আবু তালহা তোফায়েল
Advertisement
রমজানের শেষ দশকের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এর একটি লাইলাতুল কদর। যা হাজার মাস থেকেও শ্রেষ্ঠ। যে এ রাতে ঈমান ও সওয়াবের আশায় ইবাদত-বন্দেগি করবে, তার অতীতের পাপগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আল্লাহতায়ালা একে বরকতময় বলেছেন। কারণ, এ রাতে রয়েছে যেমন বরকত, তেমনি কল্যাণ ও তাৎপর্য। বরকতের প্রধান কারণ হলো, এ রাতে আল কোরআন নাজিল হয়েছে। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য লওহে মাহফুজ থেকে ফেরেশতাদের হাতে অর্পণ করা হয়।
এ রাতের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, আল্লাহতায়ালা এ রাত সম্পর্কে একটি পূর্ণ সুরা অবতীর্ণ করেছেন। যা কেয়ামত পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় আমি এটি লাইলাতুল কদরে নাজিল করেছি। আপনি কী জানান, লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাকুল ও জিবরাইল তাদের রবের অনুমতিক্রমে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় সে রাত ফজরের সূচনা পর্যন্ত।’ (সুরা কদর : ১-৫)।
সুরা কদরের সারকথা১. এটি এমন এক রাত, যাতে মানবজাতির হেদায়াতের আলোকবর্তিকা মহাগ্রন্থ আল কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।২. এ রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। অর্থাৎ ৮৩ বছরের চেয়েও এর মূল্য বেশি।৩. এ রাতে ফেরেশতাগণ রহমত, বরকত ও কল্যাণ নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করে থাকে।৪. এ রাতটি প্রশান্তির। আল্লাহর বান্দারা এ রাতে জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে স্বস্তি অর্জন করে।৫. সময়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। এ আয়াতগুলোতে অল্প সময়ে বেশি কাজ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হলো। যত সময় বেশি, তত বেশি কাজ করতে হবে। সময় নষ্ট করা চলবে না।৬. গোনাহ ও পাপ থেকে ক্ষমা লাভ। এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াব লাভের আশায় কদরের রাতে নফল সালাত আদায় ও রাত জেগে ইবাদত করবে, আল্লাহ তার অতীতের সব সগিরা (ছোট) গোনাহ ক্ষমা করে দেন।’ (বোখারি : ১৯০১)।
Advertisement
লাইলাতুল কদর কখন?আল কোরআনে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি, লাইলাতুল কদর কোন রাত। তবে কোরআনের ভাষ্য হলো, লাইলাতুল কদর রমজান মাসে। কেয়ামত পর্যন্ত রমজান মাসে লাইলাতুল কদর অব্যাহত থাকবে। এ রাতটি রমজানের শেষ দশকে হবে বলে সহিহ হাদিসে এসেছে। তা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তা হলো, প্রথমত রমজান মাসের সাতাশ তারিখ; দ্বিতীয়ত পঁচিশ তারিখ; তৃতীয়ত ঊনত্রিশ তারিখ; চতুর্থত একুশ তারিখ; পঞ্চমত তেইশ তারিখ। রাব্বুল আলামিন এ রাতকে গোপন রেখেছেন আমাদের ওপর রহম করে। তিনি দেখতে চান এর বরকত ও ফজিলত লাভে কে কতটা চেষ্টা করি। হাদিসে এসেছে, ‘রমজানের শেষ দশদিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ করো।’ (বোখারি : ২০২০)। রমজানের শেষ সাত দিনে লাইলাতুল কদর থাকার সম্ভাবনা অধিকতর। হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত খোঁজ করো।’ (বোখারি : ২০১৭)।
এ রাতের জন্য করণীয়লাইলাতুল কদরে আমাদের কর্তব্য হলো, বেশি বেশি দোয়া করা। আয়েশা (রা.) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘লাইলাতুল কদরে আমি কি দোয়া করতে পারি?’ তিনি বললেন, বলবে—ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﻋُﻔُﻮٌّ ﺗُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻌَﻔْﻮَ ﻓَﺎﻋْﻒُ ﻋَﻨِّﻲ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করা পছন্দ করেন। তাই আমাকে ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি : ৩৫১৩)।
মুনশি/এসইউ/এমএস
Advertisement