জ্ঞানের জগতের নিদর্শন দেখায় হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ধৈর্যধারণ করতে পারেননি। হজরত খিজির আলাইহিস সালামের সঙ্গে এক শিক্ষা সফরে বেরিয়ে ছিলেন পয়গাম্বর মুসা আলাইহিস সালাম। এ সফরের শর্ত যত ঘটনাই ঘটুক মুসা আলাইহি সালাম কোনো কথা বলবেন না। কিন্তু তিনি তিনটি ঘটনা দেখার পর প্রতিটি ঘটনায় শর্ত ভঙ করেন। ফলে ঘটনা তিনটির কারণ বর্ণনা করে হজরত খিজির আলাইহিস সালাম তাঁর সঙ্গে সফরের ইতি টানেন।
Advertisement
ক্ষমার দশকের তৃতীয় তারাবি আজ। ১৩তম রোজার প্রস্তুতিতে পড়া হবে তারাবি। হজরত খিজির ও মুসা আলাইহিস সালামের ঐতিহাসিক চমৎকার ঘটনার বর্ণনা পড়বেন হাফেজে কোরআনগণ। জ্ঞানে পরিপূর্ণ এ তেলাওয়াত শুনে হৃদয় সিক্ত করবেন রোজাদার। পাশাপাশি আজকের তেলাওয়াতে রয়েছে দুইটি চমৎকার দোয়া। যার একটি নিভৃতে মনোবাসনা পূরণের দোয়া আর অন্যটি জ্ঞান বৃদ্ধির দোয়া। দোয়া দুইটি হলো-
১. জ্ঞান বৃদ্ধির দোয়া
رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي - وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي - وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي - يَفْقَهُوا قَوْلِي - وَاجْعَل لِّي وَزِيرًا مِّنْ أَهْلِي
Advertisement
উচ্চারণ : ‘রাব্বিশ রাহলি সাদরি ওয়া ইয়াসসিরলি আমরি, ওয়াহলুল উকদাতাম মিল্লিসানি ইয়াফকাহু ক্বাওলি ওয়াঝআললি ওয়াঝিরামমিন আহলি'
অর্থ : 'হে আমার পালনকর্তা আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন। এবং আমার কাজ সহজ করে দিন। এবং আমার জিহবা থেকে জড়তা দূর করে দিন। যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে। আর আমার পরিবারবর্গের মধ্য থেকে আমার একজন সাহায্যকারী করে দিন। (সুরা ত্বাহা : আয়াত ২৫-২৯)
২. নিভৃতে আল্লাহর কাছে ছেলে সন্তানের আবেদন-
رَبِّ إِنِّي وَهَنَ الْعَظْمُ مِنِّي وَاشْتَعَلَ الرَّأْسُ شَيْبًا وَلَمْ أَكُن بِدُعَائِكَ رَبِّ شَقِيًّا
Advertisement
উচ্চারণ : 'রাব্বি ইন্নি ওয়াহানাল আজমু মিন্নি ওয়াশতাআলার রাসু শাইবাও ওয়া লাম আকুম বিদুআয়িকা রাব্বি শাকিয়্যা।'
'হে আমার পালনকর্তা আমার অস্থি বয়স-ভারাবন ত হয়েছে; বার্ধক্যে মস্তক সুশুভ্র হয়েছে; হে আমার পালনকর্তা! আপনাকে ডেকে আমি কখনও বিফল মনোরথ হইনি।' (সুরা মারইয়াম : আয়াত ৩-৪)
১৬তম পারায় আজ সুরা কাহফ এর ৭৫-১১০নং আয়াত, সুরা মারইয়াম ও সুরা ত্বাহা তেলাওয়াত করা হবে। আজকের তারাবিতে আরও ঐতিহাসিক অনেক ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। যা নবুয়তের সত্যতা প্রমাণিত হবে।
সুরা কাহফ : আয়াত ৭৫-১১০
কোরআনুল কারিমের ১৬ পারার শুরুতেই আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ও হজরত খিজির আলাইহিস সালামের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। যা সুরা কাহফের শেষাংশে বর্ণিত হয়েছে। সুরা কাহফে এক বিশেষ জ্ঞানী ব্যক্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে জ্ঞানের নিগুঢ় রহস্য ও বিচক্ষণতা জানার জন্য সে ব্যক্তির কাছে যাওয়ার কথা বলেছিলেন।
হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারিতে এ ব্যক্তির নাম 'খাদর' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যার অর্থ হলো 'সবুজ-শ্যামল'। অর্থাৎ তিনি যেখানে বসতেন, সে স্থানই সবুজ শ্যামল হয়ে যেতো। কেউ কেউ ওনাকে আল্লাহর ওলি আবার কেউ তাকে আল্লাহর নবি হজরত খিজির আলাইহিস সালাম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
রমজানের ১৩তম তারাবির নামাজ হাফেজে কোরআনগণ মুসা আলাইহিস সালামের অধৈর্যের বিষয় দিয়ে শুরু করবেন। সুরা কাহফের ৭৫নং আয়াতে মহান আল্লাহ সে ঘটনা এভাবে তুলে ধরেন-
قَالَ اَلَمۡ اَقُلۡ لَّکَ اِنَّکَ لَنۡ تَسۡتَطِیۡعَ مَعِیَ صَبۡرًا
'সে (খিজির আ.) বললেন, ‘আমি কি তোমাকে বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করতে পারবে না?’ (সুরা কাহফ : আয়াত ৭৫)
قَالَ اِنۡ سَاَلۡتُکَ عَنۡ شَیۡءٍۭ بَعۡدَهَا فَلَا تُصٰحِبۡنِیۡ ۚ قَدۡ بَلَغۡتَ مِنۡ لَّدُنِّیۡ عُذۡرًا
'মুসা বলল, ‘এরপর যদি আমি আপনাকে আর কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করি, তাহলে আপনি আমাকে আর আপনার সঙ্গে রাখবেন না। আমার পক্ষ থেকে আপনি ওজর পেয়ে গেছেন।' (সুরা কাহফ : আয়াত ৭৬)
জ্ঞানের পরীক্ষা
যে জ্ঞানের বিশালতা দেখতে হজরত মুসা আলাইহিস সালাম হজরত খিজির আলাইহিস সালামের স্মরণাপন্ন হয়েছিলেন। তিনি মুসা আলাইহিস সালামকে বলেছিলেন, আপনি কোনো কাজে প্রশ্ন করবেন না। কিন্তু যখনই কোনো ঘটনা ঘটে তখনই মুসা আলাইহিস সালাম সে সম্পর্কে প্রশ্ন বা বিরোধ মন্তব্য করেন। এভাবে দ্বিতীয় ঘটনায় তিনি প্রশ্ন করার পরই তিনি (হজরত খিজির) বললেন-
قَالَ هٰذَا فِرَاقُ بَیۡنِیۡ وَ بَیۡنِکَ ۚ سَاُنَبِّئُکَ بِتَاۡوِیۡلِ مَا لَمۡ تَسۡتَطِعۡ عَّلَیۡهِ صَبۡرًا
তিনি বললেন, আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্য্য ধরে থাকতে পারবেন না।' (সুরা কাহফ : আয়াত ৭৫)
তৃতীয় ঘটনার কথপোকথন ও সব ঘটনার ব্যাখ্যা
'এরপর তারা দুইজন চলতে শুরু করলো। অবশেষে যখন তারা একটি জনপদের অধিবাসীদের কাছে পৌঁছল তখন তাদের কাছে কিছু খাবার চাইলো; কিন্তু তারা তাদেরকে মেহমানদারি করতে অস্বীকার করলো। এরপর তারা সেখানে একটি প্রাচীর দেখতে পেল, যা পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। সে (খিজির আ.) তখন প্রাচীরটি সোজাভাবে দাঁড় করিয়ে দিলেন। মুসা বললেন, ‘আপনি ইচ্ছা করলে এর জন্য পারিশ্রমিক নিতে পারতেন।' (সুরা কাহফ : আয়াত ৭৭)
মুসা আলাইহিস সালামের একথার সঙ্গে সঙ্গে হজরত খিজির আলাইহিস সালাম বলে উঠলেন-
قَالَ هٰذَا فِرَاقُ بَیۡنِیۡ وَ بَیۡنِکَ ۚ سَاُنَبِّئُکَ بِتَاۡوِیۡلِ مَا لَمۡ تَسۡتَطِعۡ عَّلَیۡهِ صَبۡرًا
'সে (খিজির আ.) বলল, এখানেই আমার এবং আপনার মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হলো; যে বিষয়ে আপনি ধৈর্য ধারণ করতে পারেননি অচিরেই আমি সেগুলোর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করছি।' (সুরা কাহফ : আয়াত ৭৮)
