দেশজুড়ে

মৃৎশিল্পীদের সেই ব্যস্ততা আর নেই

একসময় বৈশাখকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করতেন মৃৎশিল্পের কারিগররা। তবে এখন সবকিছুতেই আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃৎশিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। কিন্তু বংশ পরম্পরা ধরে রাখতে এবং জীবিকা নির্বাহের তাগিদে অনেকেই এখনো এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন।

Advertisement

এরকম মৃৎশিল্পের সমৃদ্ধ এক পল্লী ছিল মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পূর্ব নন্দিউড়া গ্রাম। এ গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। হাড়ি, পাতিল, কলস, বাটিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন মাটির তৈরি সামগ্রী তৈরি করতেন তারা। পাশাপাশি বৈশাখ এলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় মাটির সামগ্রীসহ বিভিন্ন মেলার জন্য খেলনা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করতেন তারা। দুই দশক আগেও এমন দৃশ্য চোখে পড়তো ওই গ্রামে। তবে মাটির জিনিসপত্রের আগের মতো চাহিদা না থাকায় এখন কেবল অল্প কিছু কলস, থালা-বাসনসহ নিত্যসামগ্রী তৈরি করেন গ্রামটির মৃৎশিল্পীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, কয়েক বছর আগেও পূর্ব নন্দিউড়া গ্রামের ১৫ পরিবার এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিল। বর্তমানে কেবল তিনটি পরিবার বাপ-দাদার পেশাকে টিকিয়ে রাখতে এখন এ পেশায় জড়িত আছেন। গ্রামটির অনেকেই তাদের পরের প্রজন্মকে এ পেশায় আসতে নিরুৎসাহিত করছেন। এর মূল কারণ মানুষ এখন মাটির তৈরি জিনিসের চেয়ে মেলামাইন, প্লাস্টিককে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। তাই মাটির তৈজসপত্রের বেচাকেনা এখন খুবই কম।

পূর্ব নন্দিউড়া গ্রামের মৃৎশিল্পের কারিগর হরেন্দ্র পাল। বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে মাটির হাড়ি, পাতিল, কলস, বাটি ও খেলনাসামগ্রী তৈরি করেন তিনি। তবে আগের মতো মেলা বা উৎসব না হওয়ায় কাজের তেমন চাপ থাকে না।

Advertisement

হরেন্দ্র পাল জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের বাড়ির বেশিরভাগ লোকই মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিল। একসময় মাটির তৈরি এসব জিনিসের চাহিদা থাকলেও আধুনিকতার মারপ্যাঁচে মানুষ এখন আর এসবের দিকে ঝুঁকছে না।

তিনি আরও বলেন, এখন আমরা মৌসুমী কারিগর হয়ে গেছি। বাপ-দাদার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে মাটির তৈরি এসব পাত্র বানাচ্ছি। আমাদের পরের প্রজন্ম এ কাজ শেখেনি। হয়তো আমাদের পর এ শিল্প আর টিকে নাও থাকতে পারে।

আরেক মৃৎশিল্পী উপেন্দ্র পাল জাগো নিউজকে বলেন, এক সময় এ শিল্প আর টিকে থাকবে না। মৃৎশিল্প তৈরির মাটি পাওয়া যায় না। বাসন পোড়ানোর জন্য জ্বালানি কাঠের সংকট। করোনার প্রভাবে গত দুইবছর ধরে বেচাকেনা তেমন নেই। বাড়িতে শুধু ফরমায়েসি কাজ করছি।

নিবারণ চন্দ্র পাল জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি কোনো সাহায্য সহযোগিতা না থাকায় বিলুপ্তির পথে মৃৎশিল্প। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে হয়তো শেষ রক্ষা হতে পারে এ শিল্পের।

Advertisement

রাজনগর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা বাবুল সূত্রধর জাগো নিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত মৃৎশিল্পের জন্য কোনো সহযোগিতার সুযোগ নেই। সরকারি কোনো প্রজেক্ট আসলে আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবো।

আব্দুল আজিজ/এমআরআর/এএসএম