দেশজুড়ে

সাবনূরের মেডিকেলে পড়ার খরচ চালাবে কে?

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার দক্ষিণ কামারকাঠি গ্রামের দিনমজুর বাবুল মোল্লার মেয়ে সাবনূর। এবছর জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন সাবনূর। এমন খবরে দিনমজুর বাবা বাবুল ও মা সাবিনা বেগমসহ খুশিতে আত্মহারা তার শিক্ষকরাও। তবে সাবনূরের ভর্তি ও পড়াশুনার খরচ চালিয়ে যাওয়া কষ্টসাধ্য তার পরিবারের পক্ষে।

Advertisement

এলাকাবাসীও বলছেন একই কথা। সাবনূরের পড়াশোনার খরচ চালাবে কে? তাদের দাবি, তার পড়ার খরচ চালাতে কোনো বিত্তবান ব্যক্তি যদি এগিয়ে না আসে তাহলে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে সাবনূরের।

সোমবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে সাবনূরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সাবনূরের মা বাবার চোখে আনন্দ থাকলেও গভীর দুশ্চিন্তায় ডুবে আছেন তারা। মেডিকেলের ভর্তির খরচ জোগাতে দিশেহারা বাবা বাবুল মোল্লা ও মা সাবিনা বেগম।

সাবনূরের বাবা বলেন, আমার এক ছেলে ও ২ মেয়ে। আমি দিনমজুর। তার ওপর বছর পাঁচেক ধরে অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত। আগের মতো কাজও করতে পারি না। আমার স্ত্রী একজন গৃহীণি। আমার একার আয়ে পরিবারের ভরণপোষণই অনেক কষ্টে হয়। তারওপর তিন ছেলে-মেয়ের লেখা পড়ার খরচ চালাতে গিয়ে ধার দেনায় জর্জরিত।

Advertisement

তিনি জানান, সাবনূর ছোট থেকে পড়াশোনায় ভালো ছিল। তার শিক্ষকরা তাকে নিয়ে গর্ব করতো। এসএসসি পরীক্ষায় কামারকাঠি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পায়। সেসময়ও ওকে ভালো প্রাইভেট টিউশনি দিতে পারিনি। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কথায় ও তাদের সহযোগিতায় উপজেলার শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করাই। কলেজের শিক্ষকদের আমাদের অবস্থার কথা খুলে বললে তারা মেয়েকে সহযোগিতা করেন। মোট কথা প্রাথমিক থেকে শুরু করে কলেজ পর্যন্ত শিক্ষক ও সহপাঠিরা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে।

কেঁদে কেঁদে সাবনূরের মা বলেন, এমন দিনও গেছে সংসারে অভাবের কারণে তার মেয়ে না খেয়ে কলেজ করেছে। এমনকি এখনও সেই অভাব তাদের সংসারে লেগেই আছে।

তিনি বলেন, আমি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবা আমার বিয়ে দেন। তখন আমার পড়ালেখার খুব ইচ্ছা ছিল, কিন্তু পারিনি। তাই সেই থেকে মনে মনে পণ করি আমার ছেলে মেয়ে হলে তাদের ইচ্ছানুযায়ী পড়াশুনার সুযোগ দেবো।

সংসারে অভাবের কারণে আমি মানুষের বাড়িতে মাঝে মাঝে কাজ করি। রাতভর ঘরে বসে পাটি ও হাত পাখা বুনন করি। অভাবের কারণে মেয়েকে কলেজে আসা যাওয়ার গাড়ি ভাড়াও দিতে পারিনি। মেয়ে আমার বাসা থেকে আট কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে কলেজ করতো। দুপুর হলে আবার হেঁটে বাড়িতে আসত।

Advertisement

শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজ থেকে ২১-২২ শিক্ষাবর্ষে মেয়ে গোল্ডেন এ প্লাস পায়। ওর প্রাথমিক থেকে এ পর্যন্ত রেজাল্ট দেখে কলেজের মাহমুদ স্যার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার কথা বলেন। এতে তিনি আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছেন। এখন মেয়ের ভর্তি ও পড়ার খরচ কিভাবে চালাবো তা ভেবেই পাচ্ছি না- বলেন সাবনূরের মা।

সাবনূর বলেন, আমি প্রাথমিক শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত আসতে শিক্ষক সহপাঠীদের অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা পেয়েছি। আমি মেডিকেলে চান্স পেয়ে এখন ভর্তির জন্য অনেকটা দুশ্চিন্তায় আছি। মা বাবা এ নিয়ে মন খারাপ করে আছে। যদি মেডিকেলে ভর্তি হতে পারি ডাক্তার হয়ে আমি আমার দিনমজুর বাবা ও মায়ের মুখ উজ্জ্বল করব। এ জন্য আমি আমার শুভাকাঙ্ক্ষি সকলের কাছে দোয়া ও সাহায্য চাচ্ছি।

নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোসারেফ হোসেন বলেন, আমি তাদের আমার অফিসে আসতে বলেছি। সাবনূরের মেডিকেল ভর্তিতে যা খরচ হয় তা আমরা বহন করবো।

এফএ/জেআইএম