শসা, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, টমেটো, মরিচ, করলা, বেগুন, তরমুজ, স্কোয়াস ইত্যাদি ফসলে মালচিং পদ্ধতি ব্যবহারে সুফল পাওয়া যাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় উদ্যান ফসলের মালচিং পদ্ধতি এখন ব্যবহার হচ্ছে মাঠ ফসলেও।
Advertisement
বিভিন্ন জাতের সবজির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত মালচিং পেপার কেবল মাত্র আর্দ্রতাই ধরে রাখছে না, ফসলে পুষ্টিও যোগাচ্ছে। পাশাপাশি কমছে আগাছা বালাই নাশকের ব্যাবহার। তাই কৃত্রিম মালচিং পদ্ধতি চাষাবাদে লাভবান হচ্ছেন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কৃষকরা।
সাদা পলিথিনে ঢাকা ফসলি মাঠ। তবে ছোট ছোট ছিদ্র দিয়ে উঁকি দিচ্ছে ঝাপালো পাতাসহ সবুজ গাছ। ক্ষেতকে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়ার এই প্রযুক্তিকে বলা হয় কৃত্রিম মালচিং। মূলত মাটির আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ ও আগাছা থেকে ক্ষেতকে রক্ষায় মালচিং পদ্ধতি এখন ব্যবহার করা হচ্ছে।
জানা যায়, একটি বেসরকারি এনজিও ‘এসডিএস’র বাস্তবায়নে এবং ‘পিকেএসএফ’র অর্থায়নে কৃষি ইউনিটের আওতায় ২০১৫ সালে জাজিরা উপজেলার সেনেরচর ইউনিয়নের ছোট কৃষ্ণপুর লুৎফর আকন নামে একজন কৃষক মালচিং পদ্ধতিতে প্রথম শসা চাষ করেন।
Advertisement
শসা চাষ করে সফলতা পান লুৎফর। সেই থেকে জাজিরায় মালচিং পদ্ধতিতে চাষ বাড়তে থাকে। এখন উপজেলায় প্রায় ২০০ একর জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হচ্ছে। শসা, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, টমেটো, মরিচ, করলা, বেগুন, তরমুজ, স্কোয়াস ইত্যাদি ফসল চাষ হচ্ছে।
লুৎফর আকন জানান, প্রথম অবস্থায় তার বাবার ১৬ শতক জমিতে সবজি চাষ শুরু করেন। মালচিং করে উন্নত জাতের শসা চাষ করেন। এতে খরচ হয়েছিল ২৩ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে আয় হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
এখন এলাকার ৬ বিঘা জমিতে একে একে শসা, করলা, চিচিংগা, টমেটো, ধুন্দুল চাষ করছেন। তার জমিতে পাঁচজন শ্রমিক কাজ করছেন। সবজি বিক্রি করে প্রতি বছর সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় হচ্ছে তার।
জাজিরার মিরাশার এলাকার সুমন চোকদার, কুদ্দুছ মোল্লা ও মামুন শেখ মালচিং পদ্ধতি কৃষি ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, শসা, করলা, চিচিংগা, টমেটো, ধুন্দুল গাছে ঝুলছে সবজি। কৃষকরা জানান, মালচিং বিষমুক্ত সবজি চাষের একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি।
Advertisement
গাছপালার গোড়া, সবজি ক্ষেত ও বাগানের বেডের জমি বিশেষ পদ্ধতিতে ঢেকে চাষাবাদের পদ্ধতিকে বলে মালচিং। এখন প্লাস্টিক মালচিংয়ের ব্যবহার জনপ্রিয় হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে ফলন ভালো হওয়ায় এবং বাজার মূল্য ভালো থাকায় তাদের লাভ হচ্ছে।
এসডিএস’র কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. খাজি আলম বলেন, এসডিএস কর্তৃক বাস্তবায়িত পিকেএসএফ’র অর্থায়নে ২০১৫ সালে আমরা জাজিরার কৃষকদের মাধ্যমে মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করি এবং গবেষণাও করি।
এতে দেখা যায় ফলন ভালো হয়। এই পদ্ধতিতে ঘাস হচ্ছে না, সারের পরিমাণ কম লাগে, গাছও দ্রুত বৃদ্ধি পায়। সর্বপরি এ পদ্ধতিতে চাষে রোগ জীবাণু কম হয়। ফসল ভালো হওয়াতে কৃষক এই পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। এবছর উপজেলায় প্রায় ২০০ একর জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হচ্ছে। আমরা কৃষকদের পাশে থেকে তাদের সহায়তা করছি।
জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জামাল হোসেন বলেন, আমাদের বর্তমান পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি সম্প্রসারণে একটি উদ্যোগ মালচিং পদ্ধতিতে চাষ। এই পদ্ধতিতে চাষ করলে একদিকে যেমন খরচ কম লাগে, অন্যদিকে সেচ ও বালাই নাশক খরচ কমে।
এছাড়া সূর্যের আলোর রিফ্লেকশনের কারণে গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। বছরের যেকোন সময় মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করা যায়। এই মালচিং পদ্ধতির প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করতে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করছি।
এমএমএফ/জেআইএম