১. নৌকা ছিদ্র করে দেওয়া
اَمَّا السَّفِیۡنَۃُ فَکَانَتۡ لِمَسٰکِیۡنَ یَعۡمَلُوۡنَ فِی الۡبَحۡرِ فَاَرَدۡتُّ اَنۡ اَعِیۡبَهَا وَ کَانَ وَرَآءَهُمۡ مَّلِکٌ یَّاۡخُذُ کُلَّ سَفِیۡنَۃٍ غَصۡبًا
নৌকাটির ব্যাপারে, সেটি ছিল কয়েকজন দরিদ্র ব্যক্তির। তারা সমুদ্রে জীবিকা অন্বেষন করত। আমি ইচ্ছা করলাম যে, সেটিকে ক্রটিযুক্ত (নষ্ট) করে দেই। (কেননা) তাদের অপরদিকে (নদীর ওপারে) ছিল এক বাদশাহ। সে বলপ্রয়োগে প্রত্যেকটি (ভালো) নৌকা ছিনিয়ে নিত।' (সুরা কাহফ : আয়াত ৭৯)
২. ছোট বাচ্চাকে মেরে ফেলার কারণ
وَ اَمَّا الۡغُلٰمُ فَکَانَ اَبَوٰهُ مُؤۡمِنَیۡنِ فَخَشِیۡنَاۤ اَنۡ یُّرۡهِقَهُمَا طُغۡیَانًا وَّ کُفۡرًا - فَاَرَدۡنَاۤ اَنۡ یُّبۡدِلَهُمَا رَبُّهُمَا خَیۡرًا مِّنۡهُ زَکٰوۃً وَّ اَقۡرَبَ رُحۡمًا
'বালকটির ব্যাপার, তার পিতা-মাতা ছিল ঈমানদার। আমি আশঙ্কা করলাম যে, সে (বড় হয়ে) অবাধ্যতা ও কুফর দ্বারা তাদেরকে প্রভাবিত করবে। তারপর আমি ইচ্ছা করলাম যে, তাদের পালনকর্তা তাদেরকে মহত্তর, তার চাইতে পবিত্রতায় ও ভালবাসায় ঘনিষ্ঠতর একটি শ্রেষ্ঠ সন্তান দান করুক।' (সুরা কাহফ : আয়াত ৮০-৮১)
৩. প্রাচীর সোজা করে দেওয়ার কারণ
وَ اَمَّا الۡجِدَارُ فَکَانَ لِغُلٰمَیۡنِ یَتِیۡمَیۡنِ فِی الۡمَدِیۡنَۃِ وَ کَانَ تَحۡتَهٗ کَنۡزٌ لَّهُمَا وَ کَانَ اَبُوۡهُمَا صَالِحًا ۚ فَاَرَادَ رَبُّکَ اَنۡ یَّبۡلُغَاۤ اَشُدَّهُمَا وَ یَسۡتَخۡرِجَا کَنۡزَهُمَا ٭ۖ رَحۡمَۃً مِّنۡ رَّبِّکَ ۚ وَ مَا فَعَلۡتُهٗ عَنۡ اَمۡرِیۡ ؕ ذٰلِکَ تَاۡوِیۡلُ مَا لَمۡ تَسۡطِعۡ عَّلَیۡهِ صَبۡرًا
'প্রাচীরের ব্যাপার, সেটি ছিল নগরের দুজন পিতৃহীন বালকের। এর নীচে ছিল তাদের (বাবার রেখে যাওয়া) গুপ্তধন এবং তাদের পিতা ছিল সৎকর্ম পরায়ন। সুতরাং আপনার পালনকর্তা দায়বশত ইচ্ছা করলেন যে, তারা যৌবনে পদার্পন করুক এবং নিজেদের গুপ্তধন উদ্ধার করুক। আমি নিজ মতে এটা করিনি। আপনি যে বিষয়ে ধৈর্য্যধারণ করতে অক্ষম হয়েছিলেন, এই হল তার ব্যাখ্যা।' (সুরা কাহফ : আয়াত ৮২)
ন্যায়পরায়ন বাদশাহ জুলকারনাইনের পরিচয় বর্ণনা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নবুয়তের সত্যতায় বাদশাহ জুলকারনাইনের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবিকে বাদশাহ জুলকারনাইনের কিছু বর্ণনা দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنۡ ذِی الۡقَرۡنَیۡنِ ؕ قُلۡ سَاَتۡلُوۡا عَلَیۡکُمۡ مِّنۡهُ ذِکۡرًا
'তারা আপনাকে যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুনঃ আমি তোমাদের কাছে তাঁর কিছু অবস্থা বর্ণনা করব।' (সুরা কাহফ : আয়াত ৮৩)
اِنَّا مَکَّنَّا لَهٗ فِی الۡاَرۡضِ وَ اٰتَیۡنٰهُ مِنۡ کُلِّ شَیۡءٍ سَبَبًا
'আমি তাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের কার্যোপকরণ দান করেছিলাম। অতপর তিনি এক কার্যোপকরণ অবলম্বন করলেন।' (সুরা কাহফ : আয়াত ৮৪)
