ধর্ম

আত্মশুদ্ধির মাসেও তাকওয়া অর্জনে বাধা কীসে?

নাজমুল হাসান সাকিব

Advertisement

পবিত্র রমজানুল মোবারক আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও তাঁর নৈকট্য অর্জনের মাস। এ মাসে বিশেষ কিছু আমল সম্পাদনের বেশ সুযোগ পাওয়া যায়। আমরা আল্লাহতায়ালাকে যতটা আন্তরিকতার সঙ্গে ডাকব, আল্লাহতায়ালাও ততটা আন্তরিকতার সঙ্গে আমাদের ডাকে সাড়া দেবেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ : ১৯৫৮)।

পবিত্র রমজানুল মোবারক তাকওয়া অর্জনের মাস। আত্মশুদ্ধির মাস। পাপ মোচনের মাস। নিজের আত্মাকে সম্পূর্ণরূপে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার মাস। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনগণ! তোমাদের পূর্ববর্তীদের ন্যায় তোমাদের ওপরও রোজা ফরজ করা হয়েছে; যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা : ১৮৩)। আয়াতের শেষাংশ থেকে স্পষ্টভাবে এ কথা বোঝা যায়, তাকওয়া বা পরহেজগারির শক্তি অর্জনে রোজার একটা বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এতে মানুষ মুত্তাকি হয়। (মাআরিফুল কোরআন)।

তাকওয়া অর্জন করা বা মুত্তাকি হওয়ার অর্থ কী?তাকওয়া অর্জন করা বা মুত্তাকি হওয়ার অর্থ হলো, রোজাদার ব্যক্তি শয়তানি সব ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে পবিত্র হয়ে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য প্রস্তুত হবেন। গোনাহের সব পথ ও রাস্তা বন্ধ করে প্রবৃত্তির তাড়না নিয়ন্ত্রণ করবেন। এতে একজন মোমিন মানবিক গুণাবলির উৎকর্ষ সাধনে সফল হয়। মোটকথা, আত্মশুদ্ধির সারকথা হলো—তাকওয়া অর্জন ও পাপ বর্জন। (তাফসিরে কাবির)।

Advertisement

রোজা কেন পরিশুদ্ধকারী?রোজা মানুষের তাকওয়া অর্জনে সহায়তা করে। কেননা, এর দ্বারা কুপ্রবৃত্তিকে দমন করা সহজতর হয়। ফলে মানুষ সব ধরনের মন্দ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে পারে। দুনিয়ার সুখ-স্বাচ্ছ্যন্দ থেকে নিজেকে ফিরিয়ে রাখতে সক্ষম হয়। তা ছাড়া রোজা মানুষের পেট ও লজ্জাস্থানের শক্তি বিনষ্টকারী। আর মানুষ দুনিয়াতে যা কিছু করে, সব এ দুটির জন্যই। গোনাহের বড় একটি অংশ এসবের দ্বারাই সংঘটিত হয়। তাই যদি এ দুটির শক্তি নষ্ট করা যায়, তাহলে নষ্ট করা যাবে গোনাহের যত্তসব চাহিদা। ফলে মানুষ সব পাপাচার থেকে হেফাজতে থাকতে পারবে। (তাফসিরে কাবির, সুরা বাকারা : ১৮৩ নং আয়াতের তাফসির)। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে না, তারা যেন রোজা রাখে। কারণ, রোজা যৌন প্রবৃত্তি নিবৃত্ত করে।’ (বোখারি : ২৬৮৫, মুসলিম : ৩৪৬৬)।

মুত্তাকি হচ্ছে না কেন?মোমিন বান্দাদের আত্মশুদ্ধি ও মানবিক গুণাবলির উৎকর্ষ সাধন এ মাসে সিয়াম পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য। আত্মশুদ্ধির সারকথা হলো, তাকওয়া অর্জন ও পাপ বর্জন। পবিত্র রমজানে সিয়াম পালন করা সত্ত্বেও মানুষ মুত্তাকি কেন হচ্ছে না? এর উত্তরে বলা যায়, গোনাহের দ্বার উন্মুক্ত রেখে নেকির কাজ কখনও ফায়দাজনক হতে পারে না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকতে না পারে, তার পানাহার থেকেও বিরত থাকার কোনো প্রয়োজন নেই।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ : ১৯৯৯)।

অর্থাৎ অবান্তর মিথ্যা ও অশ্লীল কথাবার্তা ও গোনাহের কাজকর্ম থেকে কোনো মোমিন যদি বিরত থাকতে না পারে, তাহলে কি প্রয়োজন তাদের রোজা রাখার? কেননা, রোজা কেবল উপবাস করাকে বলে না; বরং প্রবৃত্তির তাড়না নিয়ন্ত্রণ করা, প্রচণ্ড রাগকে দমন করা এবং নফসে আম্মারাকে নফসে মুতমাইন্যার অনুগত করা। অতএব, যেহেতু এ সবের কিছুই অর্জন হচ্ছে না, সেহেতু তার রোজা কেবল উপবাসেরই নাম। (মিশকাতুল মাসাবিহের পাদটিকা)।

তাকওয়া কীভাবে অর্জন করা যায়?আল্লাহতায়ালার ইবাদত করার মাধ্যমে অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে লোকসকল! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ইবাদত করো, যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন। তাতে আশা করা যায়, তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পারবে।’ (সুরা বাকারা : ২১)। তাকওয়া অর্জনে পবিত্র রমজান উপলক্ষে কিছু জরুরি মৌলিক আমল রয়েছে। এ ছাড়া সাধ্যমতো আরও বেশি বেশি আমল করা চাই।

Advertisement

বিশেষ আমল১. গোনাহের সব পথ ও পদ্ধতি বন্ধ করতে হবে। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় মনের সব চাহিদা উপেক্ষা করতে হবে। এই গরমের মৌসুমে রোজা রেখে মানুষের মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠে। তখন জবান খুব কম মানুষই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অধিকন্তু জবান এবং নজরের দ্বারা গোনাহ বেশি হয়। তাই জবান ও নজরের হেফাজত করতে হবে।

২. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে জামাতের সঙ্গে পড়া চাই; বিশেষ করে তারাবি। তারাবির ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে তারাবির নামাজ পড়বে, সে গোনাহ থেকে এরূপ পবিত্র হবে, যেরূপ নিষ্পাপ শিশু মাতৃগর্ভ থেকে নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়।’ (সুনানে নাসাঈ : ২৩৯)।

৩. নিয়মিত মহাগ্রন্থ আল কোরআনের তেলাওয়াত করা। নিজে পড়তে পারলে তো ভালো, নয়তো কারও পাশে বসে শ্রবণ করা চাই।

৪. ইফতার ও সেহরির সময় আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা। পাপ মুক্তির আবেদন করা। সব গোনাহের জন্য রবের কাছে লজ্জিত হওয়া।

লেখক : শিক্ষার্থী, (ইফতা ১ম বর্ষ) আল মারকাজুল ইসলামী, বাংলাদেশ

মুনশি/এসইউ/জিকেএস