মতামত

সৃষ্টিকর্তা পরম ক্ষমাশীল

আজ পবিত্র মাহে রমজানের মাগফিরাতের দশকের নবম দিন আমরা অতিবাহিত করছি। পবিত্র মাহে রমজানের দিনগুলো দ্রুতই যেন কেটে যাচ্ছে। নিজেকে পরিবর্তন করার এবং পাপ ক্ষমার সর্বোত্তম মাস হল রমজান। অথচ এখনো হৃদয়ে অনেক ধরনের মন্দের বসবাস। খারাপ কাজ যেন আমার কাছে কোন কিছুই মনে হচ্ছে না।

Advertisement

পবিত্র এ মাসেও আমি নিজেকে পরিবর্তনের কোন চেষ্টা করছি না। সততা, ন্যায়বিচার আর বিশ্বস্ততা কাকে বলে তা যেন ভুলে বসেছি। নিজ স্বার্থের জন্য আমি সবই করছি কিন্তু আমার প্রতিবেশি কত কষ্টে দিনাতিপাত করছে তার সাহায্য না করে উল্টো তার ক্ষতি করার চেষ্টা করছি। যেভাবে পারছি একে অন্যের হক মেরে খাচ্ছি। আর এ কারণেই ঘরে বাইরে নেই শান্তি। সমাজে শান্তির জন্য সততা ও ন্যায়বিচারের বড়ই প্রয়োজন। রমজান আসে আমাদেরকে পুণ্যের পথে চলার প্রশিক্ষণ দিতে কিন্তু এ থেকে যদি আমি লাভবান না হতে পারি তাহলে আমি বড়ই দুর্ভাগা।

আরেকটি বিষয়, আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন তার ওপর কেন আমি সন্তুষ্ট হতে পারছি না। মানুষের অপ্রয়োজনীয় চাহিদা যখন বেড়ে যায় তখনই সে বিভিন্ন খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে। তাই আমার যা আছে তা নিয়েই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে।

কবি শেখ সাদি কত চমৎকারই না বলেছেন, ‘শুকনা রুটির ওপর সন্তুষ্ট থাকব এবং জামায় তালি দিতে থাকবো। কেননা অন্যের শাস্তির বোঝা উঠানোর চেয়ে নিজে শ্রমের কষ্ট বহন করা উত্তম।’ রমজান আমাদেরকে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকার শিক্ষা দেয়। আমরা যদি সর্বক্ষেত্রে তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকতাম তাহলে আমার দ্বারা মন্দ কাজ সংঘটিত হওয়া সম্ভব নয়।

Advertisement

রমজানের দিনগুলোতে আমরা যদি একান্তই আল্লাহর জন্য রোজা রাখি এবং নিজের দোষ-ত্রুটির ক্ষমা চাই, তাহলে তিনি ক্ষমা করবেন, শুধু ক্ষমাই করবেন না বরং আমাদের পূর্বেকার সকল পাপও ক্ষমা করবেন বলে আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন।

যেমন হজরত আবু সাঈদ খুদার (রা.) বর্ণনা করেন, হুজুর (সা.) বলেছেন, ‘যখন কেউ রমজানের প্রথম দিন রোজা রাখে তখন তার পূর্বেকার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। এমনিভাবে রমজান মাসের সমস্ত দিন চলতে থাকে এবং প্রতি দিন তার জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা সকালের নামাজ থেকে শুরু করে তাদের পর্দার অন্তরালে যাবার আগ পর্যন্ত তার ক্ষমার জন্য দোয়া করতে থাকে’ (কানযুল উম্মাল, কিতাবুস সওম)। একবার মহানবী (সা.) বলেন, ‘ফেরেশতা রোজাদারের জন্য দিন-রাত এস্তেগফার করতে থাকে’ (মাজমাউজ যাওয়ায়েদ)।

এছাড়া হাদিসে এ বিষয়ে আরো বর্ণিত হয়েছে যে, হজরত আব্দুর রহমান বিন আওফ (রা.) বর্ণনা করেন, হুজুর (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ইমানের সাথে সোয়াব এবং এখলাসের সাথে ইবাদাত করে সে নিজ গুনাহ থেকে এভাবে পবিত্র হয়ে যায় যেভাবে সেদিন সে তার মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম লাভ করেছিল’ (সুনানে নিসাঈ, কিতাবুস সওম)।

অপর একটি হাদিসে হজরত আবু আমামা বর্ণনা করেন, আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কছে আরয করলাম যে, ‘হে আল্লাহর রসুল! আমাকে এমন কোন কাজ বলে দিন যার মাধ্যমে আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবো। তখন হুজুর (সা.) বললেন, আবশ্যকীয় কর্ম হিসেবে রোজা রাখো। কেননা এটি সেই আমল যার কোন উপমা বা পরিবর্তন নেই’ (নিসাঈ, কিতাবুস সওম)।

Advertisement

অপর এক হাদিসে হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণনা করেন, হুজুর (সা.) বলেছেন, ‘যে বান্দা আল্লাহর পথে এক দিন রোজা রাখে আল্লাহতায়ালা তার চেহারা থেকে আগুনকে দূরে সরিয়ে দেন’ (সহি মুসলিম)।

মোটকথা যে ব্যক্তি রোজার হেফাজত করে এবং পরিপূর্ণ শর্তসাপেক্ষে রোজা রাখে আর এ দিনগুলো ইবাদতে রঙিন করে তার জন্যই কেবল এই রোজা শয়তানি শক্তির মোকাবেলায় ঢাল হিসেবে কাজ করবে।

রমজান মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও যদি আমরা রমজানের দিনগুলোর ন্যায় আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকি তাহলে রমজানে অর্জিত ঢাল সব সময়ই আমাদেরকে শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করবে। কেননা এই ঢাল রোজাদারের নিকট বিদ্যমান থাকে।

আসুন না, পবিত্র মাহে রমজানের অবশিষ্ট দিনগুলো একান্ত নিষ্ঠার সাথে ইবাদতে রত থেকে অতিবাহিত করার চেষ্টা করি। দুনিয়ার সকল পাপ কাজ থেকে নিজেকে মুক্ত করে কেবল আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রোজা রাখি। আমরা যদি এমনটি করি, তাহলে একদিকে যেমন আমাদের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন তেমনি আমরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবেও পরিচয় লাভ করবো।

এছাড়া রমজানের ইবাদত আমাদের হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি এবং বান্দার প্রতি এমন এক ভালবাসা সৃষ্টি করবে যার মাধ্যমে আমরা খুঁজে পাব জান্নাতের প্রশান্তি।

দয়াময় আল্লাহর কাছে আমাদের প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের রোজাগুলো গ্রহণ করে নেন আর আমাদেরকে সকল পাপ থেকে রক্ষা করেন, আমিন।

এইচআর/এএসএম