শপিংয়ে ক্রেতাদের মন জয় করে নিয়েছে স্নোটেক্স গ্রুপের লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ‘সারা’। ঈদের কেনাকাটায়ও অব্যাহত রয়েছে সেই ধারা। ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া মিলেছে ‘সারা’ লাইফস্টাইলের আউটলেটগুলোতে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত সারা’র আউটলেটগুলো। সার্বিক বিবেচনায় ২০১৮ সালের মে মাসে যাত্রা শুরু করা লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড সারা এখন জনপ্রিয় ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। শুরু থেকেই সারা’র পোশাকের দাম ছিল ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই। এছাড়াও পোশাকের নতুন নতুন ডিজাইন নজর কেড়েছে সবার। তাইতো কেনাকাটায় ক্রেতাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ব্র্যান্ডটি।
Advertisement
দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড ‘সারা’ লাইফস্টাইলের যাত্রায় রয়েছে একজন নারী উদ্যোক্তার প্রচেষ্টার গল্প। তিনি ব্র্যান্ড পরিচালক শরীফুন রেবা। সারা লাইফস্টাইলের সার্বিক বিষয় নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইসমাইল হোসাইন রাসেল।
জাগো নিউজ: দুই বছর করোনার ধাক্কা কাটিয়ে এবার অনেকটা করোনামুক্ত ঈদ। এবারের ঈদকেন্দ্রিক সারা’র পোশাকের বিক্রি কেমন হচ্ছে?
শরীফুন রেবা: এবার ঈদে সারা’র খুব ভালো ব্যবসা হচ্ছে। যেহেতু করোনা নেই, মানুষ বাইরে বের হতে পারছেন, সবমিলে এখন ভালো চলছে। আমাদের দুটি শপ বেড়েছে, এখন শপগুলোতে কাস্টমারও প্রচুর। এক কথায় বলা যায় ঈদকেন্দ্রিক বেচাকেনা খুব ভালো হচ্ছে। মিরপুর আউটলেটে মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১২টায় গিয়ে কাস্টমারদের উপস্থিতি দেখে মনে হয়েছে তখন সন্ধ্যা ৭টা বাজে। এতেই বোঝা যায় ব্যবসা কতো ভালো হচ্ছে। এখন কাস্টমার যতক্ষণ থাকে আমাদের শপগুলোও ততক্ষণই খোলা থাকে। ঈদে আমাদের সময়সীমা নির্দিষ্ট নেই। করোনার পর আমাদের শপ বেড়েছে। সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় এবার আমাদের ব্যবসাও খুব ভালো হচ্ছে। ঈদের কেনাকাটায় সারা লাইফস্টাইলে ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
Advertisement
জাগো নিউজ: ঈদে পোশাকের ক্ষেত্রে ট্রেন্ড লক্ষ্য করা যায়। এবার কী ধরনের পোশাক বেশি চলছে?
শরীফুন রেবা: সারা’র ঈদ কালেকশনে এবার বেঙ্গল প্রাইড থিম নিয়ে কাজ করেছি। প্রতিবছর কোন ট্রেন্ড চলছে, কোন কালারটা ভালো চলবে, কোন থিমে কাজ করবো, সেদিকে সবসময় লক্ষ্য রাখি আমরা। এবার যেহেতু ঈদে গরম আবহাওয়া বিরাজ করছে, তাই সেভাবেই আমরা এবার ঈদ কালেকশন সাজিয়েছি। একটু লুজ ফিটিংয়ের ডিজাইনগুলোই বেশি করা হয়েছে।
জাগো নিউজ: সারা’র কয়টি আউটলেট রয়েছে? আরও আউটলেট বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে কী?
শরীফুন রেবা: নতুন করে বাসাবোতে সারা’র একটি আউলেট চালুর বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এটা নিয়ে আমাদের নয়টি শপ হবে। আমরা প্রতিনিয়ত শপের জন্য স্থান খুঁজছি। গত দুই বছর তো করোনায় কেটে গেলো, সেজন্য আমরা নতুন আউটলেটের বিষয়টি বন্ধ রেখেছিলাম। এখন আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি যতটুকু করা সম্ভব। গত দুই বছরে আমাদের সাতটি শপ নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু করোনার জন্য সেটি করা যায়নি। আমরা দ্রুত সারা’র শপ বাড়ানোর চেষ্টা করছি।
Advertisement
জাগো নিউজ: বিশ্বব্যাপী সুতার দাম বাড়ার কারণে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাকের দাম বাড়ছে। আপনাদের পোশাকে দাম কতটা বেড়েছে?
