‘বিদায় বিষাক্ত নগরী, এবার বাড়ি যাই’- গত ৩০ এপ্রিল ঝিনাইদহ যাওয়ার পথে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন ঢাকার বাসিন্দা তৌহিদুজ্জামান। কর্মসূত্রে বহু বছর রাজধানীতে রয়েছেন তিনি। কাজের প্রয়োজনে প্রতিদিনই ছুটতে হয় শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে পা ফেলানোই যেখানে দায়, সেখানে রোজ ঠা ঠা রোদের ভেতর ঘুরে বেড়ানো কতটা কষ্টের তৌহিদুজ্জামান তা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারেন। তার ওপর রয়েছে বায়ুদূষণের যন্ত্রণা। এ কারণে ঢাকা ছেড়ে পালাতেই পারলেই যেন প্রাণ বাঁচে তার। আর সেই সুযোগটা করে দেয় দুই ঈদ।
Advertisement
তৌহিদুজ্জামানের মতো পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে এ বছরও ঢাকা ছেড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। তাদের বিদায়ে ঢাকার রাস্তা যেমন ফাঁকা, তেমনি কমেছে অস্বস্তিকর বায়ুদূষণও।
সোমবার (২ মে) সন্ধ্যা ৬টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স প্রজেক্টের (একিউআইসিএন) হিসাবে ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা দেখা গেছে ৯৫ পিএম২.৫, যা সহনীয় বলেই বিবেচনা করা হয়।
এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআই সূচক অনুসারে, বায়ুদূষণের মাত্রা ০ থেকে ৫০ পিএম২.৫ হলে সেটি ভালো, ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়, ১০১ থেকে ১৫০ বিশেষ শ্রেণির জন্য অস্বাস্থ্যকর, ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০০-এর বেশি হলে তা মানবস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক বলে বিবেচিত হয়।
Advertisement
কয়েক বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ওপরের দিকে নাম থাকছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার। সাম্প্রতিক এক হিসাবে দেখা গেছে, বছরের পাঁচ মাসই এ শহরের বায়ু ‘অস্বাস্থ্যকর’ থাকে। তবে ঈদ এলে মানুষের ভিড়ের সঙ্গে ঢাকার দূষণও কমে আসে।
চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি তারিখেও বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের দুর্নাম ছিল ঢাকার ঘাড়ে। তবে ২ মে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগের দিন সন্ধ্যায় ৬টার সময় এ তালিকায় ৪৯ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী। সুইস কোম্পানি আইকিউএয়ারের সূচকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। যদিও তাদের হিসাবে ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা ছিল আরও কম, মাত্র ৫৫ পিএম২.৫।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বায়ুদূষণের সুস্পষ্ট চারটি কারণ বের করেছে। প্রথমত, মানহীন গাড়ি থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ কার্বন নিঃসরণ ও যানজটের কারণে তার মাত্রা আরও বেড়ে যাওয়া; দ্বিতীয়ত, নিয়ন্ত্রণহীনভাবে সারা বছর ধরেই নির্মাণকাজ চালানো; তৃতীয়ত, নিয়ন্ত্রণহীনভাবে প্লাস্টিক, চামড়া বা বর্জ্য পোড়ানো। আর শেষ কারণ হচ্ছে পুরো ঢাকাকে ঘিরে অসংখ্য ইটভাটার দূষণ।’
কিন্তু ঈদের সময় রাজধানীতে গাড়ি চলাচল যেমন কমে, তেমনি বন্ধ থাকে বেশিরভাগ নির্মাণকাজ। আর তাতে বায়ুদূষণও কমে আসে বলে মনে করেন আবহাওয়াবিদরা।
Advertisement
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ এবং সড়কে গণপরিবহন ও অন্যান্য যানবাহন ব্যাপক আকারে চলাচল করায় রাজধানীতে বায়ূদূষণ চরম মাত্রায় থাকে। এছাড়া রাতে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো হয়। এসব কারণে ঢাকার বাতাসে দূষণের পরিমাণ থাকে বেশি। তবে ঈদের ছুটিতে রাজধানীতে গণপরিবহন কম চলছে। উন্নয়ন কার্যক্রমও প্রায় বন্ধ থাকায় এখন বায়ুদূষণ বেশ কম।
কেএএ/এমএস