দেশজুড়ে

দুই দফায় পতাকা বৈঠক : হতাহতের ঘটনা অস্বীকার বিএসএফের

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার শালঝোড় সীমান্তে বিএসএফের বেধড়ক মারপিটে আব্দুল গণি (৫০) নামে এক গরু ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এসময় তাদের নির্যাতনে আলাউদ্দিন (৩০) ও রইস উদ্দিন (২৫) দুই জন গরু ব্যবসায়ী আহত হয়েছে। সোমবার ভোর ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে আহত আলাউদ্দিন ও রইস উদ্দিন পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও নিহত গরু ব্যবসায়ীর লাশ বিএসএফ নিয়ে যায়। পরে তারা ওই সীমান্তের ৯৮৮ নম্বর সীমানা পিলারের পার্শ্ববর্তী কালজানী নদীর পাড়ে পানির মধ্যে লাশটি ফেলে রাখে। এলাকাটি জিরো লাইন ঘেঁষা বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডের অভ্যন্তরে অবস্থিত। নোম্যান্স ল্যান্ড হওয়ায় সেখানে কেউ যেতে পারেনি। বিজিবি বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ভূরুঙ্গামারী পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। নিহত আব্দুল গণি শিলখুড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ ধলডাঙ্গা গ্রামের সুজুর উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনার পর বিজিবি কড়া প্রতিবাদ জানালে দু’দফা পতাকা বৈঠকের পর লাশ হস্তান্তর করা হয়।বিজিবি’র সুবেদার তরিকুল ইসলাম জানান, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে প্রথমে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে দুপুর ১২টার পর পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে দুপুর ২টার পর দ্বিতীয় দফায় ২০ মিনিট পতাকা বৈঠক হয়। তিনি আরো জানান, বৈঠকে বিজিবির পক্ষে ৪৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল জাকির হোসেন এবং বিএসএফ পক্ষে ৯৮ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কমান্ডেন্ট এ কে শিং নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে বিজিবি পক্ষ থেকে ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। তবে বিএসএফের পক্ষে গরু ব্যবসায়ীদের ধরে নিয়ে নিয়ে যাওয়া, মারপিট এবং হতাহত করার কথা অস্বীকার করা হয়েছে। তাহলে হতাহতের ঘটনা কিভাবে ঘটলো তার কোনো জবাব দেয়নি বিএসএফ। শিলখুড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান জানান, শালঝোড় কাইজার চর সীমান্তের ৯৮৮ নম্বর সীমানা পিলারের পার্শ্ববর্তী এলাকা দিয়ে সোমবার ভোররাতে কয়েকজন ব্যক্তি গরু আনার জন্য ভারতের ভূ-খণ্ডের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এসময় ভারতের ৯৮ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের ঝুলোলী ক্যাম্পের টহল দল আব্দুল গণি এবং আলাউদ্দিন ও রইস উদ্দিনকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে এবং বেধড়ক মারপিট করে। এতে ঘটনাস্থলে আব্দুল গণি নিহত এবং আলাউদ্দিন ও রইস উদ্দিন আহত হন। আহত অবস্থায় রইস উদ্দিন ও আলাউদ্দিন পালিয়ে এসে প্রথমে ভুরুঙ্গামারী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আত্মগোপন করেন। বর্তমানে তারা রংপুরে অবস্থান করে পরিচয় গোপন করে উন্নত চিকিৎসা নিচ্ছে। গ্রেফতার এবং পরবর্তী আইনি জটিলতার কারণে বিস্তারিত তথ্য জানাতে কেউ রাজি হচ্ছেন না। বিএসএফ পরে নিহত আব্দুল গণির লাশ নিয়ে যাওয়ার পর কৌশলে সীমান্তবর্তী কালজানী নদীর পাড়ে ফেলে দিয়ে যায়।ভূরুঙ্গামারী থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ জিয়া লতিফুল ইসলাম জানায়, ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধারের পর বিকেল ৫টার দিকে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। কুড়িগ্রামস্থ ৪৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল মো. জাকির হোসেন জানিয়েছেন, ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তবে বিএসএফের পক্ষ থেকে এ ঘটনার সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। নাজমুল হোসনে/এমএএস/আরআইপি

Advertisement