সার্বিক নিরাপত্তা ও নাশকতা ঠেকাতে মসজিদে নজরদারির পাশাপাশি মসজিদ কেন্দ্রীক উঠাবসা করা মানুষদেরও নজরদারিতে আনছে গোয়েন্দা পুলিশ। এতে বাদ যাচ্ছে না তাবলীগ জামাতও। মসজিদ কেন্দ্রীক চলাফেরা বেশি তাবলীগ জামাতের। আর তাই এখন থেকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই মসজিদে অবস্থান করতে হবে তাবলীগ জামাত সদস্যদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে অর্ধশত নতুন জঙ্গি সংগঠন। মসজিদ, মাদ্রাসা ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা জুড়ে এসব জঙ্গি গোষ্ঠীর আস্তানা গড়ে উঠছে। আর এ কারণেই ঘনবসতিপূর্ণ এমন এলাকাসহ মসজিদগুলোতে নজরদারি অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বেশি নজরদারিতে থাকবে তাবলীগ জামাতের সদস্যরা। কারণ তাদের এখানে উঠাবসা বেশি।ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা (ডিবি) নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, তাবলীগ জামাতের ছত্রছায়ায় নাশকতাকারীরা যাতে কোনো ধরনের অপতৎপরতা চালাতে না পারে সেজন্যই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, সম্প্রতি জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে এমন কয়েকজন যুবককে তাবলীগ জামাতের ছত্রছায়ায় মসজিদে মসজিদে অবস্থান নেয়ার তথ্য জানা গেছে। তাবলীগের সঙ্গে উঠতি বয়সি কিছু যুবক জঙ্গি সদস্যদের মাধ্যমে বড় ধরণের একটা নাশকতার পরিকল্পনা সম্প্রতি করেছিল। কিন্তু মিরপুরে একটি বাড়ি থেকে কয়েকজন জঙ্গি সদস্য আটক ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধারের পর তা ভেস্তে যায়। তিনি বলেন, মসজিদ কেন্দ্রীক আবারো যাতে কোনো ধরণের নাশকতার চেষ্টা না চলে সেজন্যই তাবলীগ জামাতের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যে বা যারাই তাবলীগে বের হবেন কাকরাইল মসজিদের ঊর্ধ্বতন তাবলীগ জামাতের মুরুব্বীদের কাছ থেকে লিখিত অনুমতিপত্র ছাড়া মসজিদে রাত্রি যাপন করতে পারবেন না। ইতোমধ্যে এই নিয়ম চালু করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের একাধিক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সূত্রে জানা গেছে, মসজিদ কেন্দ্রীক নজরদারি ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে টহল বাড়ানো হয়েছে। মসজিদের মুয়াজ্জিন ও ঈমামের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে পুলিশ। অপরিচিত কোনো ব্যক্তির মসজিদে থাকার বিষয়টি জানলেই খবর যাবে থানায়। এরপর নেয়া হবে আইনি ব্যবস্থা। এজন্য আগেভাগেই মসজিদের ঈমাম ও মুয়াজ্জিনদের নাম পরিচয় সংগ্রহ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।এ ব্যাপারে শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম শাহীন মণ্ডল জাগো নিউজকে বলেন, আমার এলাকার প্রত্যেকটি মসজিদ নজরদারিতে রয়েছে। পাড়ার তাবলীগ জামাতের লোকজনের সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। কাকরাইল মসজিদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতিপত্র ছাড়া কাউকে মসজিদে থাকতে দেয়া হচ্ছে না। একই তথ্য জানান, কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার শামীম হোসেন।এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তাবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বীদের একজন মুশফিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। পরে অপর শীর্ষ মুরুব্বী সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, হ্যাঁ, তথ্যটি সত্য। আমাদের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে অনুরোধ, নিরাপরাধ কোনো মুসল্লি ও তাবলীগ সদস্য যেন হয়রানির শিকার না হয়। নিরাপত্তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট হওয়ায় আমাদের দায়িত্ব তো সহযোগিতা করা।উল্লেখ্য এর আগে, পুলিশ সদর দফতরে ওলামা মশায়েখদের সঙ্গে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল ইসলাম রাজধানীর মসজিদগুলোতে সাদা পোশাকে নজরদারি করার জন্য পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যদের নির্দেশ দেন।জেইউ/জেডএইচ/এমএস
Advertisement