ভ্রমণ

যাত্রাপথে বমি হয় কেন? প্রতিরোধে যা করবেন

ডা. রিফাত আল মাজিদ

Advertisement

গাড়িতে চড়লে অনেকেরই মাথা ঘোরে ও বমি হয়। এ সমস্যার কারণে কোথাও ভ্রমণকালে গাড়িতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যাকে মূলত মেডিকেলের ভাষায় বলা হয় ‘মোশন সিকনেস’। এ ধরনের সমস্যা অনেকেই এড়িয়ে যান। ফলে দীর্ঘদিন এরকম সমস্যা নিয়েই অনেকেই যাতায়াত করেন। এ কারণে কেউ কেউ দূরের যাত্রাকে ভয়ও পান।

মোশন সিকনেস কেন হয়?

আসলে গতি ও জড়তার ফলে মস্তিষ্কে সমন্বয়হীনতার বাহনগুলোতে বমির সমস্যা হয়ে থাকে। অন্তঃকর্ণ আমাদের শরীরের গতি ও জড়তার ভারসাম্য রক্ষা করে। যখন কেউ কোনো যানবাহনে চলাফেরা করেন তখন অন্তঃকর্ণ মস্তিষ্কে খবর পাঠায় যে সে গতিশীল।

Advertisement

তবে চোখ বলে ভিন্ন কথা। কারণ তার সামনের বা পাশের মানুষগুলো কিংবা গাড়ির সিটগুলো থাকে স্থির। আমাদের চোখ আর অন্তঃকর্ণের এই সমন্বয়হীনতার কারণেই মোশন সিকনেস হয়। এছাড়া অ্যাসিডিটি, অসুস্থতা কিংবা গাড়ির ধোঁয়া কিংবা বাজে গন্ধের কারণেও গাড়িতে বমি হতে পারে।

মোসন সিকনেস প্রতিরোধে কী করণীয়?

>> যাদের এ সমস্যা আছে তারা গাড়ির উল্টো দিকের সিটে কখনো বসবেন না। কারণ উল্টোদিকে বসলে এতে বমিভাব বেশি হয়। চেষ্টা করবেন গাড়ির সামনের দিকে বসার। কারণ পেছনে বসলে গাড়িকে বেশি গতিশীল মনে হয়, ফলে দ্রুত ভারসাম্য নষ্ট হয় ও মোশন সিকনেস দেখা যায়।

>> চেষ্টা করবেন জানালার পাশে বসার ও জানালা যেন খোলা থাকে। এসি পরিবহন হলে এক্ষেত্রে অবশ্য কিছু করার নেই। আর জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকার চেষ্টা করুন। এতে মোশন সিকনেস হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

Advertisement

>> বমি করার কথা চিন্তা করবেন না এতে বমির ট্রিগার হতে পারে। আপনার পাশে সহযাত্রী থাকলে তার সঙ্গে গল্প করুন, কথা বলুন। তবে খেয়াল রাখবেন অবশ্যই যাত্রাপথে কারো দেওয়া কোন খাবার গ্রহণ করবেন না। এতে বিপদ হতে পারে ও আপনার যাত্রা অনিরাপদ হতে পারে।

>> চোখ বন্ধ রাখতে পারেন কিংবা ঘুমিয়ে পড়ুন। যাত্রার আগের দিন ঠিকমতো ঘুম হওয়া জরুরি। অনেক সময় ঠিকভাবে ঘুম না হওয়ার কারণে মাথাব্যথাও বমির কারণ হতে পারে।

>> গাড়িতে ওঠার আগে হালকা কিছু নাস্তা খেতে পারেন। কখনো খালি পেটে ভ্রমণ করবেন না। আবার ভ্রমণের আগে বেশি খাবার খাবেন না। যাত্রাপথে যত কম খাবেন ততই ভালো।

>> বমি ভাব দূর করার জন্য আদা, লেবু, দারুচিনি, লবঙ্গ, তেঁতুল চাটনি, আচার, কমলা বা টকজাতীয় যে কোনো ফল খেতে পারেন যাত্রাপথে। এতে বমিভাব কাটবে। লেবু পাতাও সাথে রাখা যেতে পারে এর সুঘ্রাণ বমি ভাব দূর করে দিবে। চুইংগাম, লজেন্স খেতে পারেন। এতে বমি ভাব হবে না।

>> বয়স্ক নারী ও গর্ভবতী নারীদেরকে যাত্রাকালে পথে বিশেষ যত্ন রাখতে হবে।

>> বমিরোধে কিছু সাধারণ ওষুধ সঙ্গে রাখতে পারেন। বাজারে জয়ট্রিপ নামে পাওয়া যায়। অথবা অনডেনসেট্রন জাতীয় ওষুধ গাড়িতে ওঠার আগে ও খাবার আগে খেয়ে নিতে পারেন। ডমপেরিডনজাতীয় ওষুধও খাওয়া যেতে পারে। তবে যে কোনো ওষুধ খাওয়ার আগে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিন।

যারা মোশন সিকনেস নিয়ে খুব বেশি সমস্যায় আছেন ও বারবার এ সমস্যায় ভুগছেন তাদের উচিত দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। যাত্রা পথে খোলা খাবার গ্রহণ না করবেন না। সবার ভ্রমণ সুন্দর হোক এই কামনায়।

লেখক: জনস্বাস্থ্য গবেষক ও চিকিৎসক, উপ-পরিচালক, সেন্টার ফর ক্লিনিক্যাল এক্সিলেন্স অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ।

জেএমএস/জিকেএস