আজ থেকে অনেক কাল আগের কথা। এক গুরুর একজন অত্যন্ত স্নেহ ভাজন শিষ্য ছিল। অন্যদিকে সেই শিষ্যও তার গুরুকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করত। কিন্তু সেই শিষ্যটি অধ্যয়নের প্রতি বিমুখ ছিল। সে সবসময় নিয়মিত অভ্যাস করা থেকে বিরত থাকতেই ভালবাসতো।
Advertisement
সে সর্বদা আজকের কাজ কাল, কালকের কাজ পরশু, এভাবেই কাটিয়ে দিত। শিষ্যের এরকম স্বভাব গুরুকে ব্যাথিত করে। এরকম করে চললে শিষ্য যে জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে পাড়বে না। অন্যান্যদের তুলনায় পিছিয়ে পড়বে!
সেই শিষ্যটি কোনো কাজ দেখলেই, তা থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় থাকত। কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলে সর্বদা পিছিয়ে থাকত, অথবা সিদ্ধান্ত যদি নিয়েও নিত, তা ভুল সিদ্ধান্ত নিত। সে সর্বদা নিজের ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাসী। তার মতে, ভাগ্যে যা আছে তাইই হবে। এদিকে গুরু ঠিক করলেন, এভাবে চললে শিষ্য সমাজে কোনো অবস্থান পাবে না। তাই শিষ্যকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে হবে।
একদিন একটি সুন্দর কষ্টি পাথরের টুকরো হাতে নিয়ে গুরুদেব সেই শিষ্যটিকে ডাকলেন। তাকে বললেন, আমি তোমাকে এই জাদুর পাথরটি দিচ্ছি, দুই দিনের জন্য তোমার কাছে এই পাথরটি থাকবে। কারণ আমি অন্য গ্রামে যাব। এটি তোমাকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিলাম। মনে রাখবে এটি কোনো সাধারণ পাথর নয়, এই পাথর দিয়ে যদি কোনো লৌহ বস্তুর সংস্পর্শে নিয়ে আসা যায়, তাহলে সেই লৌহ বস্তুটি স্বর্ণতে পরিণত হয়ে যাবে। মনে রাখবে দুই দিন পড় সকালেই আমি তোমার কাছে থেকে এই পাথরটিকে নিয়ে নিব।
Advertisement
পাথরটির দিব্য শক্তির কথা শুনে শিষ্যটি অত্যন্ত আনন্দিত হলো। এরপর সে একদিন শুধু এটা ভেবেই কাটিয়ে দিলো যে, সে যদি এই পাথরটিকে অনেক অনেক লৌহ বস্তুর সংস্পর্শে নিয়ে আসে, তাহলে সেগুলো স্বর্ণে পরিণত হয়ে যাবে এবং সে রাতারাতি অনেক ধনী হয়ে যাবে।
যখন তার কাছে অনেক স্বর্ণ থাকবে, তখন সে অনেক সুখী, ধনবান হয়ে যাবে। সে বিশাল বড় প্রাসাদ বানাবে, তাতে অনেক চাকরবাকর থাকবে। সে শুধুই আরাম করবে আর জলের গ্লাসটা পর্যন্ত সে নিজে তুলে খাবে না। সবই চাকরদের দিয়ে করাবে।
পড়ের দিন সকালে সে ভাবল, আজই ধনী হওয়ার শেষ দিন, কারণ গুরুদেব কালই তার কাছ থেকে এই অমূল্য পাথরটা নিয়ে নিবেন। তাই যা করার আজকেই করতে হবে, এই পাথরটির দৈব শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। সে ঠিক করল, সে বাজারে গিয়ে অনেক অনেক লৌহ বস্তু কিনে নিয়ে আসবে, আর সেগুলোকে স্বর্ণতে পরিণত করবে।
কিন্তু পরক্ষণেই সে আবার ভাবল, সারাটা দিন পড়ে আছে, এত তারা কিসের? তার চেয়ে বরং একটু ঘুমিয়ে নিই। তার যখন ঘুম ভাঙল তখন দুপুর হতে চলেছে। সে স্নান করে, দুপুরের খাবার খেয়ে লৌহ জিনিস আনতে যাওয়ার কথা ভাবল। কিন্তু তার আবার দুপুরের খাবার খাওয়ার পড় একটু বিশ্রাম নেওয়ার অভ্যাস।
Advertisement
এদিকে দুপুরের খাবার খাওয়ার পড়, কখন যে বিশ্রাম নিতে নিতে তার চোখ বুজে এসেছে, তা সে নিজেও জানে না। যখন তার ঘুম ভাঙল, তখন সূর্য দিগন্তে পৌঁছেছে। সে তড়িঘড়ি বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। কিন্তু যেতে যেতে রাস্তার মাঝেই সে তার গুরুদেবকে দেখল। সে গুরুদেবের চরণে প্রণাম জানিয়ে, আরেকদিন বেশি সেই পাথরটি তার কাছে রাখার আকুতি মিনতি করতে লাগল। কিন্তু গুরুদেব বললেন, আমি কাল সকালেই এই পাথরটা নিয়ে নিব।
এরপর গুরুদেবের সঙ্গে কথা বলতে বলতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। গুরুদেব বিদায় নেওয়ার পর সে লোহার দোকানে গিয়ে দেখে, দোকানি দোকানে তালা ঝোলাচ্ছে। অনেক মিনতি করেও দোকানি দোকান খুলল না।
মুহূর্তের মধ্যেই সেই শিষ্যটির ধনী হওয়ার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। সে বৃথা সময় ব্যয় করার জন্য নিজেই নিজে উপর দোষারোপ করতে লাগল। কিন্তু তখন আর নিজের উপর দোষারোপ করে কোনো লাভ ছিল কি?
