দেশজুড়ে

কাপ্তাই হ্রদে পানি কম, বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে ১৭০ মেগাওয়াট

শুকিয়ে যাচ্ছে কাপ্তাই হ্রদ। শুষ্ক মৌসুম, অনাবৃষ্টি ও জলেভাসা জমিতে চাষাবাদের জন্য পানি ছেড়ে দেওয়ায় কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর কমে এসেছে। এতে প্রভাব পড়েছে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনে।

Advertisement

দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ এই কেন্দ্রে বর্তমানে পাঁচটি মেশিনের মধ্যে দুটি চালু রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ৬০ মেগাওয়াট। অথচ এই হ্রদে পানি পূর্ণ অবস্থায় পাঁচ ইউনিটের মাধ্যমে ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়। এখন পানি না থাকায় ১৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হচ্ছে। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবরে কাপ্তাই হ্রদে সর্বোচ্চ পানির স্তর থাকে। এরপর জলেভাসা জমিতে চাষাবাদের জন্য পানি ছেড়ে দিতে হয়। আবার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যও পানি ব্যবহার হওয়ায় কাপ্তাই হ্রদে নভেম্বরের পর থেকে ধীরে ধীরে পানি কমতে থাকে। পাশাপাশি গ্রীষ্মকালে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে হ্রদের পানি দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। এতে হ্রদের পানির ওপর নির্ভরশীল কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

বর্তমানে হ্রদে পানির উচ্চতা কমে যাওয়ায় কাপ্তাই বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে দুটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সহসা বৃষ্টিপাত না হলে এই দুটি ইউনিট থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের বলেন, শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি একেবারেই কমে যায়। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যায়। হ্রদে পানি না থাকায় সব ইউনিট চালানো সম্ভব না হওয়ায় বিদ্যুতের উৎপাদন হ্রাস পায়।

Advertisement

তিনি বলেন, কাপ্তাই হ্রদের রুলকার্ভ অনুসারে পানি থাকার কথা রয়েছে ৮২.৮০ এমএসএল (মিনস সি লেভেল)। কিন্তু বর্তমানে পানি আরও কম রয়েছে। বুধবার (২৭ এপ্রিল) পর্যন্ত পানি রয়েছে ৭৬.৯৪ এমএসএল। অর্থাৎ আরও ৬ ফুট পানি কম রয়েছে।

হ্রদে পানির সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ১০৯ এমএসএল। পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ৩ ও ৫ নম্বর দুটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। যেখান থেকে সর্বোচ্চ ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। পানি কম থাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সবগুলো ইউনিট একযোগে চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিটটি বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রের ২ এবং ৪ নম্বর ইউনিট পানির অভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে বলেও জানান কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক।

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনে ১৯৬০ সালে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীর ওপর দিয়ে নির্মিত হয় কাপ্তাই বাঁধ। এরপর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদন, নৌ যোগাযোগ, জলেভাসা জমিতে কৃষি চাষাবাদ, সেচ, ব্যবহার্য পানি সরবরাহ, পর্যটনসহ বিভিন্ন সুযোগ ও সম্ভাবনা গড়ে ওঠে কাপ্তাই হ্রদ ঘিরে। কিন্তু নির্মাণের পর থেকে কাপ্তাই হ্রদে সংস্কার, ড্রেজিং বা খনন করা হয়নি। ফলে বছরের পর বছর ধরে নামা পাহাড়ি ঢলে পলি জমে এবং নিক্ষেপ করা হাজার হাজার টন বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাচ্ছে হ্রদের তলদেশ। এতে নাব্য সংকটে অস্তিত্বের সম্মুখীন এই হ্রদ। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় হ্রদ ঘিরে তৈরি হয় নানা সংকট।

এসআর/জিকেএস

Advertisement