শরীফুন রেবা: আমাদের সব প্রোডাক্টে যে দাম খুব বেশি বেড়েছে তা নয়, কিন্তু কিছু প্রোডাক্টে দাম কিছুটা বাড়াতে হয়েছে। আমরা যতটুকু সম্ভব দাম না বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছু কিছু প্রোডাক্টের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। আমরা সাপ্লায়ারদের থেকে যেসব কাঁচামাল আনি, সেসবের দাম বেড়ে গেছে, তাই আমাদের কিছু কিছু প্রোডাক্টে দামটা একটু বাড়াতে হয়েছে। আমরা অনেক ফেব্রিক খুঁজছি, কিন্তু প্রয়োজনীয় অনেক ফেব্রিক পাচ্ছিও না। তাই অনেক ক্ষেত্রে কিছুটা বাড়তি দামে ফেব্রিক কিনতে হয়েছে, সেগুলোতেই মূলত দাম কিছুটা বেড়েছে। আমাদের কিছু ফেব্রিক কেনা ছিল, গত দুই বছর করোনার কারণে যেহেতু আমরা সেভাবে প্রোডাকশনে যেতে পারিনি, তাই সব ফেব্রিক এখন কিনতে হয়নি। তবে যেগুলো বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়েছে সেগুলোতে আমরা দাম কিছুটা বাড়িয়েছি।
জাগো নিউজ: করোনার কারণে ব্যবসা ক্ষেত্রে অনেকেই এখন সংকটের কথা বলেন। সারা কীভাবে সেটি মোকাবিলা করছে?
শরীফুন রেবা: সারা’য় কোনো ধরনের সংকট নেই। দুই বছর আমরা কোনো ব্যবসা করতে পারিনি সেটা বললে ভুল হবে। কিন্তু আমাদের যে টার্গেট ছিল সেটি ফুলফিল হয়নি। কিন্তু এমন না যে আমাদের লস হয়েছে। এ ধরনের ব্যবসায় আসলে লসের ব্যাপারটা বললে ভুল হবে। যে প্রোডাক্টটা আমরা তৈরি করছি সেটি তো লসে যাচ্ছে না, সেটি তো আমরা আবার সেল করে দিচ্ছি। গতবারের যে প্রোডাক্ট আমরা বিক্রি করতে পারিনি, সেটি তো আমার রয়েই গেছে। সেটি কিন্তু আমরা এবার বিক্রি করেছি। তাই আমাদের শঙ্কার কিছু নেই। তবে গত দুই বছরে আমাদের টার্গেট ফুলফিল করতে পারিনি। ২০১৮ সালে শুরু করার পর যে সুনাম অর্জন করেছি, সেই অনুযায়ী আমাদের কিছু টার্গেট ছিল। সেই জায়গাটি হয়তো গত দুই বছরে ফুলফিল হয়নি। কিন্তু গত কোরবানির ঈদে আমরা আগের বছরের তুলনায় ভালো ব্যবসা করেছি।
জাগো নিউজ: সারা নিয়ে সামনের দিনগুলোতে কী কী পরিকল্পনা?
শরীফুন রেবা: আমরা খুব দ্রুতই কিছু শপ বাড়াবো, এটি জরুরি হয়ে পড়েছে। অনেকেরই সারা’র শপের বিষয়ে চাহিদা। এদিকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। কিছু কিছু এলাকায় সারার প্রোডাক্ট দিতে পারছি না। তাদের একটা চাহিদা আছে, সেটি নিয়েই কাজ করছি। আমরা সবগুলো শপ নিতে পারলে ঢাকার বাইরে নজর দেবো। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সারাকে নিয়ে যেতে চাই আমরা।
জাগো নিউজ: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
শরীফুন রেবা: আপনাকে এবং জাগো নিউজকেও অনেক ধন্যবাদ।
আইএইচআর/ইএ/এএসএম