সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ।
Advertisement
বাঙালি সংস্কৃতির রয়েছে হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস আর বাঙালির এই হাজার বছরের সাংস্কৃতিক জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হলো পহেলা বৈশাখ। সমৃদ্ধ এই সংস্কৃতির সঙ্গে বর্ষবরণ উৎসব নিবিড়ভাবে জড়িত। তবে আমরা নিজেদের সংস্কৃতিকে কখনই অস্বীকার করতে পারিনা। আমরা নববর্ষ উদযাপনের সংস্কৃতিকে ধরে রাখব কিন্তু এবার যেহেতু পবিত্র রমজান মাস চলছে তাই এ মাসের পবিত্রতার দিকেও আমাদেরকে দৃষ্টি রাখতে হবে। সাধারণত দেখা যায় নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে লোকেরা হৈহুল্লোড় ও ক্রীড়া-কৌতুক আর জাগতিক আনন্দ-উল্লাসের মাঝে সারা রাত কাটিয়ে দেয়।
অথচ একজন মুমিন এটাই দেখবে যে, জাগতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ বছর সে কী হারিয়েছে আর কী পেয়েছে? তার জাগতিক অবস্থা বা বৈষয়িক অবস্থায় কি ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। সে বিগত বছরে কি কি পুণ্যকর্ম করেছে আর এবছর যেন আরো বেশি পুণ্যকর্ম করতে পারে সেই চেষ্টায় সে নতুন বছরকে বরণ করে তাহাজ্জুদ নামাজ এবং বিশেষ ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে।
আমাদের দুর্বলতার জন্য মহান আল্লাহপাকের দরবারে এই দোয়া করতে হবে, হে আল্লাহ! আমাদের আগত বছর যেন বিগত বছরের ন্যায় আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে দুর্বল না হয় বরং আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ ও পদচারণা যেন তোমার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে হয়। আমাদের প্রতিটি দিন যেন বিশ^নবি ও শ্রেষ্ঠনবি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শে অতিবাহিত দিন হয়। আমরা যেন পবিত্র কোরআন এবং প্রকৃত ইসলামের শিক্ষানুসারে জীবন পরিচালনা করতে পারি। এই দোয়া যদি আমাদের হয় আর আমরা যদি নববর্ষের সূচনায় আত্মজিজ্ঞাসা, আত্মবিশ্লেষণ করি তাহলে আমাদের পরিণতি অবশ্যই শুভ হবে এবং আল্লাহতায়ালা তার বিশেষ রহমতে সকল বালামুসিবত থেকে আমাদেরকে রক্ষা করবেন।
Advertisement
পবিত্র মাহে রমজানের রহমতের দশকের রোজাগুলো সুস্থতার সাথে রাখতে পেরে আল্লাহর দরবারে হাজারো শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি আর এখন মাগফিরাতের দশক আমরা অতিবাহিত করছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে বিনীত দোয়া তিনি যেন আমাদেরকে ক্ষমা করে তার কৃপার চাদরে আবৃত করে রাখেন।
রমজান দোয়া কবুলের বিশেষ মাস আর আজ নতুন বছর শুরু হচ্ছে তাই আজকের দিনটি আমরা দোয়ার মাধ্যমে অতিবাহিত করার চেষ্টা করি। বান্দার দোয়া গ্রহণের জন্য আল্লাহতায়ালা সব সময় অপেক্ষায় থাকেন। বিশেষ করে রমজানে তিনি অধির আগ্রহে থাকেন তার বান্দা যেন তার দিকে ফিরে আসে। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছ থেকে চেয়ে নেয়ার মাস রমজান। যে যত বেশি চাইতে পারে, আল্লাহ তাআলা তাকে তত বেশি দান করেন।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। কিন্তু যারা আমার ইবাদত সম্বন্ধে অহংকার করে, তারা নিশ্চয় লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সুরা মোমেন, আয়াত: ৬০)
