ঋণের টাকা পরিশোধ না করে জালিয়াতির মাধ্যমে ২৫৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নুরজাহান গ্রুপের মাররীন ভেজিটেবল ওয়েল লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও অগ্রণী ব্যাংকের তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
Advertisement
রোববার (২৪ এপ্রিল) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ওই চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অনুমোদিত চার্জশিটে যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- নুরজাহান গ্রুপের মাররীন ভেজিটেবল ওয়েল লিমিটেডের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান ও এমডি জহির আহমেদ, অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক সিনিয়র অফিসার ত্রিপদ চাকমা, সাবেক সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. রমিজ উদ্দিন এবং ব্যাংকটির সাবেক ডিজিএম ও আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক বেলায়েত হোসেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারাসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪ (২) ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
এর আগে ২০১৯ সালের ৩ এপ্রিল এ বিষয়ে সহকারী পরিচালক নিয়ামুল আহসান গাজী বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, অগ্রণী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা নুরজাহান গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাররীন ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ ২০১১ সালের ১০ মার্চ ঋণের আবেদন করেন। আবেদনে মালয়েশিয়া অথবা ইন্দোনেশিয়া থেকে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন ‘ক্রুড পামওলিন’ আমদানির জন্য ২০ শতাংশ মার্জিনে ১২০ দিন মেয়াদে প্রায় ৩ হাজার ২৭০ কোটি ৪ লাখ টাকার ঋণপত্র ও মার্জিন অবশিষ্ট ২৬১ কোটি ৬৩ লাখ টাকার টিআর ঋণ মঞ্জুরের কথা বলা হয়।
ওই সময় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখার তৎকালীন সিনিয়র অফিসার ত্রিপদ চাকমা ও সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. রমিজ উদ্দিন এ সংক্রান্ত ঋণ প্রস্তাব প্রস্তুত করেন। উক্ত ঋণ প্রস্তাব ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের ২০১১ সালের ২৭ এপ্রিলের ২২০তম সভায় উপস্থাপন করা হয়। এরপর ক্রেডিট কমিটির সুপারিশে পরিচালনা পর্ষদ থেকে অনুমোদন হওয়ার পর ওই বছরের ২ মে অগ্রণী ব্যাংক প্রধান কার্যালয় থেকে মঞ্জুরিপত্র দেওয়া হয়। যেখানে মেসার্স মাররীন ভেজিটেবলসের অনুকূলে ৩০ শতাংশ মার্জিনে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন ক্রুড পামওলিনের সমমূল্যের প্রায় ৩২৭ কোটি ৪ লাখ টাকার ঋণপত্র স্থাপন ও মার্জিন অবশিষ্ট ২২৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা ৬০ দিন মেয়াদে শর্ত সাপেক্ষে টিআর ঋণ মঞ্জুরের অনুমোদন দেওয়া হয়।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে আরও জানা যায়, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের আগ্রাবাদ শাখা হতে ২০১১ সালের ১৩ অক্টোবর থেকে ২০১২ সালের ২৩ মার্চ পর্যন্ত মেসার্স মাররীন ভেজিটেবল অয়েলসের অনুকূলে আটটি টিআর (ট্রাস্ট রিসিট) ও তিনটি পিএডি (পেমেন্ট অ্যাগেইনস্ট ডকুমেন্ট) লোন বাবদ মোট ২৮০ কোটি ৭২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৭৩ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। আর মঞ্জুরীকৃত ঋণপত্রের বিপরীতে ওই শাখায় মোট ১১টি আমদানি দলিল গৃহীত হয়। যার মধ্যে ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠান আটটি আমদানি দলিলের প্রয়োজনীয় মার্জিন ব্যাংকের শাখায় জমা করে মূল দলিল দিয়ে আমদানিকৃত মালামাল ডেলিভারি নেয়। কিন্তু অবশিষ্ট তিনটি আমদানি বিলের মূল দলিল ব্যাংকের শাখায় সংরক্ষিত থাকা অবস্থায় প্রতারণার মাধ্যমে জাল কাগজপত্র ব্যবহার চট্টগ্রাম কাস্টমস থেকে মালামাল ছাড় করে।
Advertisement
তদন্তে দেখা যায়, ঋণ গ্রহীতা উক্ত ঋণ উত্তোলনকালে মার্জিন ও অন্যান্য খাতে মোট ২২ কোটি ১৬ লাখ ২২ হাজার টাকা দিলেও অবশিষ্ট ২৫৮ কোটি ৫৬ লাখ ১৬ হাজার ৩৭২ টাকা প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করে।
দুদকের তদন্তে আরও বলা হয়েছে, ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের গাইডলাইনে সহায়ক জামানত হিসেবে সহজেই নগদায়নযোগ্য তরল সম্পদ বা স্থাবর সম্পত্তি (ক্রেডিট সুবিধার পরিমাণের দ্বিগুণ মূল্যের সম্পত্তি) জামানত হিসেবে রাখার নির্দেশনা থাকলেও তা অনুসরণ করা হয়নি। শুধুমাত্র জামানত হিসেবে টিআরের সমপরিমাণ চেক গ্রহণ করেই উক্ত ঋণ দেওয়া হয়। কিন্তু গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে প্রয়োজনীয় টাকা না থাকায় উক্ত চেক নগদায়ন করে ঋণের টাকা আদায় করা সম্ভব হয়নি। ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেরা লাভবান হয়েছে বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
এসএম/আরএডি/জিকেএস