জাতীয়

‘ঈদের চেয়ে বেশি খুশি তারা’

সারাদেশে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ভূমির মালিকানাসহ সেমিপাকা ঘর দিচ্ছে সরকার। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে এই ঘর পেয়ে ঈদের চেয়ে বেশি খুশি উপকারভোগীরা। তারা বলছেন, আমাদের ভাসমান জীবনে এটি বড় আশ্রয়। মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী তার এই ঈদ উপহার মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হস্তান্তর করবেন। ৪৯২টি উপজেলা ভিডিও কনফারেন্সে এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হবে। চারটি উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী সরাসরি কথা বলবেন। সেগুলো হলো-ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার পোড়াদিয়া বালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, বরগুনা সদরের খাজুরতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প, সিরাজগঞ্জ সদরের খোকশাবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প।

এরই মধ্যে এই চার স্পটে ঢাকা থেকে গণমাধ্যমের চারটি দল একদিন আগেই পরিদর্শনে গেছে। পরিদর্শক গণমাধ্যমকর্মীরা জানিয়েছেন, এ নিয়ে মানুষের মাঝে বেশ উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। সংশ্লিষ্ট সবাই এ কর্মসূচিকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। সবাই বলছেন, এটি অভাবনীয় উদ্যোগ। উপকারভোগীদের মধ্যে ঈদের চেয়ে বেশি খুশি দেখা গেছে। তারা বলছেন, এমন জমি কেনা ও ঘর তৈরি করা তাদের পক্ষে কখনই সম্ভব ছিল না। স্বপ্নেও তারা এটি ভাবেননি। তাই পরিচয়, নিরাপদ আশ্রয় ও মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়ায় তারা বেজায় খুশি।

বরগুনা সদরের খাজুরতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে সাংবাদিক ফারজানা শোভা বলেন, আসলেই মানুষের মাঝে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। তারা স্বপ্নেও দেখেননি এটি। কখনো ভাবেননি এমন জমি ও সেমিপাকা ঘর পাবেন। একজন প্রতিবন্ধী ভিক্ষুকের মুখে যে হাসি দেখলাম, ভাষায় বোঝানো যাবে না। খুশিতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে গান লিখেছেন- ‘তুমি ছাড়া মা, আমাদের কেউ নেই’।

Advertisement

তিনি বলেন, বরগুনা তো উপকূলীয় জেলা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা। এখানে ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভিকটিম আছে। তাদের জন্য এই আশ্রয়ণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বরগুনা সদরের খাজুরতলা গ্রামের আশ্রয়ণ প্রজেক্ট দেখেছি। সেখানে ২৬৯টি পরিবারকে ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। মূলত এখানে মোট ৫০১টি পরিবারের জন্য ঘর করা হবে।

ফারজানা শোভা বলেন, সেখানে ১০ জন ভিক্ষুক, তৃতীয় লিঙ্গের ২২ জন, পাশে আবার হিন্দু-মুসলিম এক লাইনে, এভাবে নানা জাতের লোক আছে। তারাই আমাকে বলেছেন, এই যে নানা জাতপাতের লোক আমরা থাকি। কখনো ঝগড়া হয় না। একটা মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে।

‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের যে উদাহরণ আমরা দেই, যে সম্প্রীতির কথা বলি, খাজুরতলা আশ্রয়ণ আসলেই সম্প্রীতির উদাহরণ।’ যোগ করেন শোভা।

সাংবাদিক অমরেশ রায় বলেন, ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার বালিয়া আশ্রয়ণ প্রজেক্টে গিয়েছিলাম আমরা। সেখানে ১১০টি পরিবারকে জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা ঘর করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪/৫ জন জেলে, বেশিরভাগ দিনমজুর, রিকশাচালক-কারোরই ঘর ছিল না। ভাড়া থাকতেন বা আত্মীয়ের বাড়ি থাকতেন। মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থাকতেন, এমনও পেয়েছি। তাদের মাঝে আনন্দ ও উৎসব দেখেছি। তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। একজন তো বলেই ফেললেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হলেন আমাদের আঁধার রাতের পরশপাথর’।

