সাহিত্য

প্রথম রয়্যালিটির টাকা সুবিধাবঞ্চিতদের দেই: রাহিতুল ইসলাম

গল্পটা প্রেমের হোক কিংবা বিচ্ছেদের; সাফল্যের হোক কিংবা প্রতিকূলতার—রাহিতুল ইসলামের লেখায় বরাবরই বিশেষভাবে ফুটে ওঠে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ভিন্ন ভিন্ন দিকের কথা। তার উপন্যাসে নায়ক-নায়িকার মতো আইসিটি শিল্পও সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকে। রাহিতুলের লেখার উপজীব্য কখনো ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার, কখনো টেলিমেডিসিন সেবা, কখনো আবার ই-কমার্স ব্যবসা। বিষয় নির্বাচনে এভাবেই বছরের পর বছর নিজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে চলেছেন তরুণ এ সাহিত্যিক। জয় করে যাচ্ছেন পাঠকদের মন।

Advertisement

সম্প্রতি লেখালেখি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কথাশিল্পী ও গণমাধ্যমকর্মী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—

জাগো নিউজ: লেখালেখিতে কীভাবে এলেন? এ পর্যন্ত আপনার কতটি বই প্রকাশ হয়েছে?রাহিতুল ইসলাম: ২০০৯ সাল থেকে আইটি সাংবাদিকতা করতে এসে দেখলাম, এ শিল্পখাত নিয়ে মানুষের মধ্যে খুব একটা সচেতনতা তৈরি হয়নি। তাই তখন থেকেই আমি এ বিষয় নিয়ে লিখতে শুরু করি। তবে আমার জীবনে ও লেখালেখির পেছনে সাবেক বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান স্যার ও কবি রফিক আজাদের অনেক ভূমিকা রয়েছে।

এ পর্যন্ত আমার প্রায় ১১টির মতো বই প্রকাশিত হয়েছে। যার মধ্যে ‘আউটসোর্সিং ও ভালোবাসার গল্প’, ‘চরের মাস্টার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার’, ‘কেমন আছে ফ্রিল্যান্সার নাদিয়া?’, ‘হ্যালো ডাক্তার আপা’ ও ‘ভালোবাসার হাট-বাজার’ উপন্যাস বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

Advertisement

জাগো নিউজ: তথ্যপ্রযুক্তি খাতের গল্পগুলো আপনার লেখায় উঠে আসে, কেমন সাড়া পাচ্ছেন তাতে?রাহিতুল ইসলাম: আমার গল্পগুলো বাস্তব ও জীবনঘনিষ্ঠ। যেমন ধরুন, কিছুদিন আগের কথাই বলি, টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চলের গায়রা গ্রামের কথা। সেখানকার গ্রামগুলোয় বসবাস করে গারো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা। অবাক করা বিষয় হলো, এ এলাকার বেশকিছু তরুণ-তরুণী ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করেন। অর্থাৎ এ বনাঞ্চলে বসেই তারা বিদেশের গ্রাহকদের কাজ করে দিচ্ছেন। আয় করছেন ডলারে। কিন্তু তাদের কাজের প্রধান সমস্যা ধীরগতির ইন্টারনেট। এ নিয়ে প্রথম আলোর প্রথম পাতায় একটি বিশেষ প্রতিবেদন ও ধারাবাহিক কিছু প্রতিবেদন প্রকাশের পর ঢাকার ইন্টারনেট সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাম্বার আইটি মধুপুর উপজেলার গায়রা গ্রামে দ্রুত গতির (ব্রডব্যান্ড) ইন্টারনেট সংযোগ দিয়েছে, গ্রামীণফোন সেখানে একটি টাওয়ার বসিয়েছে, সরকার একটি ল্যাব ও ল্যাপটপ উপহার দিয়েছে। এখন মধুপুরের প্রায় ৪০টি গ্রাম ডিজিটাল হচ্ছে। একটি লেখায় যে কতটা শক্তি থাকে, সেটা ইতোমধ্যে প্রমাণ পেয়ে গেছেন। আমার যে লেখাগুলো পাঠক গ্রহণ করে বা সাড়া ফেলে, আমি সেটির বর্ধিত অংশকে পরবর্তীতে বই আকারে প্রকাশ করি। তখন পাঠক ভালোবেসে সেই গল্পগুলো আপন করে নেয়।

