দেশজুড়ে

একেকটি পেঁপের ওজন ৭-৮ কেজি, গাছপ্রতি ফলন চার মণ!

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে লক্ষ্মীপুর গ্রামে ‘রাইয়ান জৈব কৃষি খামার’ নামে একটি খামার গড়েছেন নজরুল ইসলাম। ওই খামারে চাষ করেছেন দেশি জাতের পেঁপে। তবে দেশি জাতের পেঁপের আকারের তুলনায় তার চাষ করা পেঁপের আকার দানবীয়। একেকটির ওজন ৭-৮ কেজি। দানবীয় এ আকারের কারণে এর নাম দিয়েছেন ‘জায়ান্ট পার্ল পেঁপে’।

Advertisement

নজরুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণীবিদ্যা বিভাগে অনার্স-মাস্টার শেষ করে জাপান থেকে মেরিন সায়েন্সে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। দেশে ফিরে কিছুদিন কাজ করেন বাংলাদেশ মৎস্য ও কৃষি উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রে। এরপর জাইকার (জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি) অর্থায়নে পরিচালিত রাজধানী ঢাকার একটি প্রজেক্টে যোগ দেন। কিন্তু করোনাকালে প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে গেলে তিনি গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। এরপর থেকে কী করবেন এমন চিন্তা থেকে শুরু করেন কৃষিকাজ। পরে গড়ে তোলেন রাইয়ান জৈব কৃষি খামার। নজরুল ইসলাম জানান, তিনি প্রথমে খামারের মধ্যে পুকুর খনন করে মাছচাষ শুরু করেন। এরপর এলাকার একজন কৃষকের কাছ থেকে ১০০টি দেশি পেঁপের চারা কিনে পুকুর পাড়ের উর্বর মাটিতে আবাদ করেন। সব সময় জৈব সার ব্যবহার করেন। কখনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করেননি। কিছুদিন পর গাছে ফল এলে বাড়তি যত্ন নেওয়া শুরু করেন। হঠাৎ একদিন খেয়াল করেন কয়েকটি গাছের পেঁপে দেশি পেঁপের তুলনায় আকারে অনেক বড়। পেঁপেগুলো পাকার পর গাছ থেকে সংগ্রহ করে ওজন করে দেখেন একেকটির ওজন ৭-৮ কেজি।

তিনি বলেন, বাজারের হাইব্রিড পেঁপেও ওজনে সাধারণত দেড় কেজির বেশি হয় না। কিন্তু তার চাষ করা একেকটি পেঁপের ওজন ৭-৮ কেজি। পরে তিনি এই পেঁপের নাম দেন জায়ান্ট পার্ল পেঁপে।

পেঁপে চাষের জন্য পুকুরের তোলা মাটি ব্যবহার করেছেন নজরুল ইসলাম। তার দাবি, পুকুরের তোলা মাটি অনেক বেশি ঊর্বর হয়। তার পেঁপের ফলনের কারণ এই মাটিই।

Advertisement

সম্প্রতি ঝড়ে নজরুল ইসলামের খামারের অনেক পেঁপে গাছ ভেঙে গেছে। এখন মাত্র ৩০টি গাছ টিকে আছে। তবে তার বাগান ঘুরে এসব গাছে বড় কোনো পেঁপে চোখে পড়েনি।

নজরুল ইসলাম জানান, তার একটি পেঁপে গাছে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ চার মণ পর্যন্ত পেঁপে হয়। প্রথম দিকের পেঁপেগুলো ৭-৮ কেজি ওজনের হয়। কখনো কখনো ১০ কেজি পর্যন্ত হয়। তবে দ্বিতীয় ধাপে যে পেঁপেগুলো পাওয়া যায় সেগুলোর আকার তুলনায় ছোট হয়, ৪-৫ কেজি ওজনের।

নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রথম বছর ফল সংগ্রহের পর দ্বিতীয় বছরে নতুন করে গাছ রোপণ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তাহলে আবার প্রথম দফার মতো বড় সাইজের পেঁপে পাওয়া যাবে। আর চারা রোপণের পর ছয় মাসের মধ্যে ফল বাজারে নেওয়া যায়। আমার কাছ থেকে অনেকে এখন চারা বীজ নিচ্ছেন।’

এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাসীন আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওই খামার পরিদর্শন করে পেঁপেগুলো দেখেছি। এটির সাইজে অনেক বড় ও খেতেও সুস্বাদু। কৃষকরা এটি আবাদ করলে ভালো লাভবান হবে। কারণ ফলন অনেক হয়।’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ‘পেঁপে চাষের জন্য দরকার উঁচু জায়গা যেখানে পানি জমার আশঙ্কা থাকবে না। কারণ পেঁপে গাছের গোড়ায় একদিন পানি জমে থাকলে গাছটি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।’

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এসআর/এএসএম