মতামত

জুমাতুল বিদা ও ইসলামি শিক্ষা

আজ এ বছরের পবিত্র মাহে রমজানের শেষ জুমা। অনেকে রমজানের এই শেষ জুমাকে অত্যধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। বছরের শ্রেষ্ঠ মাস রমজানের শেষ জুমা হওয়ার কারণে এটি তাদের মতো অনেকের কাছে মর্যাদাশীল। তারা সারা বছরের জুমার নামাজ আদায় না করলেও আজকে অবশ্যই সবার আগে মসজিদে আসবেন। আর এ কারণে আজকে কোন মসজিদ খালি থাকবে না। যারা নিয়মিত জুমায় অংশ নেন তারাও হয়তো নতুন মুসল্লিদের ভিড়ে কষ্ট করে নামাজ আদায় করতে হবে।

Advertisement

এছাড়া আমাদের মাঝে প্রচলিত এই ধারণাও রয়েছে, রমজানের শেষ জুমা যা জুমাতুল বিদা নামে পরিচিত তা আদায় করে নিলে আমরা গত বছরের সমস্ত পাপ থেকে পরিত্রাণ লাভ করব আর সারা বছরের ইবাদতের দায়িত্ব হয়তো এই জুমা পড়ার ফলে পালিত হয়ে যাবে। এমন ধারণা যারা করেন তারা আসলে ভুল করেন। কেননা, এমন কোন শিক্ষা ইসলামের কোথাও পাওয়া যায় না যে, রমজানের শেষ জুমায় যোগদানের ফলে আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য সাধিত হবে।

ইসলামি শরিয়তে জুমাতুল বিদা বলে আলাদা ফজিলতের কিছু নেই। এটি একটি নব আবিষ্কৃত পরিভাষা। এর কোনো বিশেষ ফজিলত কোরআন-হাদিসে পাওয়া যায় না। নবী করিম (সা.), সাহাবায়ে কেরাম কেউ এর আমল করেননি। বরং এটি রমজানের অন্যান্য জুমার মতোই ফজিলত রাখে, এর বাড়তি কোনো ফজিলত প্রমাণিত নয়। রমজানের শেষ জুমা আদায় করলাম আর মুক্তি পেয়ে গেলাম এমন কোন শিক্ষা ইসলামে পাওয়া যায় না।আল্লাহতায়ালার বাণী এবং মহানবীর (সা.) হাদিস থেকে প্রমাণিত যে, কেবল রমজানের শেষ জুমা পড়া মুক্তির কারণ হয় না। তবে আজকের জুমায় যথাযথ প্রস্তুতির সাথে যারা অংশগ্রহণ করে আর আল্লাহর কাছে তওবা করে এই অঙ্গীকার করবে যে, আজ থেকে আমি নিজেকে সর্বপ্রকার পাপ থেকে দূরে রাখবো, আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে জীবন পরিচালনা করব. এ ক্ষেত্রে অবশ্যই এমন লোকদের জন্য রমজানের শেষ জুমার গুরুত্ব রয়েছে। নিজের মাঝে পবিত্র পরিবর্তনের অঙ্গীকার যদি এই জুমায় করা হয়, তবেই এই জুমা কল্যাণে পরিণত হবে।

জুমার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেছেন-‘হে যারা ঈমান এনেছ, জুুমার দিনের একটি অংশে যখন তোমাদেরকে নামাজের জন্য আহ্বান করা হয় তখন দ্রুত আল্লাহতায়ালার স্মরণে নিবদ্ধ হও আর ব্যবসা-বাণিজ্য পরিত্যাগ কর, এটি তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমাদের জ্ঞান থাকে। আর নামাজ শেষ হওয়ার পর পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর কৃপারাজির মধ্য থেকে কিছু সন্ধান কর আর অজস্র ধারায় আল্লাহতায়ালাকে স্মরণ কর যেন তোমরা সফলকাম হতে পার’ (সুরা জুমা)।

Advertisement

এখানে আল্লাহতায়ালা রমজানের জুমা বা রমজানের শেষ জুমায় যোগদানের নির্দেশ দেননি বরং কোন বিশেষত্ব ছাড়াই সাধারণভাবে জুমার নামাজের গুরুত্বের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন আর বলা হয়েছে, সব জুমাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর জুমায় শুধু যোগদান করলেই হবে না বরং খুতবা শুরু হওয়ার অনেক পূর্বেই আসতে হবে। মহানবী (সা.) জুমায় প্রথম আগমনকারীকে বড় পূণ্যের ভাগী আখ্যায়িত করেছেন।

তিনি (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিন মসজিদের সব দরজায় ফিরিশতারা দাঁড়িয়ে যায়। আর তারা মসজিদে প্রথমে প্রবেশকারীর নাম প্রথমে লিখে আর এভাবে মসজিদে আগমনকারীদের একটি তালিকা প্রস্তুত করতে থাকে। ইমামের খুতবা প্রদান যখন শেষ হয় তখন ফিরিশতারা সেই রেজিষ্টার বা খাতা বন্ধ করে দেয়’ (বোখারি)।

তাই প্রত্যেক ব্যক্তি, জুমার দিন মসজিদে আসা এবং আল্লাহর স্মরণ করার ফলে বিশেষ পূণ্যের ভাগী হয়। ইমামের জন্য অপেক্ষমান অবস্থায় ও খুতবা চলাকালেও তারা এই পূণ্য থেকে অংশ পেতে থাকে। জুমাকে যারা গুরুত্ব দেয় না তাদেরকে মহানবী (সা.) ভীষণভাবে সতর্ক করেছেন। তিনি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা কারণে একাধারে তিনটি জুমা পড়ে না আল্লাহতায়ালা তার হৃদয়ে মোহর মেরে দেন’ (তিরমিজি)।

এই গুরুত্বকে আমাদের সবার দৃষ্টিপটে রাখা উচিত। কোরআন ও হাদিসে কোথাও বলা হয়নি যে, রমজানের শেষ জুমা খুবই গুরুত্বপূর্ণ! বরং সব জুমাকেই গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দেয়া হয়েছে। একটি হাদিসে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘হে মুসলমানগণ! আল্লাহতায়ালা জুমার দিনকে তোমাদের জন্য ‘ঈদ’ নির্ধারণ করেছেন। তাই এই দিনে বিশেষ ব্যবস্থার অধীনে গোসল ইত্যাদি করে প্রস্তুতি নিবে’ (আল মুজিমুস সাগির লিত তিবরানি, পৃ: ১২৯)।আমরা যেন প্রত্যেক জুমাকে সমান গুরুত্ব দেই, মুমিনের ঈমানের মানকে উন্নত করার জন্য জুমার নামাজ পড়া আবশ্যিক। জুমা না পড়ার ক্ষতি সম্পর্কেও মহানবী (সা.) উল্লেখ করে বলেছেন, অ-কারণে জুমা পরিত্যাগকারীর হৃদয় পুণ্য করার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এটি সত্যিই ভয়ের বিষয়।

Advertisement

আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে জুমার ফজিলত উপলব্ধি করে প্রত্যেক জুমায় অংশ নেয়ার তৌফিক দান করুন, আমিন।

এইচআর/জিকেএস