সারাদেশ থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেন চালকরা কর্মবিরতিতে গেছেন। বুধবার (১৩ এপ্রিল) সকাল থেকেই রাজশাহী থেকে সকল রুটের ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে সকাল থেকে টিকিট বিক্রির প্রায় ১২ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে রাজশাহী রেলওয়ে বুকিং অফিস।
Advertisement
বুধবার সকালে জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী স্টেশনের বুকিং অফিসের প্রধান বুকিং সহকারী মো. আব্দুল মোমিন।
তিনি বলেন, সকালে মোটামুটি ৯টি ট্রেনের রাজশাহী থেকে বিভিন্ন রুটে যাত্রা করার কথা ছিল। এগুলোর মধ্যে সাগরদারি, বনলতা, সিল্কসিটি, মধুমতি, কমিউটার, মহানন্দা, চিত্রা, ৬-ডাউন ও ৬ নাম্বার ডাউন। এসব ট্রেনের লোকোমাস্টাররা (ট্রেন চালকরা) আকস্মিকভাবেই কর্মবিরতি বা ধর্মঘটে যাওয়ার কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যার কারণে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে ট্রেনের নির্দিষ্ট সময়ের আধা ঘণ্টা পর থেকে কাউন্টারে টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া শুরু হয়।
যাত্রীদের টিকিট ফেরতের বিষয়ে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ শতাংশ যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। এখনো ২০ শতাংশের মতো টিকিটের টাকা বাকি রয়েছে। তাদেরকে ৭ কর্মদিবসের জন্য সময় দেওয়া হয়েছে। ৭ দিনের মধ্যে তারা স্টেশনে এসে তাদের ক্রয়কৃত টিকিট ফেরত দিয়ে টিকিটের পুরো টাকা নিয়ে যেতে পারবেন।
Advertisement
এদিকে রেল সূত্রে জানা গেছে, লোকো মাস্টার, গার্ড, টিটিইসহ যারা ট্রেনে দায়িত্ব পালন করেন তাদের মাইলেজের অর্থের দাবি ছিল। কয়েক দফায় আন্দোলন ও স্মারকলিপির দাবিতে তা মেনেও নেয় সরকার। কিন্তু তাদের দাবি চাকরি থেকে অবসরের পরও এই মাইলেজের অর্থ প্রদান করতে হবে। এতে সম্মত হয়নি অর্থ মন্ত্রণালয়। আর তাতেই নারাজ ট্রেন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা।
যার কারণে আজ সকাল থেকেই হঠাৎ কর্মবিরতির ঘোষণা দেন তারা। এতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন যাত্রীরা।
রেল সূত্রে আরও জানা গেছে, মালগাড়ি, আন্তনগর ও লোকাল ট্রেনসহ প্রায় ১৩৮টি ট্রেন পশ্চিমাঞ্চলে চলাচল করে। রাজশাহী থেকে ঢাকা, খুলনা, টুঙ্গিপাড়া, ফরিদপুর ও অন্যান্য স্থানের ট্রেনগুলোও বন্ধ রয়েছে। আজ সারাদিন যদি এভাবেই ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে তাহলে শুধুমাত্র রাজশাহী স্টেশন থেকেই বাংলাদেশ রেলওয়ের ক্ষতি হবে প্রায় ৩৫ লাখ টাকার রাজস্ব। তবে ট্রেন চালকরা ট্রেন চালাতে রাজি হলে কাউন্টারে টিকিট না দিয়ে রানিং টিকিট দেবে রেল কর্তৃপক্ষ।
হঠাৎ ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। পাবনার ঈশ্বরদীর পথে যাত্রা করা মোতাহারা জাহান নামের এক শিক্ষক বলেন, সকালে আমার পাবনা যাওয়া খুবই প্রয়োজন ছিল। ভেবেছিলাম সময়মতো ঈশ্বরদী পৌঁছে প্রতিষ্ঠানে যাবো। কিন্তু হঠাৎ ট্রেন বন্ধের কারণে চরম বিপদে পড়েছি।
Advertisement
রাজশাহীর আরডিএ মাকের্টের সাহাবুদ্দিন সাবু নামের এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বলেন, আসছে ঈদ। ঈদকে ঘিরে আজ ঢাকা থেকে নতুন কিছু পোশাক দোকানে তোলার কথা ছিল। টাকাও কিছু অ্যাডভান্স করেছি। কিন্তু ট্রেনের কারণে যেতে পারলাম না। খুব বেকায়দায় পড়ে গেলাম।
এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, লোকোমাস্টারা যদি তাদের কর্মবিরতির বিষয়ে আগে জানাতেন তাহলে আমরা যাত্রীদের বিষয়টি আগেই জানিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু হঠাৎ করে তারা এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় শুধু যাত্রীরাই ভোগান্তিতে পড়েনি, আমরাও চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। তারপরও চেষ্টা করছি যাত্রীরা যেন তাদের টিকিটের টাকাগুলো যথাযথভাবে ফেরত পান।
ট্রেন চলাচলের বিষয়ে তিনি বলেন, রেল মন্ত্রণালয় থেকে লোকোমাস্টারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসার চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা এখন চলমান। কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত হলে এবং চালকরা ট্রেনে বসলেই ট্রেন চালুর পুনরায় ঘোষণা দেওয়া হবে। তবে আপাতত আজ ট্রেনের টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকবে বলেও জানান রেলের এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
এফএ/জেআইএম