حَتّٰۤی اِذَا بَلَغَ مَغۡرِبَ الشَّمۡسِ وَجَدَهَا تَغۡرُبُ فِیۡ عَیۡنٍ حَمِئَۃٍ وَّ وَجَدَ عِنۡدَهَا قَوۡمًا ۬ؕ قُلۡنَا یٰذَا الۡقَرۡنَیۡنِ اِمَّاۤ اَنۡ تُعَذِّبَ وَ اِمَّاۤ اَنۡ تَتَّخِذَ فِیۡهِمۡ حُسۡنًا
'অবশেষে তিনি যখন সুর্যের অস্তাচলে পৌঁছলেন; তখন তিনি সুর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি বললাম, হে যুলকারনাইন! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন।' (সুরা কাহফ : আয়াত ৮৬)
قَالَ اَمَّا مَنۡ ظَلَمَ فَسَوۡفَ نُعَذِّبُهٗ ثُمَّ یُرَدُّ اِلٰی رَبِّهٖ فَیُعَذِّبُهٗ عَذَابًا نُّکۡرًا - وَ اَمَّا مَنۡ اٰمَنَ وَ عَمِلَ صَالِحًا فَلَهٗ جَزَآءَۨ الۡحُسۡنٰی ۚ وَ سَنَقُوۡلُ لَهٗ مِنۡ اَمۡرِنَا یُسۡرًا
'তিনি বললেন যে কেউ সীমালঙ্ঘনকারী হবে আমি তাকে শাস্তি দেব। অতঃপর তিনি তাঁর পালনকর্তার কাছে ফিরে যাবেন। তিনি তাকে কঠোর শাস্তি দেবেন। আর যে বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে তার জন্য প্রতিদান রয়েছে কল্যাণ এবং আমার কাজে তাকে সহজ নির্দেশ দেব।' (সুরা কাহফ : আয়াত ৮৭-৮৮)
ইয়াযুয-মাযুযের পরিচয় বর্ণনা
قَالُوۡا یٰذَاالۡقَرۡنَیۡنِ اِنَّ یَاۡجُوۡجَ وَ مَاۡجُوۡجَ مُفۡسِدُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ فَهَلۡ نَجۡعَلُ لَکَ خَرۡجًا عَلٰۤی اَنۡ تَجۡعَلَ بَیۡنَنَا وَ بَیۡنَهُمۡ سَدًّا
'তারা বলল, হে যুলকারনাইন, ইয়াজুজ ও মাজুজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। আপনি বললে আমরা আপনার জন্যে কিছু কর ধার্য করব এই শর্তে যে, আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন।' (সুরা কাহফ : আয়াত ৯৪)
বাদশাহ জুলকারনাইন কর্তৃক প্রাচীর নির্মান
قَالَ مَا مَکَّنِّیۡ فِیۡهِ رَبِّیۡ خَیۡرٌ فَاَعِیۡنُوۡنِیۡ بِقُوَّۃٍ اَجۡعَلۡ بَیۡنَکُمۡ وَ بَیۡنَهُمۡ رَدۡمًا - اٰتُوۡنِیۡ زُبَرَ الۡحَدِیۡدِ ؕ حَتّٰۤی اِذَا سَاوٰی بَیۡنَ الصَّدَفَیۡنِ قَالَ انۡفُخُوۡا ؕ حَتّٰۤی اِذَا جَعَلَهٗ نَارًا ۙ قَالَ اٰتُوۡنِیۡۤ اُفۡرِغۡ عَلَیۡهِ قِطۡرًا - فَمَا اسۡطَاعُوۡۤا اَنۡ یَّظۡهَرُوۡهُ وَ مَا اسۡتَطَاعُوۡا لَهٗ نَقۡبًا
'তিনি বললেন, আমার পালনকর্তা আমাকে যে সামর্থ? দিয়েছেন, তাই যথেষ্ট। অতএব, তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য কর। আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যে একটি সুদৃঢ় প্রাচীর নির্মাণ করে দেব। তোমরা আমাকে লোহার পাত এনে দাও। অবশেষে যখন পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে গেল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা হাঁপরে দম দিতে থাক। অবশেষে যখন তা আগুনে পরিণত হল, তখন তিনি বললেন, তোমরা গলিত তামা নিয়ে এস, আমি তা এর উপরে ঢেলে দেই। অতঃপর ইয়াজুজ ও মাজুজ তার উপরে আরোহণ করতে পারল না এবং তা ভেদ করতে ও সক্ষম হলো না।' (সুরা কাহফ : ৯৫-৯৭)
