জাতীয়

নিউমার্কেটে সংঘর্ষ: নাহিদ-মুরসালিনের হত্যাকারী শনাক্ত

রাজধানীর নিউমার্কেটে সংঘর্ষের সময় নাহিদ ও মুরসালিনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তিনজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। এরমধ্যে নাহিদকে কুপিয়েছেন রাব্বী নামের একজন। তিনি ঢাকা কলেজের আবাসিক হলের শিক্ষার্থী। সংঘর্ষের সময় নাহিদকে দুজন ও মুরসালিনকে একজন রামদা দিয়ে কুপিয়েছেন। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

Advertisement

শনিবার (২৩ এপ্রিল) এ তথ্য জানিয়েছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

ডিবি পুলিশ জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, নিথর পড়ে থাকা একটি দেহের ওপর নির্মমভাবে কোপাচ্ছে এক যুবক। হেলমেট পরা যুবকের নাম রাব্বী। তিনি ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী, থাকেন কলেজের নর্থ হলে।

তদন্তকারীদের তথ্যানুসারে, মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত নিহত নাহিদ ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের পক্ষ হয়ে সংঘর্ষে জড়ান। একটি বড় ছাতা হাতে তাকে সংঘর্ষের একদম সামনে দেখা যায় অন্তত দুই ঘণ্টা ধরে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে ইটের আঘাতে আহত হয়ে সড়কে পড়েন নাহিদ। এরপর তার ওপর নির্মম হামলা চালায় হেলমেটধারী কিছু যুবক।

Advertisement

তদন্তকারীরা জানান, নাহিদকে সেদিন দুজন পরপর কোপায়। এরমধ্যে সবচেয়ে হিংস্র দেখা গেছে শনাক্ত হওয়া রাব্বীকে। রাব্বীর আগের হামলাকারীকেও শনাক্ত করা হয়েছে। নাহিদ হত্যার পরদিন হাসপাতালে মারা যান দোকানকর্মী মুরসালিন। মুরসালিনকেও কুপিয়েছে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী। মুরসালিনের হত্যাকারীকেও শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের নজরদারিতে রেখেছে তদন্তকারীরা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, নিহতের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। সব ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। কয়েকজনকে শনাক্তও করা হয়েছে।

গত সোমবার (১৮ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সংঘর্ষ হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। এরপর রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে ফের দফায় দফায় শুরু হয় সংঘর্ষ, যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অর্ধ শতাধিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। এছাড়া সংঘর্ষের এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তাদের একজন ডেলিভারিম্যান, অন্যজন দোকান কর্মচারী।

Advertisement

সংঘর্ষের সূত্রপাত নিউমার্কেটের ভেতরে থাকা ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুড নামের দুই দোকান কর্মচারীর দ্বন্দ্ব থেকে। সেই দোকান দুটি সিটি করপোরেশন থেকে মকবুলের নামে বরাদ্দ রয়েছে। তবে কোনো দোকানই নিজে চালাতেন না মকবুল। রফিকুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম নামে দুজনকে ভাড়া দিয়েছেন দোকান দুটি। রফিকুল ও শহিদুল পরস্পর আত্মীয়।

সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করে। একটি মামলা বিস্ফোরক আইনে এবং অন্যটি পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে করা হয়। দুই মামলায় নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীসহ মোট ১২০০ জনকে আসামি করা হয়।

এছাড়া সংঘর্ষে নিহত নাহিদের বাবা মো. নাদিম হোসেন ও মুরসালিনের ভাই নুর মোহাম্মদ বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় দুটি হত্যা মামলা করেন। এই চার মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে প্রায় এক হাজার ৪০০ জনকে। তবে তিনটি মামলার মধ্যে শুধু পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় বিএনপি নেতা মকবুলসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ মামলার বাদী নিউমার্কেট থানার পুলিশ পরিদর্শক ইয়ামিন কবীর।

মকবুল হোসেন ছাড়াও এ মামলায় আরও যাদের নাম রয়েছে, তারা হলেন আমির হোসেন আলমগীর, মিজান, টিপু, হাজি জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী, হাসান জাহাঙ্গীর মিঠু, হারুন হাওলাদার, শাহ আলম শন্টু, শহিদুল ইসলাম শহিদ, জাপানি ফারুক, মিজান বেপারী, আসিফ, রহমত, সুমন, জসিম, বিল্লাল, হারুন, তোহা, মনির, বাচ্চু, জুলহাস, মিঠু, মিন্টু ও বাবুল।

টিটি/এমএএইচ/