন করে নিয়েছিলাম, যেন প্রস্তুতিতে সারাদিনের সর্বোচ্চ সময়টুকু দিতে পারি।

জাগো নিউজ: নতুনদের বিসিএস প্রস্তুতি সম্পর্কে আপনার পরামর্শ কী?কাজী ফাইজুল করীম: প্রথম পরামর্শ থাকবে লক্ষ্য স্থির করার বিষয়ে। নিজেকে ৪-৫ বছর পর কোথায় দেখতে চান, সেটা ভেবেই পরিকল্পনা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করা ব্যক্তির কাছে সমাজ ও পরিবারের অনেক প্রত্যাশা থাকে। এ প্রত্যাশা পূরণ করতে গিয়ে বা পূরণে ব্যর্থ হয়ে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েন। যা বিসিএসের প্রস্তুতিতে সবচেয়ে বড় অন্তরায়। তাই আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। সব প্রতিবন্ধকতা দূরে সরিয়ে রেখে বিসিএসের প্রস্তুতিতেই সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে।

জাগো নিউজ: নতুনদের পড়াশোনার বিষয় কী এড়িয়ে যাওয়া উচিত?কাজী ফাইজুল করীম: প্রথমত যে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে হবে, তা হলো ডাইজেস্ট পড়ে প্রিলির প্রস্তুতি নেওয়ার মানসিকতা। দ্বিতীয়ত সিলেবাস না বুঝে এলোমেলো প্রস্তুতি নেওয়া। তৃতীয়ত যেসব বিষয়ে দুর্বলতা আছে; সেসব বিষয়ে বেশি সময় দিতে গিয়ে তুলনামূলক সহজ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব না দেওয়া।

Advertisement

জাগো নিউজ: আপনার বিসিএস যাত্রায় সোশ্যাল মিডিয়া কি কোনোভাবে কাজে এসেছে? কাজী ফাইজুল করীম: আমি সোশ্যাল মিডিয়া ডিঅ্যাক্টিভ করে আইসোলেটেড হয়ে যাইনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়া যেন আমার প্রস্তুতিতে কোনো ইনফ্লুয়েন্স করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থেকেছি। এর বাইরে বিসিএস পড়াশোনার জন্য আলাদা একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ছিল, যেখানে আমি প্রস্তুতির অনেক কিছুই শেয়ার করে রাখতাম। আসলে এটি অনেকটা নোটবুকের মতো কাজ করেছে। জানার প্রয়োজনে কোনো বিষয় খুঁজে পেতেও সোশ্যাল মিডিয়া সহায়ক।

জাগো নিউজ: প্রিলি পাস করার পর লিখিত পরীক্ষার জন্য কীভাবে প্রস্তুত হওয়া প্রয়োজন?কাজী ফাইজুল করীম: অনেকেই প্রিলি পাস হবে কি হবে না, এ কনফিউশনে প্রিলির রেজাল্টের আগ পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষার জন্য তেমন কোনো প্রস্তুতি না নিয়ে বসে থাকেন। এটা না করে প্রিলি দেওয়ার পর পরই লিখিতের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। লিখিত পরীক্ষার প্রস্ততি হতে হবে সাজানো ও পরিকল্পনা মাফিক। লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস অনুযায়ী প্রতিদিনের সময় ভাগ করে নিয়ে প্রতিটা টপিকের উপর তথ্যনির্ভর প্রস্তুতি নিতে হবে।

এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে পর্যাপ্ত ডাটা, কোটেশন, ম্যাপ ব্যবহার করতে হবে। হাতের লেখা স্পষ্ট রাখতে হবে, যেন পরীক্ষক খাতা কাটতে গিয়ে বিরক্ত না হন। ম্যাথ ও মেন্টাল অ্যাবিলিটির জন্য বিগত বছরের প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করে বেশি চর্চা করা আবশ্যক। বাংলা ১ম ও ২য় পত্রে ভালো প্রস্তুতির জন্য কিছু সহায়ক বই ব্যবহার করা যেতে পারে। যা আপনার প্রস্তুতিকে করবে আরও শাণিত। ইংরেজিতে প্যাসেজ মনোযোগ দিয়ে কয়েকবার পড়তে হবে। যেন প্যাসেজের মূলভাব আপনার মাথায় গেথে যায়। গ্রামার ও ভোকাব্যুলারির উপর জোর দিতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় কোনো নাম্বার ছেড়ে আসা যাবে না। তাই পরীক্ষার হলে টাইম ম্যানেজমেন্ট অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

জাগো নিউজ: ভাইবার প্রস্তুতি সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা জানতে চাই—কাজী ফাইজুল করীম: ভাইভার জন্য আসলে বেশি কিছু পড়ে লাভ নেই। ভাইভা বোর্ডকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। নার্ভাস হয়ে যাওয়া ও অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দুটিই ভাইভা বোর্ডে ক্ষতিকর।তাই নিজের পালস নিয়ন্ত্রণ করে বোর্ডকে কনভিন্স করে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। ভাইভা বোর্ডে আপনার উত্তর থেকে পুনরায় প্রশ্ন করা হয়। তাই উত্তর দেওয়ার সময় সতর্ক থাকতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্যারিশমেটিক নেতৃত্বে বাংলাদেশের সফল অগ্রযাত্রা সম্পর্কে পড়াশোনা করতে হবে।

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন জয়ের এ যাত্রায় কার অনুপ্রেরণা বেশি পেয়েছেন?কাজী ফাইজুল করীম: সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছেন আমার বাবা ও চাচারা। এ ছাড়া আমার মা সার্বক্ষণিক আমার পাশে ছিলেন। ভাইভার প্রস্তুতিতে আমার স্ত্রী আমাকে সাহায্য করেছেন।

জাগো নিউজ: প্রথম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম হওয়ার অনুভূতি কেমন?কাজী ফাইজুল করীম: যদি মন থেকে বলি, আমার বিশ্বাস ছিল আমি পুলিশ ক্যাডারে প্রথম হবো। প্রস্তুতির শুরু থেকেই আমি নামাজ শেষে মহান আল্লাহর কাছে এই দোয়া করতাম।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?কাজী ফাইজুল করীম: আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা একজন সৎ, জনগণ-বান্ধব ও মানবিক পুলিশ অফিসার হওয়া।জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাঁর সুযোগ্য কন্যা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাওয়া।

এসইউ/এএসএম