সুরা কাহফের শেষ আয়াতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ তাআলা এ মর্মে নির্দেশ করেন যে, মানুষ যেন ভালো কাজ করার পাশাপাশি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
قُلۡ اِنَّمَاۤ اَنَا بَشَرٌ مِّثۡلُکُمۡ یُوۡحٰۤی اِلَیَّ اَنَّمَاۤ اِلٰـهُکُمۡ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ ۚ فَمَنۡ کَانَ یَرۡجُوۡا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلۡیَعۡمَلۡ عَمَلًا صَالِحًا وَّ لَا یُشۡرِکۡ بِعِبَادَۃِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا
'(হে রাসুল! আপনি) বলুন আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।' (সুরা কাহফ : আয়াত ১১০)
সুরা মারইয়াম : আয়াত ১-৯৮
সুরা কাহফের মতো এ সুরাটিতেও অত্যন্ত বিস্ময়কর ঘটনা ও বিষয়বস্তু সন্নিবেশিত হয়েছে। সম্ভবত এ কারণেই এ সুরাটিকে সুরা কাহফ-এর পরে স্থান দেয়া হয়েছে। এ সুরাটিও তাওহিদের প্রতি বিশ্বাসের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। যা আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষী। এ সুরায় আলোচিত বিষয়ের সূচিসমূহ সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-
হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম নিভৃতে আল্লাহর কাছে ছেলে সন্তানের আবেদন করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুসলিমার জন্য সে দোয়া কোরআনে তুলে ধরেছেন-
رَبِّ إِنِّي وَهَنَ الْعَظْمُ مِنِّي وَاشْتَعَلَ الرَّأْسُ شَيْبًا وَلَمْ أَكُن بِدُعَائِكَ رَبِّ شَقِيًّا
উচ্চারণ : 'রাব্বি ইন্নি ওয়াহানাল আজমু মিন্নি ওয়াশতাআলার রাসু শাইবাও ওয়া লাম আকুম বিদুআয়িকা রাব্বি শাকিয়্যা।'
'হে আমার পালনকর্তা আমার অস্থি বয়স-ভারাবন ত হয়েছে; বার্ধক্যে মস্তক সুশুভ্র হয়েছে; হে আমার পালনকর্তা! আপনাকে ডেকে আমি কখনও বিফল মনোরথ হইনি।' (সুরা মারইয়াম : আয়াত ৩-৪)
এ সুরায় হজরত মারইয়াম-এর সন্তান জন্মদানের বিষয়টিও ওঠে এসেছে। হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম মায়ের সতীত্ব ও পবিত্রতার কথা বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ বলেন-
'এরপর তিনি সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হলেন। তারা বলল, হে মারইয়াম, তুমি একটি অঘটন ঘটিয়ে বসেছ। হে হারূণ-ভাগ্নি! তোমার পিতা অসৎ ব্যক্তি ছিলেন না এবং তোমার মাতাও ছিল না ব্যভিচারিনী। অতপর তিনি হাতে সন্তানের দিকে ইঙ্গিত করলেন। তারা বলল, যে কোলের শিশু তার সাথে আমরা কেমন করে কথা বলব? সন্তান বলল, আমি তো আল্লাহর দাস। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবি করেছেন। আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন নামাজ ও জাকাত আদায় করতে। আর জননীর অনুগত থাকতে এবং আমাকে তিনি উদ্ধত ও হতভাগ্য করেননি। আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হব।' (সুরা মারইয়াম : আয়াত ২৭- ৩৩)
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের আহ্বান
