রাজধানীর রামপুরার জামতলা এলাকার বাসিন্দা মিলি আক্তার টেলিভিশনে সরকারিভাবে সুলভ মূল্যের দুধ, ডিম, মাংস বিক্রির খবর দেখেছেন। খোঁজখবর নিয়ে গতকাল বুধবার নিজেও সুলভ মূল্যের পণ্য কিনতে গিয়েছিলেন খিলগাঁও রেলগেট এলাকায়। সেখানে মোটামুটি লম্বা সময় অপেক্ষা করেও সুলভ মূল্যের ভ্রাম্যমাণ গাড়ির দেখা পাননি তিনি।
Advertisement
এরপর বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) আবারও এলেন রামপুরা টিভি গেট এলাকায়। উদ্দেশ্য সুলভ মূল্যে পণ্য কেনা। কিন্তু আসতে কিছুটা দেরি হওয়ায় আজও খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে তাকে। ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের সামনে অসংখ্য মানুষের ভিড়ে লাইনে দাঁড়ানোরই সুযোগ পাননি মিলি আক্তার।
তবে আজ তিনি ভ্রাম্যমাণ গাড়ির বিক্রয়কর্মীদের থেকে ভালোভাবে খোঁজ নিয়েছেন। সে মোতাবেক আগামীকাল শুক্রবার সকাল ঠিক ৯টায় তিনি ট্রাকের সামনে সিরিয়াল দেবেন।
মিলি আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, কম দামে পণ্য কেনার আশায় দুদিন ঘুরছি ভ্রাম্যমান ভ্যানের পেছনে। ঈদের জন্য মাংস দরকার। দুধ-ডিমও। ভাইয়েরা (বিক্রয়কর্মী) কাল সকালে আসতে বলেছেন। গাড়ির ফোন নম্বর নিয়েছি। কাল আবার চেষ্টা করবো। দেখি, তা-ও যদি কিছু পাই।
Advertisement
‘বাসাবাড়িতে কাজ করে সীমিত আয়ে ভালো-মন্দ কিনে খাওয়া-পরা খুব কঠিন। কিন্তু ঈদে তো একটু ভালো খাওয়াদাওয়া করতেই হয়। সেজন্য কিছু মাংস কিনে ফ্রিজে রাখতে চেয়েছিলাম’- বলেন মিলি আক্তার।
রমজানের শুরু থেকে সরকার ঢাকাসহ সারাদেশে ভ্রাম্যমাণ ট্রাক সেলের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম, মাংস বিক্রি করছে। প্রতিটি ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে পাস্তুরিত তরল দুধ প্রতি লিটার ৬০ টাকা, গরুর মাংস প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ৮০০ টাকা, ড্রেস্ড ব্রয়লার প্রতি কেজি ২০০ টাকা এবং ডিম প্রতি ডজন ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে পণ্য কিনতে শুরু থেকেই এসব গাড়ির প্রতি মনোযোগ ছিল সীমিত আয়ের মানুষের। অনেকে সুযোগ বুঝে বাড়তি পণ্য কিনে নিলেও কেউ কেউ সামান্য পণ্যও পাননি। বরাদ্দ কমায় সুলভের দুধ, ডিম, মাংস যেন আকাশের চাঁদ!
শুরু থেকেই ক্রেতাদের অভিযোগ, ভ্রাম্যমাণ গাড়ির সংখ্যা অনেক কম। যে বরাদ্দ থাকে তা ১০০ জন মানুষও পায় না। বিক্রি শুরু হতেই শেষ হয়ে যায়। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও ফিরতে হয় খালি হাতে।
রাজধানীতে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংসের ভ্রাম্যমাণ বিক্রি কার্যক্রম পরিচালনা করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। রাজধানীর ১০ থেকে ১৫টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে করে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এ কার্যক্রম চলবে আগামী শনিবার পর্যন্ত।
Advertisement
এদিকে শুরুর দিকের তুলনায় এখন ভ্রাম্যমাণ গাড়িপ্রতি বরাদ্দ প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। রামপুরা এলাকায় এমনই একটি গাড়ির বিক্রয়কর্মী হাসান হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, তিনি ৫০ কেজি গরুর মাংস, ১৫ কেজি খাসির মাংস, ৫০ প্যাকেট ব্রয়লার মুরগি, ২০০ লিটার দুধ এবং ১ হাজার ৫০০ পিস ডিম বরাদ্দ পেয়েছেন।
হাসান বলেন, এখানে (রামপুরা টিভি গেট এলাকা) যখন গাড়ি আসে শতাধিক লোকের লাইন ছিল। যেটুকু বরাদ্দ তাতে দাঁড়িয়ে থাকা লোকদেরই দিতে পারিনি। এর মধ্যে বিক্রি চলাকালীন শত শত মানুষ ফিরে গেছে।
তিনি বলেন, বরাদ্দ কম থাকায় আমরা একজন ক্রেতার কাছে কোনো এক পদের মাংসের (গরু, খাসি বা ব্রয়লার) সঙ্গে দুধ আর ডিম বিক্রি করছি। ফলে কেউ এক কেজি গরুর মাংস নিলে আর খাসি বা ব্রয়লার কিনতে পারবেন না। এ বরাদ্দ যদি আরও ১০ গুণ হতো, তবুও বিক্রি হয়ে যেতো। ঈদের কারণে এখন চাহিদা প্রচুর। সে তুলনায় বরাদ্দ খুবই নগণ্য।
এনএইচ/এমকেআর/জিকেএস