রাজধানীর অভিজাত বিপণিবিতানে ঈদের কেনাবেচা জমে উঠেছে। অভিজাত মানুষদের জন্য এসব বিপণিবিতানগুলোতে চোখে পড়ছে পর্যাপ্ত নতুন সাজ-পোশাকের পসরা। ক্রেতারাও ভিড় জমিয়ে কিনছেন সেসব।
Advertisement
রমজানের দ্বিতীয় শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) সরেজমিনে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
গুলশানের পুলিশ প্লাজা, ১ ও ২ নম্বরের ডিসিসি মার্কেট, নাভানা শপিং কমপ্লেক্স, প্লাজা সেন্ট্রাল, শপার্স ওয়ার্ল্ড, জারা ফ্যাশন এবং উত্তরার রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, মাসকট প্লাজা শপিং কমপ্লেক্স এবং নর্থ টাওয়ারে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। বিশেষ করে জুমার নামাজের পর থেকে এসব শপিং কমপ্লেক্সে ক্রেতা বাড়তে শুরু করে। বিকেলে শুরু হয় জমজমাট কেনাকাটা।
শপিংমলে অধিকাংশ ক্রেতাকে দেখা যায়, দুই হাতে বেশ কয়েকটি শপিং ব্যাগ। কেউ কিনেছেন নিজেদের জন্য, আবার কেউ নিজেরটা শেষ করে স্বজনদের জন্য কেনাকাটায় ব্যস্ত।
Advertisement
বিক্রেতারা বলছেন, বৃহস্পতিবার পহেলা বৈশাখ থেকে শনিবার পর্যন্ত টানা ছুটি থাকায় ঈদের কেনাকাটা করছেন অনেকে। ফলে বিক্রি বেড়েছে।
গুলশান পুলিশ প্লাজায় কেনাকাটা করতে এসেছেন ছুমাইয়া সিমা। তিনি বলেন, ‘গতকাল কেনাকাটা করেছি, আজও এসেছি। আগামীকালও ছুটি আছে, এদিন কেনাকাটা শেষ করতে হবে। এজন্য ছুটির তিনদিন অন্য কোনো কাজ রাখিনি। সারাদিন মার্কেটে কাটছে।’
বিকেলে পুলিশ প্লাজায় ঢুকতে ক্রেতাদের ছোটখাট লাইন ধরতে হয়েছে। চলন্ত সিঁড়িগুলোতেও উপচেপড়া ভিড়। লিফটের মুখেও জটলা। পোশাকের দোকানে কমবেশি ভিড় আছেই। এক মার্কেট থেকে অন্যটিতে গেলে ভিড় বেশি ছাড়া কম নয়।
পুলিশ প্লাজা মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বৈশাখের দিন থেকে প্রচুর ক্রেতা আসছেন। দিন যত যাবে, ভিড় তত বাড়বে। ভালো বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’
Advertisement
শপিংমলের বিক্রেতারাও বিক্রি বেড়েছে বলে জানান দোকান মালিকরা। গুলশান ১ নম্বরের ডিসিসি মার্কেটের স্মার্টশপের মালিক ফরিদুল হাসান বলেন, দুই বছর ব্যবসায় মন্দা গেছে। এবার লোকসান কিছুটা কাটবে বলে আশা করছি।
যদিও অর্থসংকটে কিছুটা পণ্যের পসরা কমেছে বলে জানিয়ে গ্লাসারর্স এসর মালিক কাজি হিরণ বলেন, গত দুই বছরে অনেক লোকসান হয়েছে। তাই এখন চাহিদার তুলনায় প্রোডাক্টের কালেকশন কম। আরও বেশি পণ্য থাকলে বিক্রি আরও বাড়তো।
গুলশান, উত্তরার এসব শপিং কমপ্লেক্সে বেশিরভাগই অভিজাত ক্রেতা। বিক্রেতারাও বলছেন, সাধারণ অভিজাত ক্রেতাদের টার্গেট করে তারা পণ্যের আয়োজন করেছেন। এসব শো-রুমে বিদেশি স্টাইলিশ ফ্যাশনে পোশাক, নজরকাড়া কারুকার্য এবং উন্নত কাপড়ের পোশাকে চাহিদা এসব মার্কেটে বেশি। কয়েক বছর মেয়েদের জন্য জর্জেট কাপড়ের তৈরি শারারা এবং গারারা এবারও চলছে। সেসবের দামও সাধারণ ক্রেতার সাধ্যের বাইরে। ছেলেদের জন্যও বিভিন্ন দেশের পোশাক ও পাঞ্জাবি এসেছে এ বছর। এ ব্যবসায় বিনিয়োগ অনেক বেশি।
তারা আরও জানান, করোনার পর এবার কালেকশন ভালো হলেও গতবারের চেয়ে এবার কাপড়ের দাম অনেক বেশি। আমদানি খরচ বৃদ্ধিসহ অন্যান্য খরচ অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে ভারতে পোশাকের দাম বেশি বেড়েছে।
উত্তরা মাসকট প্লাজায় ব্যবসায়ী একরামুল হাসান বলেন, প্রতিটি দোকানে মাসে কয়েক লাখ টাকা খরচ। এরপর কাপড়ের যে দাম, তাতে ক্রেতারাও হিমশিম খাচ্ছেন। দাম বাড়ায় বিক্রি কিছুটা কম হচ্ছে।
মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রুচির পরিবর্তন ও মানের বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হওয়ায় অভিজাত পণ্যের পেছনে ঝুঁকছে শহরের মানুষ। তারপরও সার্বিকভাবে সারা বছর যে পরিমাণ বিক্রি হয়, তার বড় অংশ এখনো সাধারণ পোশাক। সারা বছরের যা বিক্রি হয়, তার ২৫-৩০ শতাংশ হয়ে থাকে ঈদুল ফিতরে।
এনএইচ/এএএইচ/এমএস