'আপনি এই কিতাবে ইবরাহিমের কথা বর্ণনা করুন। নিশ্চয়ই তিনি ছিলেন সত্যবাদী, নবি। যখন তিনি তার বাবাকে বললেন, হে আমার বাবা! যে শোনে না, দেখে না এবং তোমার কোনো উপকারে আসে না, তার ইবাদত কেন কর?' (সুরা মারইয়াম : আয়াত ৪১-৪২)
'হে আমার বাবা! আমার কাছে এমন জ্ঞান এসেছে; যা তোমার কাছে আসেনি, সুতরাং আমার অনুসরণ কর, আমি তোমাকে সরল পথ দেখাব। হে আমার বাবা! শয়তানের ইবাদত করো না। নিশ্চয়ই শয়তান দয়াময়ের অবাধ্য। হে আমার বাবা! আমি আশঙ্কা করি, দয়াময়ের একটি আজাব তোমাকে স্পর্শ করবে, এরপর তুমি শয়তানের সঙ্গী হয়ে যাবে।' (সুরা মারইয়াম : আয়াত ৪৩-৪৫)
'(ইবরাহিমের) বাবা বলল, যে ইবরাহিম! তুমি কি আমার উপাস্যদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ? যদি তুমি বিরত না হও, আমি অবশ্যই প্রস্তরাঘাতে তোমার প্রাণনাশ করবো। তুমি চিরতরে আমার কাছ থেকে দূর হয়ে যাও।' (সুরা মারইয়াম : আয়াত ৪৬)
'ইবরাহিম বললেন, তোমার উপর শান্তি হোক, আমি আমার পালনকর্তার কাছে তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবো। নিশ্চয়ই তিনি আমার প্রতি মেহেরবান। আমি পরিত্যাগ করছি তোমাদেরকে এবং তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত কর তাদেরকে; আমি আমার পালনকর্তার ইবাদত করবো। আশা করি, আমার পালনকর্তার ইবাদত করে আমি বঞ্চিত হবো না। (সুরা মারইয়াম : আয়াত ৪৭-৪৮)
'অতপর তিনি যখন তাদেরকে এবং তার আল্লাহ ব্যতিত যাদের ইবাদত করত, তাদের সবাইকে পরিত্যাগ করলেন, তখন আমি তাকে দান করলাম ইসহাক ও ইয়াকুব এবং প্রত্যেককে নবী করলাম।' (সুরা মারইয়াম : আয়াত ৪৯)
আল্লাহ তাআলা ফরহেজগার বান্দার জন্য সেরা নেয়ামত জান্নাত তৈরি করেছেন। ফরহেজগার হওয়ার সেরা ইবাদত হলো রমজানের রোজা পালন। আজ ফরহেজগারদের শুনানো হবে সে নেয়ামতের কথা। আল্লাহ বলেন-
'তাদের স্থায়ী বসবাস হবে যার ওয়াদা দয়াময় আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে অদৃশ্যভাবে দিয়েছেন। অবশ্যই তাঁর ওয়াদার তারা পৌঁছাবে।তারা সেখানে সালাম ব্যতীত কোন অসার কথাবার্তা শুনবে না এবং সেখানে সকাল-সন্ধ্য া তাদের জন্যে রুযী থাকবে। এটা ঐ জান্নাত যার অধিকারী করব আমার বান্দাদের মধ্যে পরহেযগারদেরকে।' (সুরা মারইয়াম : আয়াত ৬১-৬৩)
সুরা ত্বাহা : আয়াত ১-১৩৫
এ সুরায় হজরত মুসা আলাইহিস সালামের সঙ্গে আল্লাহর কথপোকথন ও তাঁর নবুয়তের বিস্তারিত বর্ণনা ওঠে এসেছে। এ সুরাটি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টিরও দুই হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদেরকে পাঠ করে শোনান। যে সুরার তিলাওয়াত শ্রবণ করে বিশ্বনবিকে হত্যা করতে এসে হজরত ওমর বিশ্বনবির চরণতলে লুটিয়ে পড়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। এ সুরাও বিশ্বনবির নবুয়তের প্রমাণ। এ সুরার সংক্ষিপ্ত আলোচ্য সূচি তুলে ধরা হলো-
