আন্তর্জাতিক

আল-আকসায় ভাঙন ধরাতে চায় ইসরায়েল

পশ্চিম তীরের দক্ষিণাঞ্চলীয় হেবরনে ১৯৯০ সালে ইব্রাহিমি মসজিদে যা ঘটেছিল আল-আকসা মসজিদেরও একই পরিণতি চায় ইসরায়েল। এমনটাই আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ফিলিস্তিনিরা। সম্প্রতি আল-আকসা মসজিদকে ঘিরে ফিলিস্তিনিদের ওপর বার বার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।

Advertisement

পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসায় সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ১৫২ জন। বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসে আল-আকসায় আধিপত্য আরও বাড়িয়ে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী। গত কয়েক মাস ধরে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে বন্দুক হামলা বেড়ে গেছে।

পরপর বেশ কয়েকটি হামলার জের ধরে ইসরায়েল অধিকৃত ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরসহ পূর্ব জেরুজালেমের বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়ে ধরপাকড় করা হয় সাধারণ ফিলিস্তিনিদের।

জেরুজালেম হলো ইহুদি ও ফিলিস্তিনিদের একশ বছরের সহিংসতার ইতিহাসের সাক্ষী। গত বছরও গাজায় ১১ দিন ধরে হামলা চালানো হয়। এই হামলায় ৬৫ শিশুসহ ২৩২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়। একই সঙ্গে ইসরায়েলের দুই শিশুসহ ১২ জন নিহত হয়।

Advertisement

কেন আল-আকসাকে ঘিরে বাড়ছে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি দ্বন্দ্ব কিংবা মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে আল-আকসা? এই ইস্যু নিয়ে সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

মুসলিম ও ইহুদি, দুই ধর্মাবলম্বীর কাছেই গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত আল-আকসা মসজিদ। দুই ধর্মাবলম্বীই আল-আকসাকে নিজেদের বলে দাবি করে থাকেন।

মুসলিমদের জন্য তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান এটি। মসজিদ চত্বরটি মুসলিমদের কাছে হারাম-আল-শরীফ হিসেবেও পরিচিত। অন্যদিকে, ইহুদি ধর্মাবলম্বীরা আল-আকসা মসজিদ ও তার আশপাশের অংশকে ‘টেম্পল মাউন্ট’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন এবং তাদের জন্য এটি বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্র স্থান।

১৯৬৭ সালে ছয় দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ আল-আকসা মসজিদ ঘিরে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছিল। ইসরায়েল এই যুদ্ধে জয়ী হয়। তারা গাজা ও সিনাই উপদ্বীপ দখল করে নেয় যা ১৯৪৮ সাল থেকে মিশরের নিয়ন্ত্রণে ছিল। অন্যদিকে, পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরও তারা দখল করে নেয় জর্ডানের কাছ থেকে।

Advertisement

যুদ্ধের আগ পর্যন্ত জর্ডানের ওয়াকফ মন্ত্রণালয় এর তত্ত্বাবধায়ক ছিল। এরপর ইসলামি ওয়াকফ ট্রাস্টের হাতে মসজিদের ভার প্রদান করা হয়। শুধু মুসলমানরাই আল-আকসার ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন। তবে ইহুদিরা পশ্চিম দেওয়ালে প্রার্থনার জন্য অংশ নেন।

পুরো নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকে ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে ইসরায়েলিরা ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল, জর্ডান এবং মুসলিম ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা সম্মত হওয়া এই ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করেছে এবং আগ্রাসন চালাচ্ছে। অপরদিকে, সবার জন্য এই পবিত্র স্থানটি উন্মুক্ত করার দাবি জানাচ্ছে ইসরায়েলিরা। এতেই শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব।

সম্প্রতি জর্ডানের বাদশা আব্দুল্লাহ ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছেন। এই অঞ্চলের শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। ফিলিস্তিনিদের শঙ্কা, ইসরায়েলি বাহিনী আগ্রাসন চালিয়ে স্থানীয় মুসলিম ও ইহুদিদের মধ্যে বিভক্তি ও দ্বন্দ্ব চায়। যেটি ১৯৯০ সালে ঘটানো হয়েছিল হেবরনের ইব্রাহিমি মসজিদে।

কিন্তু সেটি যেন না ঘটে সেকারণে সোচ্চার ফিলিস্তিনি মুসলিমরা। অন্যদিকে, ইহুদিদের ওই এলাকায় আরও ধর্মীয় কার্যক্রম জোরালোভাবে পালনের কৌশল খাটাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে দুপক্ষের এ দ্বন্দ্বে আল–আকসা মসজিদ নিয়ে সংকট নিরসনে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে জর্ডান। পবিত্র রমজান মাস শেষে এ আলোচনায় বসতে চায় তারা।

সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড, এএফপি

এসএনআর/টিটিএন/এমকেআর