ধর্ম

মুসলিম জাতির গৌরব ইমাম মালিক ও মোল্লা আলী কারী

ইসলামি গগণের দুই নক্ষত্র ইমাম মালিক ও মোল্লা আলী কারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। যুগে যুগে ইসলামের আলো মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌছে দিতে যাদের অবদান অনস্বীকার্য, তাদের মধ্যে এ দু’জন প্রত্যেকেই প্রত্যেকের যুগে দ্বীনের শ্রেষ্ঠ রাহবার হিসেবে কাজ করেছেন। এ দুই মহামনীষী ৭ রবিউস সানি ইন্তেকাল করেছেন। সংক্ষেপে তাদের মূল্যবান নসিহত তুলে ধরা হলো-ক. হজরত ইমাম মালিক ইবনে আনাস ইবনে মালিক ইবনে আবি আমির আল-আসবাহি। তাঁর জন্ম: ৭১১ খ্রিস্টাব্দ, ৯৩ হিজরী – মৃত্যু ৭৯৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৭৯ হিজরীর ৭ই রবিউস সানি। তিনি একজন বিখ্যাত হাদিস বিশারদ এবং ফিকহের অত্যন্ত সম্মানিত পণ্ডিতদের একজন ছিলেন। তিনি মুসলমানদের প্রধান চার ইমামের একজন। মালেকি মাজহাব তাঁরই প্রণীত মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। তাঁরই সংকলিত বিখ্যাত এবং প্রাচীনতম হাদীসগ্রন্থ হচ্ছে ‘মুয়াত্তা মালিক’।মৃত্যু সন্নিকটে ইমাম মালিকের বক্তব্য, যা তাঁর বিশেষ স্নেহধন্য শাগরিদ ইয়াহইয়া বর্ণনা করেন- প্রশংসা সেই আল্লাহ তাআলার যিনি কখনো হাসিয়েছেন কখনো কাঁদিয়েছেন, তিনিই বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং তিনিই মৃত্যু দান করেছেন। তারপর বললেন, ‘মৃত্যু সন্নিকটে আর আল্লাহর সাথে মুলাকাতের সময় দূরে নয়।’ এরপর ইমাম মালিক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মতো তিনটি মূল্যবান কথা বলেন-১. তিনি তাঁর উস্তাদ (রাবিয়াহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি (রাবিয়াহ) আল্লাহর নামে শপথ করে বলতেন, কোনো অজ্ঞ ব্যক্তি যদি নামাজে ভুল করে এবং সে আমাকে সে বিষয়ের মাসআলা জিজ্ঞাসা করার পর তাকে নামাজের ফরয সুন্নত ও আদবসমূহ শিখিয়ে দিই তবে আমার মতে তা সারা পৃথিবীর মালিকানা লাভ করে আল্লাহ পথে বিলিয়ে দেওয়ার চাইতেও উত্তম।২. আল্লাহ শপথ, কোনো মাসআলা বা রেওয়ায়েতের ব্যাপারে আমার মনে যদি দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় এবং তা নিরসনের জন্য আমি আমার অন্তরকে নিমগ্ন করে দিনরাত স্বস্তিহীনতার মধ্যে কাটিয়ে প্রত্যুষে কোনো আলিমের কাছে গিয়ে এর সমাধান লাভ করি, তবে তা আমার নিকট একশ’টি হজের চাইতেও উত্তম।৩. আমি ইমাম ইবনে শিহাব যুহরির নিকট অনেকবার শুনেছি, তিনি বলতেন, মহান আল্লাহর শপথ, যদি কোনো ব্যক্তি আমার কাছে কোনো পরামর্শ চায় এবং আমি তাকে যথার্থ পরামর্শ দিতে পারি আর তাতে তার আত্মশুদ্ধি লাভ হয়, আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক ক্ষুণ্ন না হয়, তাহলে তা একশ’টি জিহাদ-যাত্রার চাইতেও উত্তম মনে করি।এভাবেই ইলমে নববির খিদমতে মশগুল থেকে ১৭৯ হিজরীর ৭ই রবিউস সানি  সৎকর্মের মহান সাধক, ইলম-গগণের প্রদীপ্ত উজ্জ্বল নক্ষত্র ইমাম মালিক রাহমাতুল্লাহি আলােইহি জান্নাতের চির স্নিগ্ধ ছায়ায় আশ্রয় লাভ করেন। তাঁকে মদিনায় জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়।খ. হজরত মোল্লা আলী ক্বারী- আলী বিন সুলতান মুহাম্মদ তাঁর নাম। উপনাম- আবুল হাসান। উপাধি- নুরুদ্দীন। তিনি একাধারে ফিকাহবিদ, মুহাদ্দিস ও ক্বারী। বাসস্থানের বিবেচনা থেকে তাঁকে হারাবি ও মক্কী বলা হয়। তিনি ‘মোল্লা আলী ক্বারী’ নামে সুপরিচিত। কুরআনের ভিন্ন ভিন্ন পঠনপদ্ধতি সম্পর্কে অভিজ্ঞ ছিলেন বিধায় তাঁকে ক্বারী উপাধি দেয়া হয়েছে।তিনি ৯৩০ হিজরি সালের দিকে ‘হারাত’ শহরে জন্মগ্রহণ করেছেন। সেখানেই বড় হয়েছেন, ইলম অর্জন, কুরআন শরিফ মুখস্থ, তাজবিদ শিক্ষা লাভ করেছেন। অতপর তিনি মক্কায় এসে সেখানকার আলেমগণের নিকট দীর্ঘ মেয়াদে ইলমে দ্বীন অর্জন করে মশহুর আলেমে পরিণত হন। তিনি হানাফি মাজহাবের আলেম ছিলেন। তার গ্রন্থাবলী ও জীবনী থেকে সেটাই জানা যায়।নিজ হাতে কাজ করে জীবিকা অর্জনকারী, দুনিয়ার বিরাগী, আত্মমর্যাদা সম্পন্ন ও অল্পে তুষ্ট, দ্বীনদার, তাক্বওয়াবান ও সুচরিত্রের অধিকারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।সুন্দর হস্তাক্ষরে প্রতি বছর একটি করে কুরআন শরিফের কপি লিখতেন। লিখিত কুরআন শরিফের কপির পার্শ্বটীকাতে ক্বিরাআত ও তাফসির লিখতেন। সেটি বিক্রি করে যা পেতেন তা দিয়ে তাঁর বছর চলে যেত।শাসকদের নিকটবর্তী হয়ে তাদের উপঢৌকন গ্রহণ করাকে ইখলাস ও তাকওয়ার পরিপন্থী মনে করতেন। তিনি বলতেন, ‘আল্লাহ আমার পিতার প্রতি রহম করুন। তিনি বলতেন- ‘আমি চাই না যে, তুমি আলেম হও; এই আশংকায় যে, তুমি আমীর-ওমরাদের দরজায় ধরনা দিবে।’ইলম, আমল ও নেকীর কাজে ভরপুর জীবন কাটিয়ে তিনি ১০১৬ হিজরীতে মতান্তরে ১০১০ হিজরীর ৭ই রবিউস সানি তারিখে মক্কাতে মৃত্যুবরণ করেন। তবে অগ্রগণ্য মতানুযায়ী তিনি ১০১৪ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন এবং জান্নাতুল মুয়াল্লা নামক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।সুতরাং আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইমাম মালিক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ও আল্লামা মোল্লা আলী কারী রহমাতুল্লাহি আলাইহির রূহানি ফায়েজ লাভে ধন্য হওয়ার এবং তার জীবনাদর্শ থেকে শিক্ষা নেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/আরআইপি

Advertisement