জাগো জবস

প্রথম বিসিএসেই রেলওয়ে প্রকৌশল ক্যাডার হন আশিক

আশিক ইবনে আজিজ ৩৮তম বিসিএসে রেলওয়ে প্রকৌশল ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন। তার জন্ম গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায়। তার বাবা মো. আজিজুল ইসলাম সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পদে, মা আলেয়া আক্তার বাংলাদেশ সরকারের যুগ্ম সচিব পদে কর্মরত। তিনি ২০০৯ সালে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ টাঙ্গাইল থেকে এসএসসি এবং ২০১১ সালে একই কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

Advertisement

বর্তমানে তিনি সিনিয়র সহকারী বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী হিসেবে বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকায় কর্মরত। সম্প্রতি তার বিসিএস জয়, স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: আপনার শৈশবের গল্প দিয়ে শুরু করতে চাই—আশিক ইবনে আজিজ: আব্বু সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকায় শৈশবে বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে থেকে বড় হয়েছি। তবে বেশিরভাগ সময় ঢাকায় থাকা হয়েছে। ক্লাস সিক্সে বিএএফ শাহীন কলেজ তেজগাঁওয়ে পড়া অবস্থায় ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন করি এবং টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাই। এরপর ক্লাস সেভেনে ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হই। সেভেন থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ক্যাডেট কলেজেই আবাসিক ছাত্র হিসেবে ছিলাম। ক্যাডেট কলেজের জীবন বেশ শৃঙ্খলে বাঁধা এবং ১২ বছর বয়স থেকেই সে জীবনের সাথে অভ্যস্ত হয়ে যেতে হয়েছিল। ছোট থেকেই খেলাধুলা, উপস্থিত বক্তৃতা, ছবি আঁকা, গান শেখা হতো। আরবি ভাষা শিখেছি। মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হওয়ার পর আমার সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলো বেড়ে যায়। দশম বিটিভি ইংলিশ পার্লামেন্ট ডিবেটে ২য় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষার কারণে পরবর্তী পর্যায়ে আর অংশগ্রহণ করা হয়নি।

জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?আশিক ইবনে আজিজ: পরিবারের পর্যাপ্ত সচ্ছলতার কারণে আর্থিকভাবে আমার পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোয় অ্যাকটিভ থাকতাম। পড়াশোনার সাথে ব্যালেন্স করে সেগুলো করার চেষ্টা করতাম।

Advertisement

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?আশিক ইবনে আজিজ: আমাদের ভার্সিটি থেকে বিসিএস দেওয়ার তেমন রীতি ছিল না। ২০১৫ সালের শেষের দিকে আমার স্নাতকোত্তর শেষ হয়। তারপর ২০১৬ সালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিই। সেখানে আমার একজন কলিগ ৩৫তম বিসিএসে গণপূর্ত ক্যাডারে যোগদান করেন। তখন তিনি আমাকে বিসিএস দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তা ছাড়া আমার মা একজন সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তা। তখন থেকেও বিসিএস দেওয়ার ইচ্ছা জাগে।

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?আশিক ইবনে আজিজ: আমি ২০১৬ সালের শেষের দিকে জবটা ছেড়ে দেই। তখন শুনছিলাম ২০১৭ সালে ৩৮তমের সার্কুলার দেবে। তখন এক কোচিং সেন্টারের ফেসবুক পেজে ‘৩৭তম বিসিএসই হোক আমার জীবনের প্রথম ও শেষ বিসিএস’ এ রকম হেডিংয়ে বিসিএস পরীক্ষার্থীর উদ্দেশে একটি দিকনির্দেশনামূলক লেখা চোখে পড়ে। পুরো লেখাটি পড়ে আমার খুব ভালো লেগেছিল। তখন মনে হয়েছিল, প্রিপারেশন নেওয়ার জন্য লেখাটা স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল। তখন থেকে লেখাটা ফলো করে আগাতে থাকি। কারণ আমার ভার্সিটিতে বিসিএস দেওয়ার তেমন রীতি ছিল না। তা ছাড়া ফ্যামিলি থেকে বিসিএস দেওয়ার প্রেসার আসেনি। তখন ঠিক করলাম ৩৮তম বিসিএস দেবো। এটাতে হলে হবে, না হলে দেশের বাইরে বা ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে জব নেবো। এরপর প্রিপারেশন নেওয়া শুরু করি। নিজের ঘাটতিগুলো বোঝার চেষ্টা করলাম।

ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজি, বাংলা ও সাধারণ জ্ঞান দেওয়া লাগে। তাই এসব বিষয়ে আগে থেকেই ভালো ধারণা ছিল। প্রিলির ক্ষেত্রে আগের বছরের প্রশ্নের প্যাটার্ন দেখলাম। কোর্চিংয়ে ভর্তি হলেও তেমন যাওয়া হতো না। প্রিলির ২-৩ মাস আগে বাসায় থেকেই প্রিপারেশন নিয়েছি। প্রিলির ধাপটা একটু কঠিন মনে হয়েছিল। তাই আগে থেকেই ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি। যাই হোক, প্রিলি দেওয়ার পর মনে হয়েছিল টিকে যাবো। কারণ পরীক্ষা ভালো হয়েছিল। বিসিএস লিখিতের ক্ষেত্রে আমি বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও সংবিধানের উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ায় এ বিষয়গুলো সম্পর্কে কম জানাশোনা ছিল। এ সময় কোচিংয়ে মডেল টেস্টগুলো দিয়েছিলাম। যাতে নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে জানা যায়। লিখিত পরীক্ষা ভালো হওয়ায় টিকে যাই। বিসিএসে প্রথম চয়েস পররাষ্ট্র ছিল। তাই পুরো ভাইবা ইংরেজিতে হয়েছিল। পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রশ্নই বেশি করা হয়েছে। আগে থেকেই ইংরেজিতে ভালো থাকায় ভাইবা ভালো হয়েছিল। ফাইনালি বিসিএসে রেলওয়ে ও প্রকৌশল ক্যাডার পাই।

জাগো নিউজ: পর্দার আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে?আশিক ইবনে আজিজ: চাকরি ছাড়ার পর ঢাকায় আব্বুর বাসায় ছিলাম। প্রিলির পর রিটেনের আগে পরিবার থেকে সাপোর্ট পেয়েছি। না হলে হয়তো পরীক্ষা দেওয়া হতো না। তা ছাড়া আমার বন্ধুদের থেকে সব সময় অনুপ্রেরণা পেয়েছি।

Advertisement

জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএস প্রিলির জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?আশিক ইবনে আজিজ: নতুনরা বিসিএস প্রিলির ক্ষেত্রে বিগত বছরের প্রশ্নগুলো দেখবেন। এতে তারা বুঝতে পারবেন, তাদের কোন কোন জায়গায় ঘাটতি আছে। প্রিলিতে ১০টি সাবজেক্ট থাকে। এর মধ্যে নিজেদের দুর্বল সাবজেক্টগুলোয় বেশি জোর দেবেন। তা ছাড়া প্রশ্নের প্যাটার্ন সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখবেন। পরীক্ষায় আসবে না এমন বিষয়গুলো এড়িয়ে যেতে হবে। টেকনিক্যালি পড়াশোনা করতে হবে। যাতে প্রিলি পাস করা যায়।

জাগো নিউজ: প্রিলির পর লিখিত প্রস্তুতি নিয়ে আপনার পরামর্শ—আশিক ইবনে আজিজ: বিসিএসে লিখিত পরীক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে যারা এগিয়ে থাকবেন, তাদের ক্যাডার পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বিজ্ঞান বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ছাত্ররা বিসিএসে এগিয়ে থাকে। লিখিতে মোট ৯০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়ে থাকে। লিখিতে বিজ্ঞানে ১০০, গণিতে ৫০ এবং মানসিক দক্ষতায় ৫০ নম্বর থাকে। এ বিষয়গুলোয় ব্যবসা ও মানবিক শাখার ছাত্ররা পিছিয়ে থাকে। দেখা যায়, তারা বিজ্ঞানের ছাত্রদের তুলনায় কম ক্যাডার পান। এ দুই শাখার পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে আগে থেকে ভালো প্রস্তুতি নিতে হবে। বিজ্ঞানের ছাত্ররা ২০০ নম্বরের বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে জোর দেবেন। এ বিষয়ে ভালো করতে পারলে লিখিতে এগিয়ে থাকবেন।

জাগো নিউজ: বিসিএস ভাইবার প্রস্তুতি কেমন হবে?আশিক ইবনে আজিজ: ভাইবার ক্ষেত্রে নিজের জেলা সম্পর্কে জানতে হবে। নিজের ইউনিভার্সিটি ও সাবজেক্ট সম্পর্কে জানতে হবে। আত্মবিশ্বাসী ও পজিটিভ চিন্তা থাকতে হবে। ভাইবায় একজন ক্যাডারকে মাঠপর্যাযে দেওয়া হলে তিনি কীভাবে তা হ্যান্ডেল করবেন, তা অ্যানালাইসিস করা হয়। তিনি ঘাবড়ে যান কি না। পাশাপাশি টেকনিক্যালি হতে হবে। ইংরেজিতে কথা বলতে পারলে ভালো হয়। পররাষ্ট্র ক্যাডারে পুরো ভাইবা ইংরেজিতে হতে পারে। তা ছাড়া ভাইবার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। তাহলে আত্মবিশ্বাসী থাকা যায়। ভাইবায় পোশাকের একটা ব্যাপার থাকে। ফরমাল ড্রেস পড়তে হবে। চুল ছোট করে রাখতে হবে। পরিপাটি ও গোছানো লুক নিয়ে যেতে হবে।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?আশিক ইবনে আজিজ: ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রেলওয়েতে অবদান রাখতে চাই। ভারতের মতো বাংলাদেশের রেলওয়েকে বিদ্যুতায়িত করার পরিকল্পনা আছে। কারণ তেলের চেয়ে বিদ্যুতে খরচ অনেক কম ও পরিবেশবান্ধব। যেহেতু আমি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়েছি, তাই আগে থেকেই এগুলো নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা ছিল। সরকারের সহযোগিতা পেলে রেলওয়েকে আধুনিক ও গ্রিন রেলওয়েতে পরিণত করবো।

এসইউ/এমএস