আল্লাহতায়ালা আরো ইরশাদ করেন, ‘আর যা কিছু তোমরা তার কাছে চেয়েছো তিনি তোমাদের সব দিয়েছেন এবং যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত সমূহ গণনা করতে চাও তাহলে তোমরা সেগুলোর সংখ্যা নিরূপণ করতে পারবে না।’ (সুরা ইব্রাহিম, আয়াত: ৩৪)
Advertisement
এই আয়াতদ্বয় থেকে স্পষ্ট প্রমাণ হয়, আল্লাহতায়ালা তার বান্দার দোয়া গ্রহণ করার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করেন, কখন তার বান্দা তাকে ডাকবে আর তিনি তা গ্রহণ করবেন এবং তার দুঃখ কষ্ট দূর করবেন। তিনি সবার খুবই নিকটে রয়েছেন, যেভাবে কুরআনে উল্লেখ রয়েছে ‘আর যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞেস করে, তখন বল, আমি নিকটে আছি। আমি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনার উত্তর দেই যখন সে আমার নিকট প্রার্থনা করে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সারা দেয় এবং আমার ওপর ঈমান আনে যাতে তারা সঠিক পথ প্রাপ্ত হয়।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬)
এ আয়াত থেকে যে বিষয়টি অনুধাবন করা যায়, তাহলো, তিনি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনার উত্তর দিয়ে থাকেন। আমারা যদি প্রকৃতভাবে তাকে ডাকি তাহলে অবশ্যই তিনি আমাদের ডাকে সাড়া দিবেন। আমরা যদি বিনীতভাবে প্রার্থনা করি তাহলে হয়তো তিনি বিশ্ব থেকে সকল বালা-মুসিবত দূর করে দিবেন।
আমরা জানি বিশ্বনবির (সা.) সব কিছুই ছিল আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য। তাইতো তিনি (সা.) সবসময় আল্লাহর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতেন। তার (সা.) দোয়ার বরকতে লক্ষ লক্ষ আধ্যাত্মিকভাবে মৃতরা জীবন ফিরে পেয়েছে, আধ্যাত্মিক অন্ধরা দৃষ্টি ফিরে পেয়েছে, বোবাদের মুখে ঐশী তত্ত্ব-জ্ঞান ফুটেছে এবং বংশ পরম্পরায় পথভ্রষ্টরা ঐশী রং ধারণ করার যোগ্য হয়েছে।
আমরা যদি প্রকৃতভাবে সেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বান্দা হই যিনি আমাদেরকে কেবলমাত্র তার ইবাদতের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন তাহলে তিনি অবশ্যই আমাদের ডাকেও সাড়া দেবেন। তাই আসুন, নববর্ষের এই দিনে আল্লাহর কাছে নিজেদের পাপসমূহের জন্য ক্ষমা চেয়ে তার সন্তুষ্টি কামনা করি।
আল্লাহতায়ালা দোয়া কবুল করবেন এবং করার ক্ষমতা রাখেন, এই দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করতে হবে এবং আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হবার অবকাশ নেই। দোয়া করার পূর্বে নিজ শরীর, কাপড়-চোপড় এবং পরিবেশ পবিত্রতার প্রতিও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। কেননা, আল্লাহতায়ালা পবিত্র, তাই তিনি পবিত্রতাকেই বেশি পছন্দ করেন। দোয়ার জন্য এক নীরব নিস্তব্ধ কোলাহলমুক্ত পরিবেশ বেছে নেয়া দরকার যাতে দোয়ার মাঝে পূর্ণ একাগ্রতা সৃষ্টি হয়। রমজানের এ দিনগুলোকে নিষ্ঠার সাথে হৃদয়কে পবিত্র করে দোয়ায় রত হতে হবে।
দয়াময় আল্লাহর দরবারে আমাদের বিনীত প্রার্থনা করতে হবে তিনি যেন সকল প্রকার বালা মুসিবত থেকে বিশ্ববাসীকে নিরাপদ রাখেন আর নতুন বছর যেন সবার জন্য বয়ে আনে অফুরন্ত কল্যাণ।
এইচআর/এএসএম