শিক্ষা: জীবনে চলার পথে কোনো না কোনো সময় কোনো সুযোগ আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েই যায়। কিন্তু আমরা নিজেদের আলস্যতার কারণে অনেক সময় সেই সুযোগ হারিয়ে ফেলি। এরপর যখন কিছুই করার থাকে না, তখন নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করতে থাকি, ভাবি- আমাদের ভাগ্যে ছিল না, তাই হয়নি বা পাইনি। তাই সময়ের কাজ সময়ে করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
লেখা: সংগৃহীতছবি: সংগৃহীত
প্রিয় পাঠক, আপনিও অংশ নিতে পারেন আমাদের এ আয়োজনে। আপনার মজার (রম্য) গল্পটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়। লেখা মনোনীত হলেই যে কোনো শুক্রবার প্রকাশিত হবে।
কেএসকে/
। এদের মাছ ধরার অভিনব কৌশল জানলে অবাক হবেন বৈকি!
এরা শিকারের জন্য যখন অপেক্ষা করে তখন নিজেদের ডানাকে ছাতার মতো মেলে ধরে। দেখে মনে হবে কচুরিপানা বা কোনো জলজ গাছের শুকনা স্তূপ। এর নিচে পানিতে ছায়া পরে। আর সেই ছায়ায় যখনই মাছ আসে তখনই ধরে ফেলে।
ডানা প্রসারিত করে নিজেকে একেবারে ঢেকে ফেলে ব্ল্যাক এগ্রেটস। এতে ঢাকা পড়ে তাদের তীক্ষ্ণদৃষ্টি। কালো সারসদের এই শিকারি কৌশলকে বলা হয় 'ক্যানোপি ফিডিং'। এটিকে প্রাণীজগতের সবচেয়ে গোপন কৌশলগুলোর অন্যতম একটি বলে ধরা হয়।
যদিও আফ্রিকান কালো সারসদের এই অদ্ভুত কৌশল ব্যবহারের কারণ এখনো স্পষ্ট নয়, তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, কৌশলটির মাধ্যমে পাখিটি নানা সুবিধা পেয়ে থাকে।সেই সঙ্গে নিজেদের এই অসাধারণ কৌশলই কালো সারসকে নিঃসন্দেহে প্রাণীজগতের এক অন্যতম গুপ্ত শিকারির পরিচিতি দিয়েছে।
এদের পা অন্যান্য সারসের মতোই বেশ লম্বা। পানিতে হাঁটার সময় কোনো শব্দই করে না। অগভীর পানিতে ধীরে ধীরে হেঁটে গিয়ে নিজের ডানা ছড়িয়ে ছাতার মতো করে ফেলে, যেন আলো প্রবেশ করতে না পারে। ফলে সেই অন্ধকারে ছোট মাছেরা বড় শিকারিদের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতে চায়।
এতে উল্টো নিজের মৃত্যুর দিকেই ধাবিত হয়। ডানার ছায়ার কারণে ব্ল্যাক এগ্রেটসরা ভালো করে মাছ লক্ষ্য করতে পারে। এরপর নিজেদের লম্বা চঞ্চুর সাহায্যে পানি থেকে শিকার তুলে নেয়।
ব্ল্যাক এগ্রেটসরা সাধারণত মাটির নিচের ছোট আকৃতির শিকারের দিকেই বেশি নজর দেয়। তাই এটা তাদের শিকারি কৌশলের একটি অংশ।
মজার ব্যাপার হলো, আফ্রিকান সারস পাখির পায়ের রঙ হলুদ। যা সহজেই শিকারকে তাদের লক্ষ্য থেকে ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম। অন্যান্য সারসের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটলেও আফ্রিকান কালো সারসদের বেলায় এটি একেবারেই উল্টো।
এদের ডানার ছায়া ও পায়ের হলুদ উজ্জ্বল রং মিলে মাছকে আরও প্রলুব্ধ করে মৃত্যুর দিকে টেনে আনতে পারে বলেও কেউ কেউ মনে করেন।
সূত্র: অডিটি সেন্ট্রাল
কেএসকে/এমএস