Advertisement

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে সাংবাদিক রবিউল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, চট্টগ্রামের এই অঞ্চল ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকা। এখানে আশ্রয়ণের গুরুত্ব অনেক। ৯১ এর সাইক্লোনে এখানকার এক কোটি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েন। নানা দুর্যোগে তারা গৃহসহ সহায়-সম্বল হারান। এই মানুষগুলো যখন আশ্রয় পান, তখন মূলত তারা জীবনের নিরাপত্তা পান, মাথা গোঁজার ঠাঁই পান।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প দেখেছি। সেখানে ১২০টি পরিবারকে আশ্রয় দেওয়া হবে। এরই মধ্যে ৩২টি পরিবারের জন্য বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। আজ হস্তান্তর হচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলায় তৃতীয় ধাপে প্রায় ১ হাজার ৪০০ পরিবার পাচ্ছে আশ্রয়। এর আগে দুই হাজার পরিবারকে দেওয়া হয়েছে এই উপহার।

সাংবাদিক রবিউল বলেন, মানুষের মুখে মুখে এই উদ্যোগের সুনাম শুনেছি। সবাই বলছেন, এটি ভালো উদ্যোগ। উপকারভোগীরা তো ঈদের চেয়ে বেশি খুশি। এখানে জমির শতক ১৫-১৬ লাখ টাকা। সেক্ষেত্রে দুই শতকের দাম ৩২ লাখ টাকা। তারওপর পাকা ঘর। এটা তো এদের স্বপ্নেও ছিল না। তারা ঘর পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করছেন। এক বৃদ্ধা তো খুশিতে কেঁদে দিয়েছেন। এই বৃদ্ধা বলেন, ‘আমার বাকি জীবনটা নিশ্চিত ও নিরাপদ হয়ে গেলো। তার (প্রধানমন্ত্রী) জীবনটাও নিরাপদ হোক’।

সিরাজগঞ্জ সদর ও কামারখন্দ ঘুরে সাংবাদিক স্বপ্নীল শাহরিয়ার শিশির বলেন, যে মানুষগুলোকে নিয়ে কেউ ভাবে না, তাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভেবেছেন, তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিলেন, এটা অভাবনীয়। এটা কিন্তু শুধু জমি বা ঘর দেওয়া নয়, তাদের কর্মসংস্থানসহ এগিয়ে নেওয়ারও পক্রিয়া। আমরা যেটা দেখেছি, তাতে সেখানে উপকারভোগীদের নিয়ে সমবায় সমিতিও করা হয়েছে। তাদের নানা কাজে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ঈদের আগে জমিসহ সেমিপাকা এই ঘর পেয়ে মানুষের মাঝে ঈদের চেয়ে বেশি খুশি দেখেছি। নদীর ভাঙনে ঘরবাড়ি হারা মানুষগুলোর যে উপার্জন, তাতে তাদের জীবনধারণই কঠিন, বাড়ি করা তো আরও দুরূহ। তাদের জন্য এই ঘরবাড়ি স্বপ্নের চেয়েও বেশিকিছু। অনেকে তো নিজের গল্প বলতে গিয়ে কেঁদেও দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানিয়েছেন, ঈদের আগ মুহূর্তে পবিত্র ঈদুল ফিতরের উপহার হিসেবে দেশের ৪৯২টি উপজেলায় একযোগে ৩২ হাজার ৯০৪টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে ভূমিসহ সেমিপাকা ঘর। তৃতীয় ধাপে মোট ৬৫ হাজার ৬৭৪টি ঘর দেওয়া হবে। এর আগে দুই ধাপে এক লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি পরিবারকে দেওয়া হয়েছে এই ঘর।

তিনি বলেন, সমাজের পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ। এটি অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়নে ‘শেখ হাসিনা মডেল’। এর মধ্যদিয়ে ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল, অসহায় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন, প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তোলা এবং আয়বর্ধক কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ আমাদের লক্ষ্য।

এসইউজে/ইএ/জেআইএম