আন্তর্জাতিক

‘দেউলিয়াত্বেরও নিচে নেমে গেছে শ্রীলঙ্কা, রিজার্ভ ৫ কোটির কম’

কমতে কমতে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন পাঁচ কোটি মার্কিন ডলারেরও নিচে নেমে গেছে। দ্রুততম সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান বাড়াতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে দেশটির সামনে মহাবিপদ অপেক্ষা করছে। বুধবার (৪ মে) লঙ্কান অর্থমন্ত্রী আলি সাবরি দেশটির পার্লামেন্টে এসব কথা বলেছেন। খবর এপির।

Advertisement

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখছিলেন লঙ্কান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, আবশ্যক পণ্যের ঘাটতি মেটাতে প্রয়োজনীয় অর্থায়নসহ আইএমএফের উদ্ধার কর্মসূচি নির্ভর করছে দাতাদের সঙ্গে ঋণ পুনর্গঠনের বিষয়ে আলোচনার ওপর এবং তা বাস্তবায়নে অন্তত ছয় মাস লাগবে।

চরম অর্থসংকটের মুখে বর্তমানে দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে শ্রীলঙ্কা। দেশটি এরই মধ্যে বিদেশি ঋণের কিস্তি প্রদান স্থগিত করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ এই অর্থনৈতিক দুর্দশা শ্রীলঙ্কায় নতুন রাজনৈতিক সংকটও তৈরি করেছে। লঙ্কান জনগণ দেশটির প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছে। পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি হয়েছে গোতাবায়া রাজাপাকসের সরকার।

তেলের জন্য দীর্ঘসময় লাইনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে লঙ্কানদের। ছবি সংগৃহীত

Advertisement

২০২৬ সালের মধ্যে শ্রীলঙ্কাকে বিদেশি ঋণের আড়াই হাজার কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে চলতি বছরই দিতে হবে অন্তত ৭০০ কোটি ডলার। অথচ এই মুহূর্তে দেশটির হাতে রয়েছে মাত্র পাঁচ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪৩০ কোটি টাকা মাত্রা।

লঙ্কান অর্থমন্ত্রীর কথায়, আমাদের সামনে এক ভয়াবহ ঝুঁকি রয়েছে। তিনি বলেছেন, ২০১৯ সালের শেষে শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ ছিল ৭৬০ কোটি ডলার, ২০২০ সালের শেষ নাগাদ তা কমে দাঁড়ায় ৫৭০ কোটি ডলারে। মহামারির মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে বলে জানান সাবরি।

তবে শ্রীলঙ্কার দুর্দশা এরপরও অব্যাহত থাকে। মন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের শেষ নাগাদ রিজার্ভ ৩১০ কোটি ডলারে এবং চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষে তা ১৯০ কোটি ডলারে নেমে আসে।

তবে শ্রীলঙ্কার অবশিষ্ট রিজার্ভের সিংহভাগই ডলার-নির্ভর লেনদেনে ব্যবহারযোগ্য নয়। এর মধ্যে চীন থেকে ১০০ কোটি ডলার সমতুল্য কারেন্সি সোয়াপ সুবিধাও রয়েছে।

Advertisement

বেড়েছে লোডশেডিং, ফের হারিকেনের ব্যবহারে ঝুঁকছে লঙ্কানরা। ছবি সংগৃহীত

এদিকে, আলি সাবরির এই বক্তব্যের পর পার্লামেন্টের সদস্য ড. হর্ষ ডি সিলভা বলেছেন, অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পাঁচ কোটি ডলারের কম হওয়ায় শ্রীলঙ্কা এখন দেউলিয়াত্বের সীমারও নিচে নেমে গেছে। লঙ্কান সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিররের খবরে বলা হয়েছে, রিজার্ভ কমে যাওয়ায় মার্কিন ডলারের বিপরীতে শ্রীলঙ্কান রুপির মান আরও কমে যাবে বলে জানিয়েছেন বিরোধী দলীয় এ নেতা।

তিনি বলেছেন, শ্রীলঙ্কার জন্য ৫০০ কোটি ডলারের ক্রেডিট লাইন অনুমোদন দিয়েছে ভারত। তবে চীন তাদের দেওয়া ঋণের কিস্তি পুনর্গঠনে সম্মতি দেয়নি।

হর্ষ ডি সিলভা বলেন, জানা যায়, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপাকসে জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে ৩০০ কোটি ডলার ঋণের জন্য চিঠি দিয়েছেন। শুনেছি, তিনি এতে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। এই মুহূর্তে এটিই আমাদের একমাত্র আশা। এই ঋণ পেতে ব্যর্থ হলে আমাদের ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।

কেএএ/জিকেএস