আল্লাহতায়ালার কৃপায় আজ পবিত্র মাহে রমজানের চব্বিশতম দিনের রোজা আমরা অতিবাহিত করছি। অনেকেই এ দিনগুলোতে ইবাদতের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আধ্যাত্মিক খাদ্য গ্রহণের পরিবর্তে বাহ্যিক খাদ্যের দিকেই যেন আমাদের আগ্রহ বেশি।
Advertisement
পবিত্র এ মাস মুমিনের পরিবারের জন্য বসন্তের মাস। এ মাসে প্রতিটি মুমিন হৃদয় যেমন লাভ করে আল্লাহপাকের জান্নাতের প্রশান্তি তেমনি তাদের পুরো পরিবারও হয়ে ওঠে জান্নাতি পরিবার। আমরা যদি আমাদের পরিবারগুলোকে জান্নাত সদৃশ বানাতে চাই তাহলে পবিত্র এ রমজান থেকে লাভবান হতে হবে। পরিবারের কর্তা বলে শুধু নিজে রোজা রাখলেই চলবে না বরং পুরো পরিবারকে সাথে নিয়ে রমজানের রোজা রাখতে হবে এবং নফল ইবাদতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সন্তানদেরকে নিয়ে মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায়ের চেষ্টা করতে হবে।
পরিবারের প্রধান হিসেবে আমাদেরকে সন্তানদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। রমজানে শুধু নিজে আল্লাহপাকের আদেশ পালন করলাম আর অন্যরা পালন করলো না তা হতে পারে না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেন, ‘হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে আগুন থেকে বাঁচাও’ (সুরা তাহরিম, আয়াত: ৬)।
তাই প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য সে যেন কেবল নিজেই মুত্তাকি না হয় বরং সে নিজে এবং পরিবারের সকলকে পূণ্যবান-মুত্তাকি করে গড়ে তোলার চেষ্টা করে। সব ধরনের পাপ ও খারাপ থেকে বাঁচাবার জন্য তাদেরকে সঠিকভাবে শিক্ষা দেয়। আমরা যদি সন্তানদেরকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষায় লালিত-পালিত করি তাহলে পরিবার, সমাজ, জাতি, দেশ সর্বত্রেই শান্তি বিরাজ করবে এটা নিশ্চিত। সন্তানদের যদি আমরা উত্তম শিক্ষা দিয়ে গড়ে তুলি তাহলে এদেশে থাকবে না কোন সন্ত্রাসী, থাকবে না কোন চোর-ডাকাত, হতে পারে না কোন মারামারি আর কাটাকাটি। এক কথায় বলা যায় সকল প্রকার অরাজকতা থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি। আমরা যদি আমাদের সন্তানদের প্রতি দৃষ্টি না দেই তাহলে খোদাতায়ালার কাছে আমরা অবশ্যই এর জন্য জিজ্ঞাসিত হব।
Advertisement
পরিবারের কর্তা হিসেবে সন্তানদের প্রতি আমার যে দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে তা আমাকে যথাযথভাবে পালন করতে হবে। পরিবারের সদস্যদেরকে শুধু ইবাতদের কথাই বলবো না বরং তাদের প্রয়োজনের দিকেও আমাকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
হাদিসে এসেছে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তুমি একটি দিনার আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছ, একটি দিনার ক্রীতদাস মুক্তিতে ব্যয় করেছ, একটি দিনার মিসকিনকে দান করেছ এবং একটি দিনার পরিবারের লোকদের জন্য ব্যয় করেছ। এ খরচ করা দিনারগুলোর মধ্যে নিজ পরিবারের লোকদের জন্য খরচ করা দিনারের মূল্য-প্রতিদান লাভের দিক থেকে সর্বোত্তম।’ (মুসলিম)
সাধ্য অনুযায়ী পরিবারের সদস্যদের জন্য খরচ করা এবং ইসলামের প্রকৃত শিক্ষায় তাদের গড়ে তোলা আমাদের দায়িত্ব। রমজান মাসে নিজেদের নেক আমলের মাধ্যমে আমরা আমাদের পরিবারের সদস্যদের জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটাতে পারি। কেননা রমজান মাস হচ্ছে প্রশিক্ষণের মাস। এ মাসে সন্তানদের যদি সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া যায় তাহলে সন্তানরা কখনই ভুল পথে পা রাখবে না।
প্রত্যেকটি পরিবারে কেবল তখনই প্রশান্তির সুবাতাস প্রবাহিত হতে পারে যখন পরিবারের সদস্যরা আল্লাহর দেয়া দায়িত্বানুভূতি সম্পর্কে সজাগ থাকবে। পরিবারের প্রত্যেকে প্রত্যেকের দায়িত্ব যখন পূর্ণাঙ্গভাবে পালন করবে তখন সেই পরিবার হবে একটি আদর্শ পরিবার। এতে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে থাকবে সুসম্পর্ক, সন্তানরা তাদের বাবা-মায়ের ঘনিষ্ঠ সাহচর্য লাভ করবে আর আত্মীয়-স্বজনরা যখন যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা পাবে তখনই আল্লাহর রহমত, বরকত ও অনুগ্রহ সেই পরিবারে বর্ষিত হতে থাকবে।
Advertisement
আমরা যদি আল্লাহপাকের আদেশ নিষেধ পরিপূর্ণভাবে প্রথমে নিজেরা পালন করে জীবন অতিবাহিত করি এবং সন্তানদেরকে নসিহত করি তাহলে দেখবেন তাদের ওপর এর প্রভাব পড়ছে আর আমাদের ঘরগুলো হবে শান্তিময়। তাই আসুন না, রমজানের অবশিষ্ট দিনগুলো থেকে নিজে এবং পুরো পরিবারসহ লাভবান হবার চেষ্টা করি। আল্লাহতায়ালা আমাদের রোজাগুলো গ্রহণ করে তার সন্তুষ্টির চাদরে আবৃত করে নিন, আমিন।
এইচআর/জেআইএম