দেশজুড়ে

মরুপ্রায় পদ্মার তীরে মানুষের ঢল

রাজশাহীর কোল ঘেঁষে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বয়ে গেছে পদ্মা। সাপ্তাহিক অথবা বাৎসরিক ছুটি কিংবা বছর ঘুরে কোনো উৎসবের আমেজ পুরোটায় যেন পদ্মাপাড়কে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে। রাজশাহীতে ঈদের প্রথম দিন ছিল ঝড়-বৃষ্টির। যার কারণে অনেকেই ছিলেন ঘরবন্দি। তবে ঈদের দ্বিতীয় দিনে অনুকূল আবহাওয়ায় পদ্মাপাড়ে দেখা গেছে জনস্রোত।

Advertisement

সম্প্রতি রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) কর্তৃক পদ্মাপাড়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি কার্যক্রম হাতে নেওয়ার পর নৈসর্গিক পদ্মাপাড় আরও মনরোম হয়ে উঠেছে। নগরীর মধ্যভাগে বড়কুঠি, লালনশাহ মুক্তমঞ্চ, পঞ্চবটি, আই-বাঁধ, টি-বাঁধ, শহীদ মিনার পদ্মাপাড় থেকে শুরু করে পশ্চিমে কোর্ট বুলনপুর, সাতবাড়িয়া থেকে শুরু করে পূর্বে জাহাজঘাট ফুলবাড়ী এলাকায় বিনোদন প্রেমী মানুষের জনস্রোত দেখা গেছে।

বুধবার (৪ মে) পদ্মা পাড়ে সকালে তেমন ভিড় না দেখা গেলেও দুপুরের পর থেকেই রাজশাহীর পদ্মা পাড়গুলো মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। মরুপ্রায় পদ্মায় স্রোতের দেখা না মিললেও পদ্মার তীরবর্তী বসার স্থান ও বালুচরের নির্মল বাতাস ও নৈসর্গিক পরিবেশে দেখা মিলেছে মানুষের ঢল। এ জনস্রোত লেগে থাকে প্রায় রাত অবধি।

মানুষের বিনোদনের মাত্রা বাড়িয়েছে লালন শাহ মুক্তমঞ্চের পাশ ঘেঁষে নির্মাণ করা সুদৃশ্য ওয়াকওয়ে। উন্নতমানের এ সড়ক দিয়ে সহজেই বিনোদন পিপাসুরা হেঁটে পদ্মার অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে পারছেন। আবার আশপাশে চা, ফুচকা, চটপটি, এবং হরেক রকমের ফাস্টফুডের দোকান মাত্রা বাড়িয়েছে ঈদ আনন্দের। ঈদের দ্বিতীয় দিনে ছোট বড় থেকে শুরু করে সব ধরনের মানুষের উপস্থিতিই মিলেছে এখানে। তবে এদের অধিকাংশই তরুণ।

Advertisement

বিনোদন প্রেমীদের সারাদিন হৈ চৈ, আনন্দে মাতামাতি, ছোট ছোট নৌকায় পাড়ি চরভ্রমণ। এছাড়াও পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে ব্যবসা-বাণিজ্যও এখন জমজমাট। মানুষের আনাগোনায় মুখর নদীর পাড়। তাই গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক বাণিজ্যকেন্দ্র।

নগরীর কোর্ট বুলনপুর এলাকায় ‘আড্ডা’ সেখান থেকে পেরিয়ে সামান্য এগোলেই চোখে পড়ে ‘টি-বাঁধ’। তার পাশেই ছোট পরিসরে পার্ক তৈরি করেছে বিজিবি। এখানে নির্মাণ করা হয়েছে ‘বহিঃনোঙ্গর’ আর ‘নোঙ্গর’। হাল্কা সব ধরনের খাবারের আয়োজন রয়েছে এখানে। সেইসঙ্গে ছোট ছোট আমবাগানের টেবিল পেতে ফাঁকে ফাঁকে বসার স্থানও করেছে তারা। এখানে বসে অনায়াসে নদীর সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়।

এখানে নদী ভ্রমণে আগ্রহীদের জন্য সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে ‘গাঙচিল’ নামে ছোট আকারের নৌকা। রাতের আঁধারে রঙিন নিয়ন আলোয় আরও ফুটে ওঠে এ স্পটের চেহারা।

ঈদের দ্বিতীয় দিনে ব্যবসার খাতা গুটিয়ে স্বপরিবার নিয়ে পদ্মাপাড়ের আনন্দ উপভোগে এসেছেন নগরীর অক্ট্রয় মোড়ের ঠিকাদার আবু হেনা মোস্তফা জামান।

Advertisement

তিনি বলেন, সারাবছর কাজের মধ্যে যায় সময়। পরিবার নিয়ে সময় করে বের হওয়া হয় না। এ কারণে ঈদের দিনে পদ্মাপাড়ে পরিবার নিয়ে বের হয়েছি একটু বিনোদনের জন্য।

রাজশাহী জেলার মোহনপুরের বাসিন্দা মো. আমানুল্লাহ আমান। নগরীতে বেসরকারি একটি নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী এ যুবক। পদ্মাপাড়ে আড্ডায় মশগুল তিনি।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজশাহীবাসীর সবচেয়ে বড় বিনোদনের জায়গা পদ্মাপাড়। ঈদের প্রথম দিনে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঝড়-বৃষ্টিতেই কেটেছে। পরে আর বের হওয়া হয়নি। আজ আবহাওয়া অনেক সুন্দর। ঝড়-বৃষ্টি নেই। আর তাই বন্ধুদের সঙ্গে লালন শাহ মুক্তমঞ্চে এসেছি আড্ডা দিতে।

ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নগরীর সাধুরমোড় নিবাসী কাজী রাসেল। নাড়ীর টানে বাড়ি ফিরেছেন। তিনিও পদ্মাপাড়ে বন্ধুদের সঙ্গে মেতেছেন আড্ডায়।

জাগো নিউজের প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ঢাকার বদ্ধ জীবন থেকে অনেক সংগ্রাম করে ফিরেছি শৈশবের মাতৃভূমিতে। ছোটবেলা থেকেই ঈদের আনন্দ পদ্মাপাড়ে ঘুড়ে বেড়িয়েই কাটে। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। গতকাল পরিবারকে সময় দিয়ে আজ এসেছি পদ্মাপাড়ে প্রকৃতির নৈস্বর্গিক নিরমলতা উপভোগ করতে।

তবে পদ্মা পাড়ে মানুষের ঢল নিয়ে চিন্তিত রাজশাহীর প্রশাসন। হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে যেন ছিনতাই, মারামারি কিংবা কোনো প্রকারের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে দেখা গেছে যার যার অবস্থানে দায়িত্ব পালনে।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে নগরীতে আরএমপির ৩৭টি টিম কাজ করছে। এছাড়াও তিন স্তরের গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নগরীতে নিরাপত্তা ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সার্বক্ষণিকভাবে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আশা করছি তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও আমরা সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সমাধান করতে পারবো।

এফএ/জেআইএম