আজ ২৮ তারাবি। তারাবি নামাজ নারী-পুরুষ সবার জন্য সুন্নাত। তারাবি-তাহাজ্জুদ মানুষের গুনাহ মাফের উপায়। ইতিমধ্যে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে ২৭ তারাবি সম্পন্ন হয়েছে। আজ থেকে যে যার মতো করে তারাবি পড়বেন। রমজান মাসের ইশার নামাজের পর এ নামাজ পড়তে হয়। শাওয়ালের চাঁদ দেখার আগ পর্যন্ত তারাবি ও তাহাজ্জুদ হলো রোজাদারের গুনাহ মাফের অন্যতম উপায়।
Advertisement
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এক কিংবা দুইদিন পড়া যাবে তারাবি। ২৯ রমজান চাঁদ দেখা গেলে আর তারাবি পড়তে হবে না। হাদিসের পরিভাষায় এটি সালাতুল কেয়াম বলা হয়। তারাবি ছাড়াও তাহাজ্জুদ নামাজও হাদিসের অন্তর্ভূক্ত। হাদিসে পাকে এসেছে-হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِযে ব্যক্তি রমজানে ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে সালাতুল কেয়াম (তারাবি-তাহাজ্জুদ) পড়ে; আল্লাহ তাআলা তার বিগত জীবনের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন।' (বুখারি ও মুসলিম)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ তাআলা ওই বান্দার বিগত ও আগামী জীবনের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন।' (বুখারি ও মুসলিম)
আগামী গুনাহ সম্পর্কে হাদিসের দিকনির্দেশনা হলো- আল্লাহ তাআলা ওই বান্দাকে গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখেন এবং গুনাহের কাজ থেকে দূরে রাখেন। এ কারণেই তারাবি-তাহাজ্জুদের প্রতি গুরুত্বারোপ করে নবিজী ঘোষণা করেন-إنَّ الله فَرَضَ عَلَيْكُم صِيَامَ رَمَضَانَ وَسَنَنْتُ لَكُمْ قِيَامَهُ، فَمَنْ صَامَهُ وَقَامَهُ إيْمَاناً وَاِحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِআল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর রমজানের রোজা ফরজ করেছেন আর আমি তোমাদের জন্য রমজানের সালাতুল কেয়ামকে (তারাবি-তাহাজ্জুদ) সুন্নাত করেছি। যে রমজান মাসে ঈমান ও সওয়াবের নিয়তে রোজা রাখে এবং সালাতুল কেয়াম আদায় করে তার বিগত জীবনের গুনাহ কআ করে দেওয়া হয়।' (বুখারি ও মুসলিম)
Advertisement
হাদিসের অন্য বর্ণনায় এসেছে, 'তারা সদ্য নবজাত শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়।' (নাসাঈ)
রোজাদার বান্দা রাতে কম ঘুমায়। ইশার পর যেমন তারা তারাবি পড়ে আবার শেষ রাতেও তারা তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়। আল্লাহ তআলা এসব আমলকারীকে উদ্দেশ্য করে কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করেছেন- کَانُوۡا قَلِیۡلًا مِّنَ الَّیۡلِ مَا یَهۡجَعُوۡنَ - وَ بِالۡاَسۡحَارِ هُمۡ یَسۡتَغۡفِرُوۡنَ'তারা রাতে কমই ঘুমায় এবং ভোর রাতে তারা আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফ চায়।' (সুরা যারিয়াত : আয়াত ১৭-১৮)
সুতরাং রোজাদার বান্দার উচিত বাকি রোজায় তারাবি পড়ার পাশাপাশি রোজার পরে বছরব্যাপী নফল রোজা রাখার সময় ইশার নামাজের পর নফল নামাজ এবং শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। কোরআন-সুন্নাহর উপর আমল করা।
দুনিয়া ও পরকালের সব সফলতায় আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। বিশেষ করে সব সময় আল্লাহর কাছে ছোট্ট একটি দোয়ার মাধ্যমে সফলতা কামনা করা জরুরি। হাদিসে পাকে এসেছে-হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন-اَللَّهُمَّ اِنِّى أَسْألُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَىউচ্চারণ : 'আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা; ওয়াত তুক্বা; ওয়াল আ’ফাফা; ওয়াল গেনা।'অর্থ : হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে হেদায়েত কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা পরহেজগারি কামনা করি এবং আপনার কাছে সুস্থতা তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ তথা সামর্থ্য কামনা করি। (মুসলিম, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমদ)
Advertisement
মনে রাখতে হবেআখেরাতের সম্পদ সংগ্রহের স্থান দুনিয়া। আর এ দুনিয়ায় ইবাদত কবুলের জন্য শর্ত হলো সঠিক পথে জীবন পরিচালনা করা। তাই দুনিয়া ও পরকালের জীবনকে সুন্দরভাবে সাজাতে প্রয়োজন- হেদায়েত লাভ, আল্লাহর ভয় অর্জন, সুস্থ দেহ ও মন, নৈতিক পবিত্রতা এবং স্বচ্ছলতা।
তারাবি-তাহাজ্জুদের মাধ্যমে যেমন গুনাহ মাফ সহজ হয়; তেমনি পরকালের মুক্তিও হবে সহজ। কারণ আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া বান্দার কোনো চাওয়াই পূর্ণ হতে পারে না। তাই তারাবি-তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার মাধ্যমে হাদিসে ঘোষিত দোয়ায় আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার বিকল্প নেই।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তারাবি-তাহাজ্জুদ পড়ার পাশাপাশি ইবাদত-বন্দেগি ও তার , হুকুম-আহকাম পালন করার তাওফিক দান করুন। তারাবি-তাহজ্জুদকে গুনাহ মাফের উপায় হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস