তামান্না আফরিন মিতুল
Advertisement
কাশ্মীর নামটি শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে ছবির মতো সাজানো গোছানো এক স্থান। চারপাশের বিশালাকার সব পাহাড়। তার ফাঁকে ফাঁকে মেঘের খেলা, সবুজ প্রকৃতি, নদীসহ বিস্ময়কর সব দৃশ্য আপনি দেখতে পাবেন সেখানে।
কাশ্মীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক সেখানে ভিড় করেন। সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে আপনি বিস্ময়ে শিহরিত হবেন মুহূর্তেই। কাশ্মীরের ইয়োশমার্গ, সোনালগাহ, গুলমার্গ কিংবা পহেলগাম ভ্রমণ স্বপ্নের চেয়ে কম নয়।
কাশ্মীরের বিভিন্ন দর্শণীয় স্থান নিয়ে সবাই কম বেশি জানেন। তবে অনেকেরই হয়তো জানা নেই কাশ্মীরের বর্তমান খরচ কত। আগেই বলছি কাশ্মীরে এখন ভয়াবহ ভিড় চলছে, গত ১০ বছরের ট্যুরিজম রেকর্ড ভেঙে গেছে এবার। তাই এখন ভ্রমণে খরচ বেশি হওয়া স্বাভাবিক। তাই ঈদের ছুটিতে বা ঈদের পরে যারা কাশ্মীর যাবেন, তারা সঙ্গে যথেষ্ট টাকা নিয়ে যাবেন।
Advertisement
হোটেল
কাশ্মীর গিয়ে আমরা উঠেছিলাম শ্রীনগরে মমতা চকে ‘নায়মা সুলতান গেস্ট হাউজে’ (ফোন নাম্বার: +৯১৯৪১৯৪২৭২৪৭)। যথেষ্ট পরিষ্কার, ওয়াইফাই, গিজারসহ রুম ভাড়া পড়েছে ১০০০ রুপি।
হোটেল বুক করার জন্য বুকিং.কম কিংবা ওওয়াইও এসবের এখন কোনো ভরসা নাই। এখন যেহেতু পর্যটক সংখ্যা বেশি, তাই রুম বুকিং দিয়ে রাখলেও সেখানে নিয়ে পরে নাও পেতে পারেন।
গাড়িভাড়া
Advertisement
আমাদের প্রতিদিনের ১০ সিটের শেভ্রোলেট টাভেরার গাড়ি ভাড়া পড়েছে ৩০০০ রুপি। এজেন্টের কাছ থেকে আমরা ভাড়া নিয়েছি। সরাসরি ড্রাইভারের কাছ থেকে নিলে দাম কম পড়বে। আমাদের ড্রাইভার মনজুর ভাইয়ের (ফোন নাম্বার +917006256559)।
এছাড়া সাত সিটের ইনোভা গাড়িতেও পড়বে ৩০০০ রুপি। ড্রাইভারের (ফোন নাম্বার +৯১৯৫৯৬০০৯৫৬২)। অন্যদিকে ৪ সিটের মারুটি আল্টো গাড়ির ভাড়া পড়বে ১৫০০ রুপি। আবার ৪ সিটের অন্যান্য ভালো গাড়িতে পড়বে ১৫০০-২২০০ রুপি।
পেহেলগাম
অনেকেই বলবে পেহেলগামে কমপক্ষে একরাত থাকতে। এখন দিন অনেক বড়, সকাল ৭টা বাজতেই ঝলমলে রোদ উঠে যায়, সন্ধ্যা হয় আবার ৭টায়। কেউ চাইলে আরামেই সব স্পট একদিনে ঘুরে শ্রীনগর ফেরত যেতে পারবেন।
পেহেলগামে বাইসরন রূটে ৬টি স্পট ঘোড়ায় চড়ে ঘুরতে আমাদের জনপ্রতি খরচ পড়েছে ১৫০০ রূপি। কিছুদিন আগেও আমার বন্ধু গিয়েছিল জনপ্রতি ৮৫০ রুপিতে। যাই হোক কাশ্মীরে দামাদামি অবশ্যই করতে হবে। এই ট্রিপে আমাদের কাছে চেয়েছিল জনপ্রতি ৬০০০ রুপি।
আরু ভ্যালী, বেতাব ভ্যালী আর চন্দনওয়ারি যেতে আলাদা গাড়ি লাগবে। কারণ শ্রীনগরের গাড়ি ওরা ঢুকতে দিবে না। ওখানে ইউনিয়নের প্রভাব বেশ। সিন্ডিকেটের বাইরে গাড়ি পাওয়া ভাগ্যের বিষয়। টাভেরা গাড়িতে ভাড়া পড়েছে ২৪০০ রুপি।
এই সিজনে চন্দনওয়ারী খুবই বাজে জায়গা, চাইলে বাদ দিতে পারেন। তাহলে খরচ কমবে। পেহেলগামে হোটেলগুলোতেও অনেক ভিড়। আগে থেকে বুক দিয়ে যাবেন। সোনমার্গে গ্লেসিয়ার যেতে আমাদের জনপ্রতি ঘোড়া ভাড়া পড়েছে সম্ভবত ১১০০ রুপি। এই স্থানটি খুবই সুন্দর।
গুলমার্গ
এখানে গন্ডোলা রাইডে স্পট টিকেট পারচেজ বন্ধ। অনলাইনে টিকেট কাটতে হয় কমপক্ষে ২ দিন আগে। বলে রাখা ভালো, ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কাটতে পারবেন না। অ্যাজেন্টের কমিশন ২০০ রুপিসহ আমাদের দুই ফেইজের টিকিটের দাম পড়েছে জনপ্রতি ১৯০০ রুপি। গন্ডোলা রাইডে বিশাল লাইন।
আর সেখানকার দালালগুলোও খুব ভয়ংকর। তারা লাইন বিক্রি করে। আপনি দাঁড়িয়ে আছেন, হঠাৎ করে দেখবেন আপনার সামনে নতুন একজন দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের তো প্রায় হাতাহাতি হওয়ার মতো অবস্থা। এরপর আহারবাল ওয়াটারফলে যাবেন। এটি খুবিই সুন্দর একটা ওয়াটারফল।
ইয়োশমার্গ
ভয়ংকর সুন্দর এই জায়গা। কাশ্মীরে আর কোথাও না গিয়ে শুধু এই জায়গাতে গেলেই যেন আপনি সব সৌন্দর্য দর্শন করতে পারবেন। দেবদারু, পাইন, চেরি আর স্ট্রবেরীর জংগলের মাঝে মাঝে চলতে চলতে একসময় হতাশা বোধ হয়। এত সৌন্দর্য যেন মস্তিষ্কের গ্রহণক্ষমতার বাইরে চলে যায়।
সবুজ এর গালিচায় ঢাকা জমিনের পাশে কুলকুল শব্দে সারাক্ষণই বয়ে চলে দুগ্ধগিরি ঝরনা। ৪টি স্পটে ঘোড়ায় চড়ে ঘুরতে ভাড়া পড়েছে জনপ্রতি ৭০০ রুপি। আমাদের বন্ধুরা দিয়েছিল ৪০০ রুপি। এখানে আমরা আসলে দামাদামিতে জিততে চাইনি। কারণ সেখানে দারিদ্রের হার বেশি। অনেকের কাছেই শুনলাম, ইয়োশমার্গ একদিনে ঘুরার জন্য যথেষ্ট নয়। কমপক্ষে ৫ দিন দরকার।
শ্রীনগর বেলুন রাইড
জাবারওয়ান পার্ক থেকে জনপ্রতি ৭৫০ রুপিতে এই রাইড। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা আর বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা। তবে এই বেলুনে না ওঠাই ভালো। এই রাইডে বেলুন এক জায়গায় দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে মাত্র ৫ মিনিটের জন্য। ইন্দিরা গান্ধী টিউলিপ গার্ডেন
ঈদের বন্ধে যারা কাশ্মীর যাবেন, তাদের আমি এখানে যেতে নিরুৎসাহিত করব। টিউলিপ এখন আর নেই, টিকেটের দাম ৫৯ রুপি। অন্যান্য বাগানের চেয়ে দাম বেশি আর সৌন্দর্য্যও এখন কম। আপনাদের কাশ্মীর ট্রিপ সুন্দর হোক।
জেএমএস/এএসএম