মতামত

কেন এই পৈশাচিকতা?

নারায়ণগঞ্জে একই পরিবারের পাঁচজনকে নির্মম পৈশাচিকতায় হত্যা করার ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। মনুষ্য সমাজে এই ধরনের বর্বরতা, অমানবিকতা ও পৈশাচিকতা মেনে নেওয়া যায় না। এই ঘটনা সমাজে অস্থির অবস্থারই একটি ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর আগেও আমরা শিশু রাজন ও রাকিব হত্যার মতো পৈশাচিকতা দেখেছি। এমনকি খোদ নারায়ণগঞ্জেই  মেধাবী ছাত্র ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে। সাতখুনের ঘটনাতো ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল গোটা দেশব্যাপীই। প্রত্যেকটি খুনের মোটিভ আলাদা থাকলেও নির্মমতার জায়গায় সব হত্যাকাণ্ড একই ধরনের। নিরীহ নির্বিবাদী মানুষ বিশেষ করে নারী ও শিশুরা এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। একটি সভ্য সমাজে এ ধরনের অপরাধপ্রবণতা চলতে দেয়া যায় না।   নারায়ণগঞ্জ শহরের ২নং বাবুরাইল খানকা মোড় এলাকার একটি ফ্ল্যাট বাড়িতে একই পরিবারের পাঁচজনকে গলা কেটে হত্যার ঘটনাটি ঘটে শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে। নিহতরা হলেন তাসলিমা (৩৫), তার ছেলে শান্ত (১০), মেয়ে সুমাইয়া (৫), তাসলিমার ছোটভাই মোরশেদুল (২২) ও তাসলিমার জা লামিয়া (২৫)। তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চরভেলাবাড়িতে। তারা শহরের বাবুরাইল ২নং এলাকার খানকামোড় এলাকার আমেরিকা প্রবাসী ইসমাইলের বাসায় ভাড়া থাকতেন।শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিহত তাসলিমার দেবর শরীফ মিয়া কিশোরগঞ্জের পাহাটি এলাকা থেকে বেড়াতে এসে দরজা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। পরে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে মোরশেদুলের খালাতো ভাই দেলোয়ার হোসেনসহ অন্যদের ডেকে আনেন। পরে তারা বাড়ির অন্য ভাড়াটিয়াদের উপস্থিতিতে দরজার তালা ভেঙে ভেতরে ৫টি লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এখনো পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে সন্দেহজনক হিসেবে নিহত মোরশেদুল ইসলামের খালাতো ভাই দেলোয়ার হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। কিন্তু হত্যার মোটিভ এখনো জানা যায়নি। কেন এ ধরনের পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হল একই পরিবারের পাঁচজন সেটি গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে। পুলিশ ধারণা করছে খুনি পূর্ব পরিচিত। ঘটনাটিও পূর্ব পরিকল্পিত হতে পারে। কথা হচ্ছে যে বা যারাই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকুক না কেন তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার কোনো বিকল্প নেই। অপরাধ করলে যে কেউ পার পায় না, অপরাধীদের মধ্যে এই ধারণা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। মানুষ নিজ ঘরে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঘোরে প্রাণ দিবে এটা নিরাপত্তাহীনতার বোধকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সাংবাদিক সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের পর দায়িত্বশীল মহল থেকে বলা হয়েছিল ‘পুলিশ বেডরুম পাহারা দিতে পারবে না।’ কিন্তু জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা পুলিশের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সেটা করতে হবে যে কোনো মূল্যে। এ ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দায়িত্ব এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আমরা এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। আশা করি পুলিশ এই ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং তাদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করার ব্যাপারে আন্তরিকভাবে কাজ করবে। এটা হলেই কেবল ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব।এইচআর/এমএস

Advertisement