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ তাআলার শব্দযুক্ত কথা চর্তুদিক থেকে প্রত্যক্ষভাবে শ্রবণ করেছিলেন। তার নবুয়ত লাভে ঘটনা ওঠে এসেছে এ সুরায়; যে স্থানে হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে জুতা খোলার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তার বর্ণনা। আল্লাহ বলেন-
'তিনি যখন আগুন দেখলেন, তখন পরিবারবর্গকে বললেন তোমরা এখানে অবস্থান কর আমি আগুন দেখেছি। সম্ভবত আমি তা থেকে তোমাদের কাছে কিছু আগুন জালিয়ে আনতে পারব অথবা আগুনে পৌছে পথের সন্ধান পাব। অতপর যখন তিনি আগুনের কাছে পৌছলেন, তখন আওয়াজ আসল হে মুসা, আমিই তোমার পালনকর্তা, অতএব তুমি জুতা খুলে ফেল, তুমি পবিত্র উপত্যকা তুয়ায় রয়েছ। আর আমি তোমাকে মনোনীত করেছি, অতএব যা প্রত্যাদেশ করা হচ্ছে, তা শুনতে থাক। আমিই আল্লাহ আমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। অতএব আমার এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম কর।' (সুরা ত্বাহা : আয়াত ১০-১৪)
মুসা আলাইহিস সালামকে লাঠির মুজিজা দান
وَ مَا تِلۡکَ بِیَمِیۡنِکَ یٰمُوۡسٰی - قَالَ هِیَ عَصَایَ ۚ اَتَوَکَّوٴُا عَلَیۡهَا وَ اَهُشُّ بِهَا عَلٰی غَنَمِیۡ وَ لِیَ فِیۡهَا مَاٰرِبُ اُخۡرٰی
'হে মুসা, তোমার ডানহাতে ওটা কি? তিনি বললেন, এটা আমার লাঠি, আমি এর উপর ভর দেই এবং এর দ্বারা আমার ছাগপালের জন্যে বৃক্ষপত্র ঝেড়ে ফেলি এবং এতে আমার অন্যান্য কাজ ও চলে।' (সুরা ত্বাহা ১৭-১৮)
قَالَ اَلۡقِهَا یٰمُوۡسٰی - فَاَلۡقٰهَا فَاِذَا هِیَ حَیَّۃٌ تَسۡعٰی - قَالَ خُذۡهَا وَ لَا تَخَفۡ ٝ سَنُعِیۡدُهَا سِیۡرَتَهَا الۡاُوۡلٰی
' আল্লাহ বললেন, হে মুসা, তুমি ওটা নিক্ষেপ কর। অতপর তিনি তা নিক্ষেপ করলেন, অমনি তা সাপ হয়ে ছুটাছুটি করতে লাগল আল্লাহ বললেন, তুমি তাকে ধর এবং ভয় করো না, আমি এখনি একে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেব। (সুরা ত্বাহা ১৯-২১)
وَ اضۡمُمۡ یَدَکَ اِلٰی جَنَاحِکَ تَخۡرُجۡ بَیۡضَآءَ مِنۡ غَیۡرِ سُوۡٓءٍ اٰیَۃً اُخۡرٰی - لِنُرِیَکَ مِنۡ اٰیٰتِنَا الۡکُبۡرٰی - اِذۡهَبۡ اِلٰی فِرۡعَوۡنَ اِنَّهٗ طَغٰی
'তোমার হাত বগলে রাখ, তা বের হয়ে আসবে নির্মল উজ্জ্বল হয়ে অন্য এক নিদর্শন রূপে; কোন দোষ ছাড়াই। এটা এজন্যে যে, আমি আমার বিরাট নিদর্শনাবলীর কিছু তোমাকে দেখাই। ফেরাউনের নিকট যাও, সে দারুণ উদ্ধত হয়ে গেছে। (সুরা ত্বাহা ২২-২৪)
হজরত মুসা আলাইহস সালামের দোয়া। জ্ঞান বৃদ্ধিতে যে দোয়া পড়ে মুমিন মুসলমান। আল্লাহ তাআলার শেখানো দোয়াটি হলো-
رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي - وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي - وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي - يَفْقَهُوا قَوْلِي - وَاجْعَل لِّي وَزِيرًا مِّنْ أَهْلِي
উচ্চারণ : ‘রাব্বিশ রাহলি সাদরি ওয়া ইয়াসসিরলি আমরি, ওয়াহলুল উকদাতাম মিল্লিসানি ইয়াফকাহু ক্বাওলি ওয়াঝআললি ওয়াঝিরামমিন আহলি'
