চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে ব্যাপকহারে নিম্নমানের ও নোংরা চিনি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভেজাল খেজুর গুড়। এক শ্রেণির অর্থলোভী গুড় উৎপাদনকারী জীবননগরের সুস্বাদু গুড়ের ব্যাপক চাহিদাকে পুঁজি করে খেজুর রসের সঙ্গে চিনি জ্বালিয়ে ভেজাল খেজুর গুড় তৈরি করে তা অবাধে বাজারজাত করছে। এসব চিনি মেশানো ভেজাল গুড় এখন উপজেলার হাটবাজারে সয়লাব হয়ে গেছে এবং এ গুড় চলে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র। ক্রেতাদের অভিযোগ নিম্নমানের চিনি, পুরাতন চিটাগুড় ও গুড়ের মতো বিশেষ রং দিয়ে এ গুড় তৈরি করা হচ্ছে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, গুড়ের চেয়ে চিনির দাম কম হওয়ায় খেজুর গুড়ে চিনি মেশাচ্ছেন গাছিরা। গাছিরা ভোরবেলা গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরে কড়াইয়ে রসজাল দেবার পর তা লাল বর্ণ হলেই তাতে চিনি ঢেলে দেয়া হয়। চিনিগুলো রসের সঙ্গে মিশে তৈরি হচ্ছে গুড়। এরপর ওই গুড়ে হাইড্রোজ ও ফিটকারি মিশিয়ে গুড়ের রঙ উজ্জল করা হচ্ছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ৪২ টাকা। অপরদিকে, প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা দরে। চিনি মিশিয়ে চাষিরা প্রতি কেজি গুড়ে প্রায় ২৩ টাকার বেশি লাভ পাচ্ছেন।উপজেলার দেহাটি গ্রামের গুড় উৎপাদনকারী আ. খালেক জাগো নিউজকে বলেন, চিনিকে জাল দিলে তা পরিমাণে অনেক বেড়ে যায়। আর শুধু খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি করলে পরিমাণে গুড় কম হয়। সে জন্যই অধিকাংশ গুড় উৎপাদনকারী গাছি খেজুরের রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে গুড় তৈরিতে ঝুঁকে পড়েছেন। তিনি বলেন, চিনি মিশ্রিত গুড় শক্ত এবং কেমিকেলের কারণে উজ্জল হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা বেশি। উপজেলার দেহাটি গ্রামের গুড় উৎপাদনকারী মজিবুর জাগো নিউজকে বলেন, প্রায় পাঁচ বছর ধরে খেজুর রস থেকে গুড় তৈরি করে আসছিলাম। কিন্তু অন্যের দেখাদেখি আমিও ভেজাল গুড় তৈরির কাজে জড়িয়ে পড়েছি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রওশন আরা জাগো নিউজকে জানান, খেজুর রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে জাল দিলে সেটি বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। আর এই চিনি মিশ্রিত ভেজাল গুড় দিয়ে কোনো খাদ্য দ্রব্য তৈরি করে খেলে পেটের পীড়াজনিত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ওই গুড় দিয়ে শিশুদের কোনো খাদ্য তৈরি করে খাওয়ালে শিশুরা লিভার ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নূরুল হাফিজ জাগো নিউজকে বলেন, কারও বিরুদ্ধে ভেজাল গুড় তৈরির অভিযোগ পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সালাউদ্দীন কাজল/এমজেড/পিআর
Advertisement