যুদ্ধের মতো কঠিন পরিস্থিতিতে সাহসী পদক্ষেপে নেতৃত্ব দেওয়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নাম উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন টাইমে। টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুদ্ধের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির বর্ণনাও করেছেন তিনি।
Advertisement
জেলেনস্কি দাবি- ইউক্রেনে হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রুশ বাহিনী কিয়েভের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। শুধু তাই নয়, তাদের হাত থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যান তিনি।
রাজধানী কিয়েভে প্রেসিডেন্ট ভবনে টাইম ম্যাগাজিনের সাংবাদিক সাইমন শুস্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি রাশিয়ার আগ্রাসন ও পরবর্তী পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করে যাচ্ছেন, তা তুলে ধরেন।
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রুশ সেনারা গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হামলার প্রথম দিনেই প্রায় তাকে ধরে ফেলেছিল। যদিও প্রথম কয়েক ঘণ্টার স্মৃতি অনেকটাই অস্পষ্ট। তারপরও ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরের আগের মুহূর্তটি তার স্পষ্ট মনে আছে।
Advertisement
হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রুশ সেনাদের হাতে কিয়েভের পতন নিশ্চিত হতে যাচ্ছে, এমন ধারণা থাকলেও যুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটাই মোড় নিয়েছে ভিন্ন দিকে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির সাহসী পদক্ষেপে যুদ্ধ গড়িয়েছে তৃতীয় মাসে।
কিয়েভে হামলার পর যুদ্ধ পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, যুক্তরাষ্ট্র দেশ ছাড়তে জেলেনস্কির জন্য হেলিকপ্টার পাঠানোরও প্রস্তাব দেয়। কিন্তু জেলেনস্কি তা প্রত্যাখ্যান করে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। শুধু তাই নয় প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। সে সময় যুদ্ধ পরিস্থিতি গোটা বিশ্বকে জানিয়ে দিতে জেলেনস্কি বেছে নেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রাম।
সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেন, মানুষ যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখেছে ইনস্টাগ্রামে।
রুশ সেনাদের বোমাবর্ষণ শুরু হওয়ার পর জেলেনস্কি ও তার স্ত্রী ওলেনা জেলেনস্কি তাদের ১৭ বছর বয়সী ও ৯ বছর বয়সী দুই ছেলে-মেয়েকে বাড়ি থেকে পালানোর প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন।
Advertisement
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, আমরা তাদের ঘুম থেকে উঠতে বললাম। যখন সেখানে তীব্র শব্দ শোনা যাচ্ছে, বিস্ফোরণ ঘটছিল।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী তখন এ কঠিন সময়ে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে জানায়, রাশিয়ার স্ট্রাইক টিম তাকে হত্যা কিংবা আটক করতে প্লেনে করে কিয়েভে নেমেছে।
ইউক্রেন সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ অ্যান্ডরি ইয়ারমাক টাইম ম্যগাজিনকে বলেন, ওই রাতের আগে এ ধরনের ঘটনা কেবল আমরা সিনেমাতেই দেখেছি।
আক্রমণের প্রথম দিন রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি কোয়ার্টারের চারপাশে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। ভবনের নিরাপত্তারক্ষীরা ভেতরের বাতি বন্ধ করে দেন এবং জেলেনস্কি ও তার ডজনখানেক সাহায্যকারীর জন্য বুলেটপ্রুফ ভেস্ট ও অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে প্রস্তুত হতে বলেন। মাত্র যে ক’জন সেনা কর্মকর্তা এ ধরনের অস্ত্র চালাতে পারতেন, তাদের একজন ওলেস্কি আরেস্তোভিচ। ইউক্রেন সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন, ওই সময় বাড়িটি পাগলাগারদে পরিণত হয়েছিল। সবাই ছিলেন অস্ত্রসজ্জিত।
টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়ার সেনারা দুই বার প্রেসিডেন্ট ভবনের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। জেলেনস্কির পরিবার তখনও ভেতরেই ছিল। সে সময় জেলেনস্কি নিজের ফোনে একটি ভিডিওবার্তা রেকর্ড করেন এবং পাঠিয়ে দেন সর্বত্র।
সাক্ষাৎকারে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতে কী ভূমিকা পালন করতে হয়, তা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছিলাম।
তিনি বলেন, ‘আপনি বুঝতে পারছেন, তারা আপনাকে অনুসরণ করছে। আপনি অনুকরণীয়, আপনাকে এমন আচরণ করতে হবে, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে যা একজনকে করতে হয়।’
সূত্র: গার্ডিয়ান, এনডিটিভি
এসএনআর/এমএস