জাগো নিউজ: আপনার উপন্যাস অবলম্বনে বেশকিছু টেলিছবি নির্মিত হয়েছে, দর্শকের রেসপন্স কেমন?রাহিতুল ইসলাম: আমার উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ হয়েছে ‘আউটসোর্সিং ও ভালোবাসার গল্প’। এতে অভিনয় করেছেন আফরান নিশো ও তানজিন তিশা। এ উপন্যাস থেকেই বাংলাদেশের সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার স্বীকৃতি পেয়েছে। ‘চরের মাস্টার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার’ উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হয়েছে টেলিফিল্ম ‘চরের মাস্টার’। এতে অভিনয় করেছেন খায়রুল বাশার ও সাফা কবির। উপন্যাসটির মতো টেলিফিল্মটিও ভীষণ প্রশংসা কুড়িয়েছিল দর্শকমহলে। এবার ‘কেমন আছে ফ্রিল্যান্সার নাদিয়া?’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হতে যাচ্ছে ‘ফ্রিল্যান্সার নাদিয়া’। এতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। নারীর ক্ষমতায়নের ওপর নির্মিত এ টেলিফিল্মের একটি বিশেষ দৃশ্যে অভিনয় করছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তা ছাড়া একটি দৃশ্যে আমাকেও দেখা যাবে। আশা করছি, টেলিছবিটি দর্শকদের যেমন সাহস জোগাবে, তেমনই কাঁদাবেও।

জাগো নিউজ: সাহিত্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সফলদের তুলে আনছেন, এ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?রাহিতুল ইসলাম: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আকাশ ছোঁয়ার! মনে হচ্ছে, কিছুই তুলে ধরতে পারিনি এখনো। এখনো অনেক কিছু করার বাকি। তবে একটা বড় কাজ আসছে, যেটা বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের দলিল হতে যাচ্ছে। বইয়ের নাম ‘তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নায়কেরা’। বইটি তাদের নিয়ে, যাদের আমরা ভুলে যাচ্ছি বা যতটুকু সম্মান পাওয়ার কথা; তাদের ততটুকুও দিতে পারছি না। আজ চার বছর ধরে এই একটি বই নিয়ে কাজ করছি। এটাই আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বলতে পারেন।

জাগো নিউজ: যতদূর জানি, আপনার বইয়ের রয়্যালিটির টাকা সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে দান করেন। এ বিষযে যদি কিছু বলতেন—রাহিতুল ইসলাম: আসলে এটা বলার মতো কিছু নয়। যেই সেক্টর নিয়ে আমি লিখি, বইয়ের প্রথম রয়্যালিটির টাকাটা সেই সেক্টরের সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝেই দেই। বই তো সারা বছর বিক্রি হবে। আমি মনে করি, প্রথম রয়্যালিটির টাকাটা দিয়ে দিলে ক্ষতি নেই। এতে যদি কারো উপকার হয়। কেমন যেন একটা শান্তি অনুভব করি। তা ছাড়া এবার প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত আমার ‘কল সেন্টারের অপরাজিতা’ উপন্যাসটি বইমেলায় প্রথমার বেস্ট সেলার হিসেবেও ছিল। এ বইয়ের প্রথম রয়্যালিটির টাকাও সুবিধাবঞ্চিতদের সাহায্যার্থে দেওয়া হবে।

Advertisement

জাগো নিউজ: পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকে কি লেখালেখির অন্তরায় মনে হয়েছে কখনো?রাহিতুল ইসলাম: তা মনে হয়নি বরং সাংবাদিকতা বরাবরই আমার লেখালেখির সহায়ক ছিল। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে যে গল্পগুলো গভীর থেকে বের করে বড় আকারে তুলে ধরছি, সে গল্পগুলো থেকে পরবর্তীতে বই করেছি। আমার কাছে মনে হয়, আমার লেখালেখির সূত্রই সাংবাদিকতা।

জাগো নিউজ: আপনার এবং জাগো নিউজের পাঠকদের উদ্দেশে কী বলতে চান?রাহিতুল ইসলাম: আমি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের গল্পগুলো লিখে যাব। সহজ ও সরলভাবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে এ অনুপ্রেরণার গল্পগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করব। আর জাগো নিউজের পাঠকদের বলবো, আপনারা গল্পগুলো পড়বেন বা পর্দায় দেখবেন, আশা করি ভালো লাগবে। ধন্যবাদ জাগো নিউজকে।

এসইউ/এমএস

এসইউ/এমএস