স্বাস্থ্য

ঢাকায় মশার লার্ভা বেশি মেঝেতে জমানো পানিতে

রাজধানীর ভবনসমূহের মেঝেতে জমানো পানিতে সর্বোচ্চ ২৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ মশার লার্ভা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এডিস বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রাক মৌসুম জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

Advertisement

বুধবার (২৭ এপ্রিল) রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানায় অধিদপ্তর।

জরিপে দেখা গেছে, মেঝেতে জমানো পানিতে সর্বোচ্চ ২৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এছাড়াও প্লাস্টিকের ড্রামে ২১ দশমিক ৬৪ শতাংশ, প্লাস্টিকের বালতিতে ১৪ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, পানির ট্যাংকিতে (সিমেন্ট) ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ফুলের টবে ৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, মেটাল ড্রামে ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ, প্লাস্টিক মগ, পাত্র, বদনাতে ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ, পানির ট্যাংকি (প্লাস্টিক) ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং অন্যান্য বস্তুতে ৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।

কর্মশালায় প্রাক-মৌসুম এডিস জরিপের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিস বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রাক মৌসুম এডিস জরিপ ২৩ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত পরিচালিত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার ২০টি দলের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ৯৮টি ওয়ার্ডের ১১০টি স্থানে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।

Advertisement

জরিপে প্রাপ্ত এডিস মশার পজিটিভ প্রজনন স্থানের প্রাপ্যতার ভিত্তিতে পজিটিভ বাড়ির শতকরা হার নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে নির্মাণাধীন ভবনে ৪২ দশমিক ১১ শতাংশ, বহুতল ভবনে ৩১ দশমিক ৫৮ শতাংশ, একক ভবনসমূহে ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ, সেমিপাকা বা বস্তি এলাকায় ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ, এবং পরিত্যক্ত (ফাঁকা) জমিসমূহে এক দশমিক ১৭ শতাংশ মশার লার্ভা পরিলক্ষিত হয়।

এছাড়াও রাজধানী ঢাকায় শতকরা ৫ দশমিক ১ শতাংশ মশার মধ্যে ডেঙ্গুর জীবাণু পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আলোচকরা জানান, এসব মশা প্রধানত প্লাস্টিক বাকেট, জলাবদ্ধ মেঝে, প্লাস্টিকের ড্রাম, পানির ট্যাংকিতে উৎপন্ন হচ্ছে। এছাড়াও অব্যবহৃত টায়ার, ফুলদানি, লিফটের ছিদ্রতেও এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এডিস মশা উৎপাদনের অধিকাংশ উৎসই মানুষ সৃষ্ট। এ অবস্থায় স্থানীয় জনগণের সচেতনতা ও সহায্য ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব না। মানুষের মধ্যে সচেতনার ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার এককভাবে নির্মূল করতে সক্ষম হচ্ছে না।

রাজধানী ঢাকায় ৯৪ দশমিক ৯০ শতাংশ কিউলেক্স ও অন্যান্য পূর্ণাঙ্গ মশা এবং ৫ দশমিক ১০ শতাংশ এডিস মশার উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে জারিপে উঠে এসেছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, এডিস মশা প্রজনন ক্ষেত্রের বেশিরভাগই মানুষের দ্বারা তৈরি। প্রাকৃতিকভাবে সংগঠিত হওয়া বিষয়ে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। কিন্তু মানুষের দ্বারা সৃষ্ট সমস্যা প্রতিরোধযোগ্য। এটি করতে জনসচেতনতা বাড়ানো দরকার। আমরা সচেতনতা বাড়াতে কাজ করেছি।

Advertisement

পুনরায় ডেঙ্গুর আউটব্রেক চান না জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের করোনা পরিস্থিতি ভালো অবস্থায় আছে, মৃত্যু ও সংক্রমণ নেই বললেই চলে। তবে অনেক দেশে আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই আমাদের সতর্ক হতে হবে। এরই মধ্যে ডেঙ্গু বাড়লে পুনরায় স্বাভাবিক চিকিৎসা সেবা ব্যহত হবে। আমরা এটা চাই না। তাই ডেঙ্গুকে আগাম প্রতিরোধ করতে হবে। করোনাকালে অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্তদের বিরাম্বনায় ভুগতে হয়েছে। অনেকেই সময় মতো সার্জারিসহ চিকিৎসা নিতে পারেননি। ক্যান্সার ও প্রসূতি মায়েরা সর্বাধিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। এটি একটি চ্যালেঞ্জিং সময় ছিল। তেমন আরেকটি চ্যালেঞ্জে যেন না পড়ি সেই বিষয়ে সবাইকে সতর্ক হতে হবে।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন বিভাগের পরিচালক ও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করা দায়িত্বরত কর্মকর্তা এবং দুই সিটি করপোরেশনের দায়িত্বরতরা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ, ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. জোবাইদুর রহমান, ডা. ফজলে শামসুল কবির, অধ্যাপক ডা. এম এ ফায়েজ, অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা প্রমুখ।

এএএম/কেএসআর/এএসএম