অর্থ : 'হে আমার পালনকর্তা আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন। এবং আমার কাজ সহজ করে দিন। এবং আমার জিহবা থেকে জড়তা দূর করে দিন। যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে। আর আমার পরিবারবর্গের মধ্য থেকে আমার একজন সাহায্যকারী করে দিন। (সুরা ত্বাহা : আয়াত ২৫-২৯)
এ সুরায় হজরত মুসা আলাইহিস সালামের জন্মের পর তাকে ফেরাউনের হাত থেকে রক্ষায় মুসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর নির্দেশ সিন্দুকে ভরে সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। আবার ফেরাউনের ঘরেই মায়ের স্নেহে লালিত-পালিত হন মুসা আলাইহিস সালাম। যা পড়া হবে আজকের তারাবিহতে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
'যখন আমি তোমার মাকে নির্দেশ দিয়েছিলাম যা অতঃপর বর্ণিত হচ্ছে। যে, তুমি (মুসাকে) সিন্দুকে রাখ, অতঃপর তা দরিয়ায় ভাসিয়ে দাও, এরপর দরিয়া তাকে তীরে ঠেলে দেবে। তাকে আমার শক্র ও তার শক্র উঠিয়ে নেবে। আমি তোমার প্রতি মহব্বত সঞ্চারিত করেছিলাম আমার নিজের পক্ষ থেকে, যাতে তুমি আমার দৃষ্টির সামনে প্রতি পালিত হও। (সুরা ত্বাহা : আয়াত ৩৮-৩৯)
اِذۡ تَمۡشِیۡۤ اُخۡتُکَ فَتَقُوۡلُ هَلۡ اَدُلُّکُمۡ عَلٰی مَنۡ یَّکۡفُلُهٗ ؕ فَرَجَعۡنٰکَ اِلٰۤی اُمِّکَ کَیۡ تَقَرَّ عَیۡنُهَا وَ لَا تَحۡزَنَ ۬ وَ قَتَلۡتَ نَفۡسًا فَنَجَّیۡنٰکَ مِنَ الۡغَمِّ وَ فَتَنّٰکَ فُتُوۡنًا ۬ فَلَبِثۡتَ سِنِیۡنَ فِیۡۤ اَهۡلِ مَدۡیَنَ ۬ ثُمَّ جِئۡتَ عَلٰی قَدَرٍ یّٰمُوۡسٰی
' যখন তোমার বোন এসে বলল, আমি কি তোমাদেরকে বলে দেব কে তাকে লালন পালন করবে। এরপর আমি তোমাকে তোমার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলাম, যাতে তার চক্ষু শীতল হয় এবং দুঃখ না পায়। তুমি এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে, এরপর আমি তোমাকে এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেই; আমি তোমাকে অনেক পরীক্ষা করেছি। এরপর তুমি কয়েক বছর মাদইয়ান বাসীদের মধ্যে অবস্থান করেছিলে; হে মুসা! এরপর তুমি নির্ধারিত সময়ে এসেছ।' (সুরা ত্বাহা : আয়াত ৪০)
এ সুরায় হজরত মুসা আলাইহিস সাল্লাম ও ফেরাউনের সঙ্গে সংঘটিত কথাপোকথনের প্রায় সব বিষয়ই ওঠে এসেছে। হজরত মুসা আলাইহিস সালামের মুজিজা দেখে তাঁর দাওয়াত গ্রহণ করে নেয় জাদুকররা।
এছাড়াও কোনো ব্যক্তিকে পদ-মর্যাদা দান করার মাপকাঠি কেমন হবে তার বর্ণনা; ফিরাউন পত্নী হজরত আছিয়ার প্রসঙ্গ; বনি ইসরাইলের মিসর ত্যাগ; গো-বাছুর তৈরিকারক সামেরির পরিচয়; স্ত্রী ভরণপোষণের দায়িত্ব এবং জীবন ধারনের প্রয়োজনীয়তা; শত্রুর আক্রমণ থেকে হিফাজত থাকার প্রসঙ্গ; দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে ধন-সম্পদের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গ; নামাজের জন্য নিকটতমদের প্রতি আদেশ প্রদান প্রসঙ্গ ওঠে এসেছে।
সুতরাং আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ সুরাগুলো বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম