দেশজুড়ে

ফিলিং স্টেশন স্থাপনে নিয়ম মানছে না প্রশাসন

কুড়িগ্রামে সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই একের পর এক নতুন ফিলিং স্টেশন বা সার্ভিস স্টেশন স্থাপন করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজস করে নূন্যতম দূরত্ব বা যৌক্তিকতা বিবেচনা না করেই স্থাপন করছে স্টেশনগুলো। ক্ষেত্র বিশেষে মানা হচ্ছে না আন্তর্জাতিক সীমান্তের শূন্য লাইনের বিধিও। অপরদিকে বিস্ফোরক অধিদফতর সরেজমিন কোনো যাচাই-বাছাই না করে বৈদ্যুতিক লাইনের অভ্যন্তরে ফিলিং স্টেশন স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে। যেন দেখার কেউ নেই। ছোট্ট একটি জেলা শহরে বস্তির মতো গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট কিভাবে দেয়া হল তা নিয়ে জনমনে চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা। বিপিসির কর্মকর্তারা মন্ত্রণালয়ের দোহাই দিয়ে নিজেদের আড়াল করার চেষ্টা করছেন।বিভিন্ন সূত্রে থেকে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলায় এখন ২৩টি পেট্রল পাম্প রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে রয়েছে ১০টি। এছাড়াও ইউনিয়ন পর্যায়ে এজেন্ট, সাব এজেন্ট রয়েছে শতাধিক। এর বাইরেও উপজেলা পর্যায়ে নতুন করে পাম্পের প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে ৭ থেকে ৮টি। জেলায় প্রস্তাবিত এবং নির্মিত এসব ফিলিং স্টেশন নির্মাণে মানা হয়নি কোন সরকারি নিয়মনীতি। বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এর ২০১৪ সালের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী যে কোন জেলা শহরে রাস্তার একই পার্শ্বে একটি ফিলিং স্টেশন থেকে আরেকটির দূরত্ব ২ কি.মি. থেকে ৪ কি.মি. নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। কুড়িগ্রাম জিরো পয়েন্ট হতে দাশের হাট বাজার প্রায় ৬কি.মি. দূরত্বে অনুমোদন দেয়া হয়েছে ৬টি ফিলিং স্টেশনের। এছাড়াও উপজেলাগুলোতেও একইভাবে বিধি ভঙ্গ করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে প্রস্তাবিত ফিলিং স্টেশন স্থাপনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সুপারিশ ও প্রতিবেদন প্রদানের বিধান রয়েছে। এরপরও কিভাবে এসব ফিলিং স্টেশন স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে তা এখনও পরিষ্কার নয় জেলার মানুষের কাছে।বিধিমালায় আন্তর্জাতিক সীমান্তের শূন্য লাইন হতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৮ কিলোমিটারের মধ্যে ফিলিং স্টেশন স্থাপন না করার নির্দেশনা রয়েছে। অথচ সরকারি বিধি ভঙ্গ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বাগভান্ডার সীমান্ত এলাকায় ৬ কিলোমিটারের মধ্যে তা স্থাপনের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে। এ নিয়ে ডিলারদের মধ্যে চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। সীমান্ত উপজেলাগুলোতে বর্তমানে ৫টি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারীতে ৩টি, ফুলবাড়ীতে ১টি এবং রৌমারীতে ১টি। এছাড়াও ভুরুঙ্গামারীতে ২টি ফিলিং স্টেশনের প্রস্তাবনা রয়েছে। সরকার এই খাতে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ব্যয় করলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে সেক্টরটি বিতর্কিত হচ্ছে। বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনের ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশিরভাগ ফিলিং স্টেশনের আকার-আয়তন এবং অবস্থান বিষয়ে বিধি মানা হয় না। নেই পর্যাপ্ত সার্ভিসিং সুবিধা। টয়লেট সুবিধা অপ্রতুল। অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা কিংবা মানসম্পন্ন ডিজিটাল ডিসপেন্সিং ও সাইট-ফ্লো ইউনিট, টেলিফোন সংযোগের অভাব। বেশিরভাগ ফিলিং স্টেশনের প্রাঙ্গণের পরিমাপ ত্রিশ মিটারের কম। বৈদ্যুতিক লাইন থেকে নিরাপদ দূরত্বের কথা বলা হলেও ঝুকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক লাইনের ভিতরে স্থাপন করা হয়েছে বেশিরভাগ ফিলিং স্টেশন। নেয়া হয়নি কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ফলে দুর্ঘটনা হলে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।এ বিষয়ে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বিস্ফোরক পরিদফতরের পরিদর্শক ড. আসাদুল ইসলাম জানান, ঝুকিপূর্ণ থাকলে দুর্ঘটনা এড়াতে লাইনের নিচ দিয়ে নেটিং বা খাঁচা দেয়া হয়। আমরা নিরাপত্তার স্বার্থে বৈদ্যুতিক লাইনের নিচে ফিলিং স্টেশনের লাইসেন্স দেয় না। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বেশিরভাগ ফিলিং স্টেশনে এই নিয়ম মানা হয়নি।জেলা ফিলিং স্টেশন ডিলার সমিতির সভাপতি পনির উদ্দিন আহমদ জানান, কুড়িগ্রামে ২৩টি ফিলিং স্টেশন থাকার পরও সরকারি নিয়ম নীতিকে পাস কাটিয়ে আরও ৭/৮টির প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক সীমান্ত নীতিমালাও ভঙ্গ করে সীমান্তের শূন্য লাইনে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীসহ একাধিক স্টেশনের অনুমতি দেয়ার চেষ্টা চলছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিসির এক কর্মকর্তা জানান, তদবির এবং বিশেষ চাপের কারণে নীতিমালার মধ্যে না পড়লেও কিছু কর্মকর্তার কারণে প্রস্তাবনাগুলো নেয়া হয়। তবে আমাদের সেখানে করার কিছু নেই। আমরা সেগুলো অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে রেফার্ড করি। কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে আন্তর্জাতিক সীমান্ত লাইন নীতিমালা না মেনে পারচু করে একটি ফিলিং স্টেশনের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত মন্ত্রনালয় সেটি অনুমোদন দেয়নি। বিধিমালায় (ঙ) অনুচ্ছেদের সুবিধা নিয়ে মন্ত্রণালয় বিধি ভেঙে অনুমোদন দেয়। এই অনুচ্ছেদটি ক্লিয়ার করলে অনিয়মগুলো দূর করা যাবে।এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন এর ডিরেক্টর মার্কেটিং মীর আলী রেজা জানান, আমরা জেলা প্রশাসন থেকে রিপোর্ট নেই। বিধি মেনেই কাজ করা হয়। ক্ষেত্র বিশেষ সরকার মনে করলে মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।নাজমুল হোসেন/এসএস/এমএস

Advertisement