রাজনীতি

মহেশখালীতে আ.লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল চলছে

এক পক্ষের বর্জনের মধ্য দিয়ে চলছে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল। দীর্ঘ এক যুগ পর মহেশখালীর বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ মাঠে মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে সম্মেলন শুরু হয়। বোট থেকে মহেশখালীর গোরকঘাটায় উঠেই কালো পতাকা সংবর্ধনা নিয়ে সম্মেলনে প্রধান অতিথি হয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি। সম্মেলনের উদ্বোধক ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাড. এ কে আহমদ হোসেন। প্রধান বক্তা সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপিসহ বক্তব্য রেখেছেন জেলা পরিষদ প্রশাসক মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, সাবেক সাংসদ অধ্যাপক এথিন রাখাইন, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাড. সিরাজুল মোস্তফা।  সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সভাপতি আনোয়ার পাশা ও উপজেলা চেয়ারম্যান হোছাইন ইব্রাহিম। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মো. শাহজাহান ও মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক। স্থানীয়দের মতে, তৃণমূলের কাছে উপজেলায় আওয়ামী লীগের ত্রাণকর্তা হিসেবে পরিচিতি রয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যান ও যুবলীগ সভাপতির। তাই সুষ্ঠু কাউন্সিল হলে তারাই আগামীর নেতা হিসেবে উঠে আসবেন। হিসাব-নিকাশে এমনটি দেখে অপর দুই প্রার্থী সম্মেলনের ভেন্যু ঠিক করেন দু’জনেরই (এমপি ও উপজেলা আ.লীগ সভাপতির) বাড়ির পাশের নির্জন গ্রামে মহিলা কলেজ মাঠ। সেখানে সম্মেলন হলে এমপি ও অপরজন ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করবেন এমন শঙ্কায় অনেক কাউন্সিলর আগে থেকেই কাউন্সিলে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। ফলে সম্মেলনের প্রধান অতিথি ও জেলা আওয়ামী লীগের কাছে পৃথক আবেদন দিয়ে ভেন্যু পরিবর্তনের অনুরোধ জানিয়েছিলেন সভাপতি প্রার্থী হোছাইন ইব্রাহিম ও সম্পাদক প্রার্থী শাহজাহান। তারা দাবি করেছিলেন দু’প্রার্থীর বাড়ির কিনার থেকে সরিয়ে উপজেলা সদর কিংবা জেলার যেকোন স্থানে সম্মেলনের ভেন্যু করা হোক। সোমবার পর্যন্ত ভেন্যু পরিবর্তনের চেষ্টার কথা জানালেও শেষ মেষ এমপি আশেক ও আনোয়ার পাশার পছন্দের ভেন্যুতেই সম্মেলন আয়োজনে অনড় থাকেন প্রধান অতিথি। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে ভেন্যু পরিবর্তন না করলে প্রহসনের সম্মেলন ও কাউন্সিল বর্জনের ঘোষণা দেন প্রার্থী হোছাইন ইব্রাহিম ও শাহজাহান। সোমবার রাত ১০টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে কক্সবাজার শহরে এ ঘোষণা দেন তারা।   এতেও পিছপা হননি সম্মেলনের আয়োজকরা। এর প্রতিবাদে সম্মেলনে আসা অতিথিদের গোরকঘাটা এলাকায় কালো পতাকা প্রদর্শন করেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মী নারী-পুরুষ। এ চিত্র সত্যি বেদনাদায়ক উল্লেখ করে সম্মেলনে বক্তব্য দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। কিন্তু অপর সভাপতি প্রার্থী আনোয়ার পাশা সম্মেলন বর্জনকে অশোভন উল্লেখ করে বলেন, তারা (অপর দু’প্রার্থী) সম্মেলন বর্জন করেননি কাউন্সিলররাই তাদের বর্জন করেছেন। তাকে সমর্থন দিয়ে দু’প্রার্থীর সম্মেলন বর্জনের বিষয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বীর বাহাদুর এমপি বলেন, এ সম্মেলনের খবর শেখ হাসিনা জানেন। বিচারটা আমি মানি। কিন্তু তালগাছের গোড়াটা আমার এটা তো হয় না। কারা আসলো আর কারা আসলো না তা দেখা আমাদের কাজ নয়। দায়িত্ব পালনটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। স্থানীয় সাংসদ আশেক উল­াহ রফিকের প্রশংসা করে মহেশখালীবাসীর উদ্দেশ্যে বীর বাহাদুর বলেন, একটি ফুল ফুটতে দিন। এ আসনে এখন সরকার দলীয় সাংসদ রয়েছে। তার মাধ্যমেই দ্বীপবাসী শিগগিরই মহেশখালী-কক্সবাজার ফেরি পাবেন। প্রধান অতিথির এ বক্তব্য সম্মেলন বর্জন করা দুই প্রার্থীর পূর্ব আশঙ্কাই প্রমাণিত হলো বলে মনে করেন রাজনৈতিক বোদ্ধামহল। প্রধান অতিথির বক্তব্যে পক্ষপাতমূলক আচরণই ফুঠে উঠেছে বলে দাবি তাদের। কারণ সম্মেলনে এমন ব্যক্তির পক্ষে এরূপ বক্তব্য কাউন্সিলকে প্রভাবিত করবে বলে মনে করছেন তারা এবং ভেন্যু পরিবর্তন না করার বিপরীতে তার (প্রধান অতিথির) বিরুদ্ধে অপর দু’প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেয়ার অভিযোগই করেছিলেন হোছাইন ইব্রাহিম ও শাহজাহান। বেলা দেড়টার দিকে সম্মেলন শেষ করে কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন আয়োজকগণ। উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১৩ বছর পূর্বে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে একে একে ২৭ বার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা দিয়েও রহস্যজনক কারণে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। জেলার সাংগঠনিক উপজেলাসহ বাকি ৯ উপজেলার সম্মেলন হলেও এ উপজেলার কারণে জেলা সম্মেলনও বার বার পিছিয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ২৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার ডেটলাইন বেধে দেয়ার পর প্রথমে ১৬ জানুয়ারি সময় নির্ধারণ করা হলেও তা পাল্টিয়ে আজকের তারিখে মহেশখালী আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা হচ্ছে। সায়ীদ আলমগীর/এসএস/পিআর

Advertisement